ডিএসসিসি মশার ওষুধ সঙ্কটে

ডিএসসিসি মশার ওষুধ সঙ্কটে

ঢাকাচাহিদার তুলনায় কম মজুদ নিয়েই ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া রোগের বাহক এডিস মশার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। উড়ন্ত মশা নিয়ন্ত্রণে অ্যাডাল্টিসাইড নিতে হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) থেকে।

তবুও বছরের ৮ মাসেও ওষুধের মিশ্রণ তৈরিতে দরপত্র সম্পন্ন করতে পারেনি ডিএসসিসি।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, মশার লার্ভা নিধনের জন্য অর্থাৎ লার্ভিসাইডিংয়ের জন্য প্রতিবছর ওষুধ প্রয়োজন হয় ১০ হাজার লিটার। আর উড়ন্ত মশা নিয়ন্ত্রণে অ্যাডাল্টিসাইডিংয়ের জন্য প্রয়োজন হয় ৬-৮ লাখ লিটার ওষুধ। মূলত এগুলো সলিউশন অর্থাৎ মিশ্রণ করে নেওয়া ওষুধের হিসাব। এই মিশ্রণ তৈরিতেই ঘাটতি রয়েছে ডিএসসিসির। এর জন্য ডিএনসিসির কাছে ২০ হাজার লিটার সলিউশন ওষুধ চেয়েছিল ডিএসসিসি। এর মধ্যে ডিএসসিসি দিয়েছে ১০ হাজার লিটার।

অ্যাডাল্টিসাইডের মূল ওষুধ ম্যালাথিয়ন ৫% এর পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলে দাবি সিটি করপোরেশনের। তবে এই ম্যালাথিয়নের সঙ্গে ৯৫ শতাংশ ডিজেল এবং ২৫ থেকে ৫০ মিলিলিটার (মিলি.) সাইট্রানোলা মিশিয়ে সলিউশন তৈরি করতে হয়। মিশ্রণ তৈরির নিজস্ব প্রযুক্তি না থাকায় সলিউশন তৈরির জন্য দরপত্র আহবান করে ডিএসসিসি। ম্যালাথিয়নের মজুদ দিয়ে ৬ লাখ ৪০ হাজার লিটার সলিউশন তৈরি করা যাবে বলেও দাবি সিটি করপোরেশনের।

তবে তিন দফায়ও মিশ্রণ তৈরির দরপত্র চূড়ান্ত করতে পারেনি উত্তর সিটি। অভিযোগ আছে, বছরের আট মাস পেরিয়ে গেলেও নির্দিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানকেই কাজ পাইয়ে দিতে বারবার দরপত্রের শর্ত পরিবর্তন করা হচ্ছে।

চলতি বছরের শুরুতেই ১ জানুয়ারি প্রথম দফায় দরপত্র আহবান করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ৬ লাখ ৪০ হাজার লিটার সলিউশন তৈরির জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি ৪১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। প্রতি লিটার সলিউশন তৈরিতে ১৭২ টাকা দর দিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হয় দ্য লিমিট এগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড। তবে গতবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহের অভিযোগ ওঠায় প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। সেবার দ্বিতীয় সর্বনিম্ন করদাতার প্রতি আর আগ্রহী হয়নি সিটি করপোরেশন। দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহবান করা হয়।

মেসার্স ফরোয়ার্ড ইন্টারন্যাশনাল (বিডি) লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠান ১৫৫ টাকা দর দিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। তবে এবারও কাউকেই কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। তৃতীয় দফায় আবার দ্য লিমিট এগ্রো প্রোডাক্টস সর্বনিম্ন করদাতা হয়। তবে এবার আরও কমে ১৩৩ টাকায় বিড করে প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রতিষ্ঠানটি ছাড়াও ১৪৮ টাকা দর দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল এসিআই লিমিটেড।

এরপর আহবান করা হয় চতুর্থ দরপত্র। আর এই দরপত্রে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেতে যে পূর্ব শর্ত জুড়ে দেওয়া হয় তাতে উঠে আসে পর্দার আড়ালে থাকা নাম– মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। চতুর্থ দফার দরপত্রে অংশ নেওয়ার সুযোগের শর্ত ছিল পাঁচ কোটি টাকার কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা। অথচ প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় এর পরিমাণ ছিল মাত্র দেড় কোটি টাকা। পাঁচ কোটি টাকার কাজের অভিজ্ঞতা শুধু মার্শাল এগ্রোভেটের থাকায় অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটিকেই কাজ পাইয়ে দিতে আগের দরপত্রগুলোতে কোনো প্রতিষ্ঠানকেই কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। উপরন্তু উচ্চ দরে মার্শালকে একক দরপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ দিতে টেন্ডার প্রক্রিয়াতে এত দীর্ঘসূত্রিতা করা হয় এবং চতুর্থবারে পাঁচ কোটি টাকার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়।

দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের দরপত্রে ১৮৯ টাকা দর দিয়ে চতুর্থ অবস্থানে ছিল মার্শাল। তবুও ১৪৮ টাকা দর দেওয়া এসিআইয়ের মতো প্রতিষ্ঠানকে দরপত্র দেয়নি সিটি করপোরেশন।

এসব বিষয়ে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সুনির্দিষ্টভাবে কথা বলতে চাননি কেউ। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ ইমদাদুল হককে ফোন করেও পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদক পরিচয়ে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও তার কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।

কথা বলতে রাজি হননি ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ও উপসচিব বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস। ভাণ্ডার ও ক্রয় বিভাগের প্রধান হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

সবশেষে  সঙ্গে কথা বলেন ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু নাছের। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে অ্যাডাল্ডিসাইডিং ওষুধ নেওয়া হয়েছে বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন তিনি। তবে সেটি ঘাটতির জন্য নয় বরং বাড়তি সতর্কতার জন্য বলেও দাবি করেন তিনি।

নাছের বলেন, গত বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ১০ হাজার লিটার ওষুধ ডিএনসিসির পক্ষ থেকে ডিএসসিসির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে তা ঘাটতির জন্য নয় বরং বাড়তি সতর্কতার জন্য। চলতি মৌসুমে সেভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়নি। কেউ মারাও যায়নি। তবুও অতি মাত্রায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়লে তার জন্য সতর্কতা হিসেবে ওষুধ নেওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে দরপত্র বিষয়ে নাছের বলেন, ওষুধের দামের চেয়ে গুণগত মানের দিকে খেয়াল রাখতে হয়। তবে ৬ লাখ ৪০ হাজার লিটার অ্যাডাল্টিসাইড সলিউশন তৈরির জন্য যে পরিমাণ ম্যালাথিয়ন দরকার সেটি আমাদের মজুদে আছে। এই সলিউশন তৈরি হলে সেগুলো দিয়ে আরও ৮ মাস অ্যাডাল্ডিসাইডিং করা যাবে। এর জন্য দরপত্র আহবানের ‘টেকনিক্যাল’ অংশের কাজ শেষ হয়েছে। তবে আমরা অ্যাডাল্টিসাইডিং এর থেকে লার্ভিসাইডিং এ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। মশার লার্ভা ধ্বংস করতে পারলে উড়ন্ত মশা আর সেভাবে বাড়বে না। আগে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৮ জন করে মশক কর্মী লার্ভিসাইডিং করত। এখন তার সংখ্যা বাড়িয়ে ১০ জন করা হয়েছে। এছাড়াও আগের চেয়ে  বেশি পরিমাণে লার্ভিসাইড ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

অন্যদিকে দরপত্রের বিষয়ে মার্শাল এগ্রোভেট লিমিটেডের ফেসবুক পেইজে দেওয়া নম্বর থেকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তথ্যমতে, প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক নাসির উদ্দিন আহমেদ মূলত মার্শাল- এর দেখভাল করেন।

নাসির উদ্দিন  বলেন, ই-টেন্ডারের মাধ্যমে দরপত্র জমা দেওয়া হচ্ছে। কাজেই বাড়তি কোনো সুযোগের ব্যাপার নেই। আমি যে দর দিয়েছি তাতে আমি এমনিতেও কাজ পাব বলে মনে হয় না। ওষুধটির গুণগত মান বৃদ্ধিতে এর চেয়ে কমে আমি দর দিতে পারব না। মাননীয় মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে আমার দুই দফা কথা হয়েছে। তিনি চান আমি কাজটা প্রতি লিটার ১৫৫ টাকার মধ্যে করি। কিন্তু আমি সেটা পারব না। যে কারণেই আমি দুই দুই বার ১৮৯ টাকা দর দিয়েছি। তবে অন্যদের কেন কাজ দেওয়া হলো সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

 

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

রেড ক্রিসেন্টের নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক উবায়দুল কবীর চৌধুরী

খিলগাঁও এলাকায় রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান