কর্মসংস্থান পেলে দেশেই থাকতেন সম্ভাব্য অভিবাসীরা

কর্মসংস্থান পেলে দেশেই থাকতেন সম্ভাব্য অভিবাসীরা

বাংলাদেশে জীবিকা নির্বাহের ভালো সুযোগ পেলে ৯৯ শতাংশ সম্ভাব্য অভিবাসী দেশেই থাকতেন। যে পাঁচটি প্রধান কারণে বাংলাদেশের মানুষ বিদেশে অভিবাসন করেন তা হলো— জীবিকার অভাব, অপর্যাপ্ত উপার্জন, অর্থনৈতিক সমস্যা, সামাজিক সেবার অভাব এবং সীমিত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) নতুন এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ সরকারের সাথে সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ: সার্ভে ওন ড্রাইভার্স অব মাইগ্রেশন অ্যান্ড মাইগ্রেন্টস প্রোফাইল’ নামে প্রতিবেদনটি বুধবার (১৯ আগস্ট) অনলাইন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকাশ করে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা।

২০১৯ সালের নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে ১১ হাজার ৪১৫ জন সম্ভাব্য অভিবাসীর সাক্ষাৎকার নিযে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। ওই সম্ভাব্য অভিবাসীরা চলতি বছরের জুনের মধ্যে অভিবাসনে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। অভিবাসনের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে নিবন্ধন করেছেন কিনা তার ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য অভিবাসীদের নিয়মিত এবং অনিয়মিত— এই দুই খাতে ভাগ করা হয়।

বাংলাদেশে এই প্রথম ৬৪ জেলার ওপর এ ধরনের গবেষণা পরিচালিত হলো। এর পূর্বে বাংলাদেশে অভিবাসনের চালিকাশক্তির ওপর পরিচালিত গবেষণাগুলো ছিলো পরিসর এবং মাত্রার দিক দিয়ে নির্দিষ্ট ও সীমিত।

এই প্রতিবেদন কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী চিত্র তুলে ধরে। তবে, অভিবাসনের চালিকাশক্তি এবং সম্ভাব্য অভিবাসীদেও প্রোফাইল নিয়ে বিস্তারিত এই বিশ্লেষণ একটি বেসলাইন হিসেবে কাজ করবে। এটি কোভিড-১৯ মহামারিকালীন অভিবাসনকে বুঝতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

এই গবেষণার অধিকাংশ উত্তরদাতা পুরুষ (৮৯ শতাংশ) এবং অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ২৭। ৬৪ শতাংশের বয়স বিশের কোটায়। অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেকই বিবাহিত। অধিকাংশ উত্তরদাতা কর্মক্ষম এবং শিক্ষার কিছু স্তর পার করেছেন।

উত্তরদাতাদের শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরের কথা বিবেচনা করলে, ৪১ শতাংশ মাধ্যমিক স্তর সম্পন্ন করেছেন, ২৭ শতাংশ উচ্চবিদ্যালয় স্তর এবং ২৬ শতাংশ প্রাথমিক স্তর সম্পন্ন করেছেন। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৩ শতাংশ শিক্ষার কোন স্তরেই প্রবেশ করেননি। নিম্নমানের কর্মসংস্থান বাংলাদেশে এখনো একটি চ্যালেঞ্জ। ৪০ শতাংশ সম্ভাব্য অভিবাসী অভিবাসনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে কর্মহীন ছিলেন এবং ৯০ শতাংশ জানান তাদের ব্যক্তিগত কোন উপার্জন নেই বা থাকলেও তা অপর্যাপ্ত।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, নিয়মিত এবং অনিয়মিত সম্ভাব্য অভিবাসীদের ধরন প্রায় একই রকম। সাধারণত ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে অনিয়মিত অভিবাসীরা অল্পবয়সী, স্বল্প শিক্ষিত এবং মূলত বেকার হয়ে থাকেন। কিন্তু, এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নিয়মিত এবং অনিয়মিত সম্ভাব্য অভিবাসীদের বয়স এবং শিক্ষার স্তর একই রকম।

অভিবাসীরা বিশ্বের দক্ষিণের দেশগুলো ছেড়ে উত্তরের দেশে অভিবাসন করে- এই বহুল প্রচলিত ধারণাকেও তুলে ধরে প্রতিবেদনটি। উপাত্ত থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই চিত্র ভিন্ন। বরং, বাংলাদেশে অভিবাসন মূলত দক্ষিণ থেকে দক্ষিণে ঘটে। অধিকাংশ অভিবাসীরা মধ্যপ্রাচ্য কিংবা এশিয়ার অন্যান্য দেশে অভিবাসন করে থাকেন। মাত্র ১.৪ শতাংশ ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। অধিকাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা মধ্যপ্রাচ্যে গমনে ইচ্ছুক। গন্তব্য দেশ হিসেবে সৌদি আরব সবচেয়ে জনপ্রিয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৮৫ শতাংশ সম্ভাব্য অভিবাসী তাদের অভিবাসনের জন্য অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত এবং অনিয়মিত সম্ভাব্য অভিবাসীরা প্রায় একই পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছেন। নিয়মিত সম্ভাব্য অভিবাসীরা গড়ে ২৪৩,৬৫১ টাকা (২,৮৭১ মার্কিন ডলার) দিয়েছেন, যেখানে অনিয়মিত সম্ভাব্য অভিবাসীরা গড়ে দিয়েছেন ২২৯,৪৮৮ টাকা (২,৭০৫ মার্কিন ডলার)। অভিবাসনের জন্য অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া সর্বোচ্চ অর্থের পরিমাণ ছিলো ১৬ লাখ টাকা (১৮৮৫৭ মার্কিন ডলার)।

আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পৃথিবীর ৬ষ্ঠ বৃহত্তম উৎস দেশ। ২০১৯ পর্যন্ত ৭৮ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে অবস্থান করেছেন। প্রতিবছর এ দেশে ২২ লাখেরও বেশি তরুণ জনগোষ্ঠী শ্রমশক্তিতে যুক্ত হয়। কিন্তু স্থানীয় শ্রমবাজার এই সকল কর্মসংস্থানপ্রার্থীদের জায়গা দিতে সক্ষম নয়।

সম্ভাব্য অভিবাসীদের জিজ্ঞেস করা হয় কী কী পরিবর্তন করা হলে তারা দেশে থাকবেন। প্রায় সবাই (৯৯ শতাংশ) শতাংশ উত্তর দেন, উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলে তারা বাংলাদেশেই থাকবেন। উত্তরদাতাদের মধ্যে একজন বলেন, দেশে আমি যা উপার্জন করি তা দিয়ে ভালোমত জীবন চালাতে পারি না। বিদেশে গিয়ে অনেকেই ভালো করছে, তাই আমিও বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

গবেষণায় অংশ নেয়া উত্তরদাতাদের ৩৮ শতাংশ উল্লেখ করেন, আইনের উন্নতি হলে তারা দেশে থাকবেন। ৩৬ শতাংশ উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ২৯ শতাংশ আরো সুলভ স্বাস্থ্যসেবার কথা উল্লেখ করেছেন দেশে থাকার জন্য। প্রায় অর্ধেক অংশগ্রহণকারী জানান, তারা দেশে থাকবেন যদি তাদের আরো অধিক পড়াশোনার ক্ষেত্রে সহায়তা করা হয়।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, আইওএম বাংলাদেশের মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বাকেরগঞ্জে ভোট জালিয়াতির পরিকল্পনাকারী আবদুল হক পুলিশ হেফাজতে

হামাসের দাবি মানবে না ইসরায়েল: নেতানিয়াহু