দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ ছিল’

দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ ছিল’

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অভিযানের সময় কাউকে দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ ছিল সেনাসদস্যদের প্রতি। এ ক্ষেত্রে শিশু থেকে বৃদ্ধ—কেউ যেন বাদ না যায়, সে কথাও বলা হয়েছিল তাঁদের। এমনকি কোনো শব্দ পেলে সেদিকেও গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলায় মিয়ানমারের দুই সেনাসদস্য নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশেই রাখাইন রাজ্যের বেশ কিছু রোহিঙ্গা গ্রামে তাঁরা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার মার্কিন গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিও উইন তুন ও জো নাইং তুন নামের দুই সেনাসদস্য গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। স্বীকারোক্তির ভিডিওচিত্রে মিও উইন তুন বলেছেন, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রাখাইনের একটি রোহিঙ্গা গ্রামে তিনি অভিযানে গিয়েছিলেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ ছিল, ‘যা দেখবে, যা শুনবে—সবকিছুতেই গুলি কর।’ মিও উইন তুন জানান, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এই নির্দেশ তিনি পালন করেছিলেন। ওই সময় ৩০ জন রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যায় তিনি অংশ নিয়েছিলেন এবং হত্যার পর সামরিক ঘাঁটির কাছাকাছি এক গণকবরে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
ঠিক একই সময়ে পাশের আরেকটি উপশহরে জো নাইং তুন নামের আরেক সেনাসদস্য একই কাজ করছিলেন। তিনিও পেয়েছিলেন একই ধরনের নির্দেশনা। জো নাইং তুন বলেন, তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশনা ছিল: ‘শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক-যাকেই দেখবে, মেরে ফেলবে।’ জো নাইং তুন আদালতকে জানিয়েছেন, ‘আমরা সেদিন প্রায় ২০টি গ্রাম ছারখার করেছিলাম। হত্যার পর লাশগুলো গণকবরে পুঁতে ফেলা হয়।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা সম্পর্কে এই প্রথম মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে স্বীকারোক্তি দিল। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের মতে, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানো হয়। তবে মিয়ানমারের সরকার আনুষ্ঠানিক সব সময়ই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এবার মিয়ানমারের দুই সেনাসদস্য গণহত্যার সপক্ষে স্বীকারোক্তি দেওয়ায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি জোরদার হলো।

ওই দুই সেনাসদস্য মিয়ানমার থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। গতকাল সোমবার তাঁদের দ্য হেগে নেওয়া হয়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এটি ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বীকারোক্তি নয়। বরং আক্রমণকারীরা এই স্বীকারোক্তি দিয়েছে। সুতরাং মামলায় অপরাধীদের বিপক্ষে এই স্বীকারোক্তি ব্যবহার করা যাবে।ফরটিফাই রাইটস নামক একটি মানবাধিকার সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাথু স্মিথ বলেন, ‘ন্যায়বিচার পাওয়ার সংগ্রামের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও মিয়ানমারের জনগণের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এরাই মিয়ানমারের প্রথম অপরাধী ব্যক্তি যাদের আইসিসিতে উপস্থিত করা হলো এবং আদালতের হেফাজতে থাকা অভ্যন্তরীণ সাক্ষী হিসেবে এরাই প্রথম।’

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষ দলে দলে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। সব মিলিয়ে এখন প্রায় ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের অভিযোগ, রাষ্ট্রীয় মদদে নির্যাতনের শিকার হয়েই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে তারা। অবশ্য মিয়ানমার সরকার এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।

 

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

সারা দেশে ‘হিট স্ট্রোকে’ ৮ জনের মৃত্যু

কারাগারেও মাদকের আখড়া