ঢাকা: দেশে চীনা করোনা টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ (ট্রায়াল) কবে শুরু হবে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। কী কারণে এই টিকা দেশে আসছে না, সে বিষয়ে কোনো কথাও বলতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা।
চীনের সিনোভ্যাকের তৈরি করোনা টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বাংলাদেশে হওয়ার কথা। এ বিষয়ে সব ধরনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে রেখেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)। কিন্তু কী এক অজানা কারণে টিকার ট্রায়াল শুরু হচ্ছে না।
চীনা করোনা টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সরকাররে এই তিন প্রতিষ্ঠান বলছে, আইসিডিডিআর,বি ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে এ বিষয়ে তথ্য নেই।
কিন্তু আইসিসিডিআর,বির দায়িত্বশীল কর্মকর্তরাও এ বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
গত ২৭ আগস্ট বাংলাদেশ সরকার চীনের কোম্পানি সিনোভ্যাকের করোনা টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমতি দেয়। আইসিডিডিআর,বি এই টিকা প্রয়োগ করবে। ট্রায়ালের প্রধান গবেষক ও আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. কে জামান জানিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে চীনের ভ্যাকসিন ট্রায়ালের জন্যে দেশে আসবে।
কিন্তু সেপ্টেম্বর মাস শেষ হতে আর মাত্র তিন দিন বাকি। এখনও কোনো খোঁজ নেই চীনের সিনোভ্যাকের তৈরি করোনা ভ্যাকসিনের।
আইসিসিডিআর,বির দায়িত্বশীল কর্মকতাদের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করা হলেও কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। কবে নাগাদ ভ্যাকসিন দেশে আসবে, কেন ভ্যাকসিন আসছে না, এর সঠিক কারণও ব্যাখ্যা করেননি।
আইসিসিডিআর,বির তথ্য মতে, রাজধানীর সাতটি হাসপাতালে ৪ হাজার ২০০ স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর চীনা টিকার পরীক্ষা হওয়ার কথা। এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এরইমধ্যে প্রায় ২৫০ জন মাঠ গবেষক নিয়োগ দিয়েছেন তারা। তাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইউনিট-২ এবং বার্ন ইউনিট-১, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল এবং ঢাকা মহানগর হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর এই টিকার ট্রায়ালের কথা জানিয়েছিল আইসিডিডিআর,বি।
নির্ধারিত সাতটি হাসপাতালের মধ্যে এরইমধ্যে দু’টিতে করোনার চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বেশ কয়েকবার সাংবাদিকদের বলেছেন, চীনের ভ্যাকসিন দেশে ট্রায়েলের ব্যাপারে আইসিডিডিআর,বি ভালো বলতে পারবে। আমরাও অপেক্ষায় আছি।
তিনি বলেছেন, বর্তমানে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে অনেক দেশই কাজ করছে। এদের মধ্যে ৯টি কোম্পানি তাদের পরীক্ষার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই ৯টি কোম্পানির অন্তত ৫টির সঙ্গে সরকারের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। এই ভ্যাকসিনগুলো থেকে সঠিক ভ্যাকসিন, সঠিক সময়ে পেতে চাই আমরা।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, আইসিডিডিআর,বি এই পরীক্ষা করবে। ট্রায়ালের প্রধান গবেষক ও আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. কে জামান সাহেবই ভালো বলতে পারবেন।
পরে আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. কে জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে আইসিডিডিআর,বির কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে বলেছিলেন, ট্রায়ালের ভ্যাকসিন এখনও দেশে পৌঁছেনি। ভ্যাকসিন এলে জানানো হবে।
জানা যায়, আইসিডিডিআর,বির সঙ্গে সিনোভ্যাকের চুক্তিতে বলা আছে, পরীক্ষায় নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হলে সিনোভ্যাক ১ লাখ ১০ হাজার টিকা বাংলাদেশকে বিনামূল্যে দেবে। এ ছাড়া টিকা তৈরির প্রযুক্তিও বাংলাদেশকে দেওয়া হবে। সিনোভ্যাকের এই টিকার নাম ‘করোনাভ্যাক’। ইতিমধ্যে ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়ায় করোনাভ্যাকের পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চীন, রাশিয়া, ভারত ছাড়া অন্য দেশ থেকে টিকা আনার সম্ভাব্য বিকল্প পথ খুঁজে দেখছে। কোভ্যাক্সের (কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্লোবাল অ্যাকসেস) মাধ্যমে টিকা পাওয়ার প্রক্রিয়ায়ও বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে। অক্সফোর্ডের টিকা দেশে আনতে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে দেশের খ্যাতনামা বৃহৎ ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদানকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
গত ২৬ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক আলোচনা সভায় টিকাদান কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মোহাম্মদ শামসুল হক বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে ৩ কোটি ৪০ লাখ ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা করছে। কয়েক দফায় এই টিকা আসতে অনেক সময় লাগবে। প্রথম দফায় করোনায় সম্মুখ যোদ্ধারা পাবেন ৫১ লাখ ভ্যাকসিন। এরপর যাদের বয়স বেশি (৬০-বছরের উপরে) এবং জটিল রোগে (কো-মরবিডিটি) ভুগছেন তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন পাবেন।
গত ৯ জুলাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো ২০ শতাংশ হারে এই টিকা পাবে। ডিসেম্বরে টিকা উৎপাদন হলে ২০২১ সালের মাঝামাঝি এই টিকা হাতে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।