বঙ্গবন্ধুর খুনি,ফাঁসির আগে জবানবন্দিতে যা বলেছে

বঙ্গবন্ধুর খুনি,ফাঁসির আগে জবানবন্দিতে যা বলেছে

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে মাজেদ বলেন, ‘১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে জিয়াউর রহমান সাহেব ১০টা ১১টার দিকে ক্যান্টনমেন্ট অডিটোরিয়ামে সব অফিসার এবং জওয়ানদের এড্রেস করেন। ওখানে উনি মোটিভেট করেন যে, যে ঘটনা গত রাতে ঘটে গেছে তোমরা সে সব নিয়ে কোনো রকম মাথা ঘামাবে না। তোমরা সব চেইন অব কমান্ডে ফিরে যাও। সবাই কাজকর্ম কর। আর এটা জাতির ব্যাপার, এটা আমাদের ব্যাপার না।’বঙ্গবন্ধুর খুনি বলেন, ‘এইভাবে ক্যান্টনমেন্ট অডিটোরিয়ামে জিয়াউর রহমান মোটিভেট লেকচার দিয়েছেন। উনি বঙ্গভবনে ঐ খুনিদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতেন, আর খুনিরাও তার সঙ্গে ওখান থেকে যোগাযোগ করত ডাইরেক্ট, এবং আর্মির চেইন অব কমান্ড বলতে কিছুই ছিলো না। ওরাই চালাতো প্র্যাকটিক্যালি।’জিয়াউর রহমানের সঙ্গে দেখা করার কথা বলেন আবদুল মাজেদ। বলেন, ‘মাঝখানে একবার আমি ইন্টারভিউ দিতে যাই জিয়াউর রহমান সাহেবের সাথে সেনা হেডকোয়ার্টারে। সেখানে উনাকে বললাম যে, আমাকে আমার একটা সার্ভিসের ব্যাপারে, বাইরের সিভিল সার্ভিসের ব্যাপারে উনাকে অনুরোধ করছিলাম। সেই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করি। তখন উনার সাথে যা আলোচনা হয়েছে। তখন দেখা গেছে যে, তিনি প্র্যাকটিক্যালি এই ক্যু এর পক্ষপাত সুলভ কথাবার্তা বলছেন।’জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের (ক্যু) সমর্থক উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুর খুনি আরো বলেন, ‘এইটা করেছেন কিন্তু উনার কথাবার্তার বোঝা যাচ্ছে, দেখা গেছে যে, উনি (জিয়াউর রহমান) ক্যু এর সমর্থক। ওদের সাথে উনা সব যোগাযোগ। পরবর্তীতে যখন বিদেশে যাওয়ার প্রশ্ন আসলো, তখন তিনি… বঙ্গভবনে তো আমরা ডাইরেক্ট উনার সাথে কথাবার্তা বলতে পারি না। তখন দেখেছি, মিলিটারি সেক্রেটারি, প্রেসিডেন্টের সাথে উনারা কথাবার্তা বলছেন।’সে সময় সেনা অফিসারদের বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে আবদুল মাজেদ বলেন, ‘তো এই সমস্ত আমরা দূরে থেকে দেখেছি। পরে বললো যে এখানে বঙ্গভবনে যে সমস্ত অফিসাররা আছে, তারা সবাই ইয়েতে যাবে, বাহিরে বিদেশে। বিদেশে তাদের উনি কাগজপত্র তৈরি করার জন্য মিলিটারি সেক্রেটারি ছিলেন তখন বিগ্রেডিয়ার মশহুর হক, উনাকে নির্দেশ দিয়েছেন আরকি। যেহেতু আমরা বঙ্গভবনে ডিউটিরত ছিলাম, স্কট ডিউটি, সেখান থেকে আমাদেরকেও ব্যাংককে পাঠিয়ে দিয়েছেন।’‘ব্যাংককে যাওয়ার পরে সেখান থেকে আমাদের ফেরত পাঠায়ইনি, বরং সেখান থেকে শুনলাম যে, তখন তো জিয়াউর রহমান সাহেব পুরা ক্ষমতায়। তিনি তাদেরকে লিবিয়াতে আশ্রয়, লিবিয়ায় আশ্রয়ের বন্দোবস্ত করেছেন। পরে আমরা শুনলাম জেলখানাতেও তারা চারজন জাতীয় নেতাকে মেরে গেছে।’‘এই রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ঐখানে ঘোষণা করতেছে, বলতেছে, তখন তার সাথে দুইটা সিপাইও ছিলো। সিপাইরা তো ঐখানে যাওয়ার কথা নয়। সিপাই তারপরে রিসালদার। তারপরে লিবিয়াতে আমরা গিয়েছি। লিবিয়ায় যাওয়ার পরেই বলে যে, ফরেইন সার্ভিস হবে সবার।