ঢাকা: সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে সমন্বয়হীনতা ও উদাসীনতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রাণালয়ে দক্ষ ও উদ্যমী কর্মকর্তা নিয়ে আসারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বছরের পর বছর একই স্থানে অনেকে বসে আছেন, তাদের আউটপুট মূল্যায়ন করুন। গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায় একটি সফল উদাহরণ আপনারা আমাকে দেখান। আপনারা করোনার ওপর দোষ চাপিয়ে যাচ্ছেন, আসলে সবকিছুর মূলে হলো সদিচ্ছা।
মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) ডিটিসিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী। নিজের সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় সভায় সংযুক্ত হন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি প্রথমেই সমন্বয়ের কথা বলতে চাই, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরী এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় সড়ক উন্নয়ন ও ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি প্রকল্প যেন আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আর ডিটিসিএ’র সাথে সমন্বয় করে করা হয়। কোন একটি প্রকল্প যদি আরএসটিপি’র সাথে সমন্বিত না হয় তাহলে নগরবাসীর উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে।
ঢাকা নগরীর যানজট ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ডিটিসিএ কাজ করছে রুট র্যাশনালাইজেশনের জন্য। বাসগুলোকে কোম্পানিতে রূপান্তরের মাধ্যমে পরিচালনা করার প্রথম আলোচনা শুরু হয় আনিসুল হকের সময়। এরপর দায়িত্ব দেওয়া হয় সাঈদ খোকনকে। কিন্তু কতদূর তা এগুলো, নগরবাসী তো এখনো কিছু দেখতে পেল না?
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী আরও বলেন, কয়টি সভা হলো সেটা বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে উদ্যোগকটা দৃশ্যমান করা। বলতে গেলে এ নগরীতে ফুটপাত নেই! পথচারীর হাঁটার জন্য যে ফুটপাত সেটা বেদখলে। ঢাকা সিটি কলেজ থেকে সাতমসজিদ রোড ধানমন্ডি ৩৭ নম্বর পর্যন্ত পথচারী বান্ধব একটি ফুটপাত নির্মাণের উদ্যোগ এখনো সমীক্ষা কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ। কবে শেষ হবে সমীক্ষা? কখন প্রকল্প নেওয়া হবে আর কখন কাজ হবে জানি না!
তিনি বলেন, ডিটিসিএ শুধু সমীক্ষা আর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মধ্যে ঘুরপাক খায়, যে কাজই দেওয়া হয় শুধু সমীক্ষা আর সমীক্ষা। কাজ হতে দেখি না। র্যাপিড পাস আর ক্লিয়ারিং হাউসের কাজের দ্বিতীয় পর্যায়ও একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। র্যাপিড পাস উদ্বোধন করেছিলাম কিন্তু কার্যকরিতা দেখছি না। তখন তো বলা হয়েছিল রুটে সবাই এই কার্ড ব্যবহার করবে। তাহলে এখন করছে না কেন? নিশ্চয়ই আপনাদের পরিকল্পনা জনবান্ধব যাত্রীবান্ধব ছিল না, যতটা প্রত্যাশা ছিল। বোর্ড সভায় নারায়ণগঞ্জ গাজীপুরের জন্য পরিবহন মাস্টারপ্ল্যান করার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেটাও এখন পর্যন্ত আটকে আছে। চট্টগ্রামের পরিবহন মাস্টারপ্ল্যানে বলার মতো কোনো অগ্রগতি নেই। একটি কাজ শুরু করে শেষ করতে না পারলে এর সফলতা কোথায়?
চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালুর বিষয়ে অর্থায়নকারী সংস্থা নির্বাচন করে এ কাজটি দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, ঢাকায় এই মুহূর্তে চলছে মেট্রোরেলের কাজ, শহরের প্রধান সড়কের একাংশ ছোট হয়ে এসেছে। তবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ দক্ষতার সাথে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট করছে। পাশাপাশি চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। এদিকে গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত চলছে বিআরটিএ’র কাজ, এখন যদি এয়ারপোর্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত অংশের কাজ হয় তাহলে এ শহর অচল হয়ে পড়বে। শহরের প্রধান আর্টারি সংকুচিত হলে জনভোগান্তি বাড়বে। নির্মাণকালে স্থবির হয়ে পড়বে পুরো করিডোর। এসব বিষয়ে আপনারা টেবিলে বসে ভাবলে হবে না বাস্তবতাও অনুধাবন করতে হবে, যোগ করেন ওবায়দুল কাদের।
মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য দপ্তর করোনাকালে যেখানে ফিল্ড লেভেলে ফিজিক্যাল ওয়ার্ক করছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে— আপনারা সেখানে করোনার ওপর দোষ চাপিয়ে যাচ্ছেন। আসলে সবকিছুর মূলে সদিচ্ছা। আমি সচিব মহোদয় এবং ইডি সাহেবকে বলব, দক্ষ উদ্যোমী কর্মকর্তা নিয়ে আসুন। বছরের পর বছর একই স্থানে অনেকে বসে আছেন। তাদের আউটপুট মূল্যায়ন করুন। গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায় একটি সফল উদাহরণ আপনারা আমাকে দেখান। আইন পাস করে ডিটিসি’র আইনগত ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সেটি কাজে লাগানো হচ্ছে কী না আপনারাই ভাল জানেন? আজ হতে গণপরিবহন করোনাকালের জন্য সমন্বয় করা ভাড়ার পরিবর্তে আগের ভাড়ায় ফিরছে জনস্বার্থে এবং যাত্রীদের সাথে আমি সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ সকল স্টেকহোল্ডারের সহযোগিতা কামনা করছি।