তিন দিনের সন্তানকে গলাটিপে খুন করেন মা!

তিন দিনের সন্তানকে গলাটিপে খুন করেন মা!
নিজস্ব প্রতিবেদক : চরম দারিদ্র। বড় ছেলেকে পেটভরা খাবারটুকু তুলে দিতে পারেন না। আর সেই হতাশা থেকেই তিন দিনের কন্যা সন্তানকে গলাটিপে খুন করলেন মা! ঘটনার প্রায় ৬ মাস পরে এই শিশু খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত মাকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে নিথর হয়ে যাওয়া তিন দিনের শিশুকন্যাকে নিয়ে বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে হাজির হন ভিআইপি নগর জাগরণী কলোনির বাসিন্দা সোনিয়া সেন। তিনি দাবি করেন, শিশুটিকে দুধ খাওয়ানোর পরেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তারপরেই তিনি হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চিকিৎসকেরা ওই শিশুকন্যাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু গোটা ঘটনায় তাদের সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা খবর দেন আনন্দপুর থানায়।

পরের দিন পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা নথিভুক্ত করে এবং শিশুকন্যার দেহটি পাঠানো হয় ময়নাতদন্তে। তবে তিন দিনের শিশুর দেহের ময়নাতদন্ত করে প্রথমে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছিলেন না অটোপসি সার্জেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অমীমাংসিত ছিল।

এক তদন্তকারীর কথায়, ‘শিশুটির দেহে নখের দাগও ছিল। অনেক রকম সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে শুরু করি আমরা।’ শেষ পর্যন্ত একাধিকবার ঘটনাস্থল, অর্থাৎ শিশুটির বাড়ি, আঘাতের ধরন, বিভিন্ন রকম পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ দেখে গত ২৪ জুলাই চিকিৎসকেরা ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্টে বলেন, শিশুটিকে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।

খুন প্রমাণিত হওয়ার পর এবার আততায়ী ধরার পালা। সোনিয়ার কাছ থেকে বারবার ঘটনার বিবরণ শোনেন তদন্তকারীরা। দেখা যায়, শিশুটি ওই দিন সন্ধ্যায় তার মা আর দেড় বছরের দাদার সঙ্গে ছিল। অন্য কেউ ছিল না বাড়িতে। অন্য কেউ আসারও কোনো সম্ভাবনা দেখেননি তদন্তকারীরা। সেখান থেকে প্রথমে সন্দেহ করা হয় শিশুটির মা সোনিয়াকে। কিন্তু মা কেন খুন করবে সদ্যোজাতকে? সেই প্রশ্নের উত্তর মিলছিল না। এক এক সময়ে তদন্তকারীদের ধারণা হয়, হয়তো দেড় বছরের দাদাই খেলতে খেলতে কোনও ভাবে বোনের শ্বাসরোধ করেছে।

অন্যদিকে, সোনিয়ার কথায় একের পর এক অসঙ্গতি খুঁজে পান তদন্তকারীরা। সোনিয়া দাবি করেছিলেন, শিশুকে দুধ খাওয়ানোর পরেই সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তখনই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি। অথচ ময়নাতদন্তে দেখা যায়, শিশুর পেটে খাবারের যে অবশিষ্টাংশ রয়েছে, তা মৃত্যুর অনেক আগের। এ সমস্ত অসঙ্গতির উল্লেখ করে জেরা করতে করতে শেষে রোববার রাতে ভেঙে পড়েন সোনিয়া।

তদন্তে জানা গেছে, সোনিয়ার স্বামী প্রভাস বারুই কলকাতা লেদার কমপ্লেক্সে চামড়ার ব্যাগ তৈরি করেন। প্রথম সন্তানের জন্ম হওয়ার পর থেকেই অন্য এক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় প্রভাসের।

পুলিশ জানায়, স্ত্রী ও সন্তানের কোনো খেয়ালই রাখতেন না প্রভাস। প্রচণ্ড অর্থকষ্টে পড়়েন সোনিয়া। জেরায় তদন্তকারীদের সোনিয়া জানিয়েছেন, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে কোনোমতে দেড় বছরের ছেলের খাবার জোগাড় করতেন তিনি। কিন্তু সেই কাজও বন্ধ হয়ে যায়। তার মধ্যেই জন্ম হয় কন্যাসন্তানের। ওই শিশুর ভরণপোষণ কী করে হবে, সে ব্যাপারে হতাশা তৈরি হয় তার। সেই হতাশা থেকেই গলাটিপে খুন করেন শিশুকন্যাকে। পুলিশ সোনিয়ার এই বয়ান খতিয়ে দেখছে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দেড় বছর ধরে অনুপস্থিত নীলফামারীর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের দুই চিকিৎসক

ঋণের প্রলোভনে ঢাকায় যাওয়ার পথে ভূঞাপুর থানায় গোপালপুরের ৬ জন আটক