‘জিয়াউর রহমান সাহেব ফরেন সার্ভিস দেবেন সবাইকে প্রাইজ হিসেবে, এবং একটা করে প্রমোশন দিয়ে দেবেন। কিছু দিন পরে, কয় মাস হবে তা আমার মনে নাই এ্যক্সাকটিলি। জিয়াউর রহমান জেনারেল নুরুল ইসলামকে পাঠায়। জেনারেল নুরুল ইসলাম যায় সেখানে। ওদের সাথে মিটিং করে। কার কার কোথায় ফরেন পোস্টিং হবে সেই চয়েজ নিতেই উনি গেছেন ওখানে। জিয়াউর রহমানের পক্ষ থেকে।’আবদুল মাজেদ আরো বলেন, ‘জিয়াউর রহমান, উনার ডাইরেক্ট মদদ ছিল। উনি তো ওদের টোটাল পেট্রোনাইজড করেছেন। একটা করে প্রমোশন জাম্পড এবং একটা করে ফরেন প্রাইজ পোস্টিংগুলি। অথচ এসব অফিসাররা ফরেন সার্ভিসের জন্য কোয়ালিফাইড নয়। এটাই সত্যি কথা। ইভেন তারা গ্রাজুয়েটও না। তাদেরকে ফরেন সার্ভিস হিসেবে প্রাইজ পোস্টিং দিচ্ছে।’‘এটাতেই তো বোঝা যাচ্ছে, জিয়াউর রহমান একদম ওদের সাথে ছিলেন। আর লেয়ার থেকেই উনার সাথে কথা, এগুলো উনার কথার ধরণে বুঝা যায়। তারা ক্যু অফিসারের পরিবার, বঙ্গভবন থেকে পাঠিয়ে দিয়েছে তাদের। তাদের জন্য পাসপোর্ট…’অবাক হয়ে এই খুনি বলেন, ‘মাইগড পরিবার শুধু? বিয়ে করে নাই তারা চলে গেছে। অন্যান্য মহিলা তাদের ফিয়ান্সি, গার্লফ্রেন্ড এ ধরণের সবাইকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এগুলো আর কি কথা বলবো… মেজর শাহরিয়ার বিয়ে করে নাই এক ভদ্রলোকের স্ত্রীকে নিয়ে চলে গেছে। সেইসব কাগজপত্র তাদের বানিয়ে দিয়েছে।‘আবার ঐ আরেকটা… হদার ওয়াইফ অবশ্য পরে গেছে। নারায়ণগঞ্জের এবং ইয়ে তাকেও ঐখানে লিবিয়া থাকা অবস্থায় এক সপ্তাহের মধ্যে, তার ওইয়াফ মানে জয়েন করে নাই, বিয়ে হয় নাই, নারায়ণগঞ্জের মেয়ে হুদার স্ত্রী বলে গেছে। তাকে কাগজ করে পাঠিয়ে দিয়েছে ঐ খানে। এই সমস্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কারণে বোঝা যাচ্ছে যে, এগুলো সম্পন্ন এখান থেকে হচ্ছে।’‘উনি (জিয়াউর রহমান) ছাড়া তো আর এগুলো হতে পারে না তখন। উনি যেহেতু আর্মি চিফ, এরা আর্মি অফিসার। বিয়ে ছাড়া এ সমস্ত মহিলারা একম্পানি করেছে। যাদের স্ত্রী ছিলো, বাচ্ছা ছিলো তাদের ব্যাপর ভিন্ন।’‘আমরা লক্ষ্য করেছি উনার (জিয়াউর রহমান) স্ত্রী ক্যান্টনমেন্টে ছিলো। ৭১ সালে উনার স্ত্রী উনি তখন মনে হয় চিটাগাং ছিলেন। উনার স্ত্রীর সঙ্গে আমাদের দেখা হয়েছে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ৭২ সালে।’জিয়াউর রহমানের সেনাদের মোটিভেশন মূলক বক্তব্য দেওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘উনার তো ক্যু এর সর্মথন আছে। তা না হলে উনি কেন আগ বাড়িয়ে এসব মোটিভেশন করবে কেন উনাদেরকে? এটা তো পরিস্কার কথা, উনার তো ক্যু এর সর্মথন আছে।’১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন মাজেদ। তখন তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন।৪৫ বছর দেশের বাইরে পলাতক থাকার পর গত ৬ এপ্রিল রাতে রাজধানীর মিরপুর থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয় মাজেদ। এরপর ১২ এপ্রিল কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

বাকেরগঞ্জে বিদ্যুৎ স্পর্শ হয়ে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু

মাদারীপুরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত অংশীজনের (Stakeholders) অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা