যশোরে তিন কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের (বালক) পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক (সহকারী পরিচালক) আবদুল্লাহ আল মাসুদসহ পাঁচজনের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া অপর চারজন হলেন সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, সাইকোসোশ্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান, ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর শাহানূর আলম এবং কারিগরি প্রশিক্ষক ওমর ফারুক।
পুলিশ সুপার বলেন, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোর নিহত হওয়ার ঘটনায় কেন্দ্রের ১০ জনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে গতকাল দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর মধ্যে পাঁচ কর্মকর্তার জড়িত থাকার তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যে কারণে তাঁদের কিশোর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় নিহত কিশোর পারভেজ হাসানের বাবা খুলনার দৌলতপুর উপজেলার মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রোকা মিয়া যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। তবে এজাহারে আসামিদের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
এদিকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ আল মাসুদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. নূরুল বাসির বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত তত্ত্বাবধায়ক আবদুল্লাহ আল মাসুদকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত অন্যদের বিষয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে নূরুল বাসিরের নেতৃত্বে সমাজসেবা অধিদপ্তরের একটি দল সরেজমিনে তদন্ত শুরু করেছে। এ ছাড়া যশোর জেলা প্রশাসনের তিন সদস্যবিশিষ্ট আরও একটি কমিটি তদন্তের জন্য মাঠে নেমেছে। জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মুহাম্মদ আবুল লাইচ। অপর দুজন হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রব্বানী ও সমাজসেবা অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক অসিত সাহা।
তদন্ত কমিটির প্রধান এডিএম আবুল লাইচ বলেন, ‘আমরা সরেজমিনে তদন্তকাজ শুরু করেছি। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে।’
নিহত কিশোরেরা হলো বগুড়ার শিবগঞ্জের তালিবপুর পূর্বপাড়ার নান্নু প্রামাণিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭), একই জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে রাসেল ওরফে সুজন (১৭) এবং খুলনার দৌলতপুর উপজেলার মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান (১৭)। এ ছাড়া যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে আহত আরও ১৫ কিশোর।
গত বৃহস্পতিবার ওই কিশোরদের ডেকে নিয়ে বেদম পেটানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে।