গত প্রায় এক যুগ ধরে পালাক্রমে ব্যালন ডি’অর জিতে আসছেন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। মাঝে একবার লুকা মদ্রিচ ছাড়া আর কেউ এই যুগে তাদের রাজত্বে হানা দিতে পারেননি।
পর্তুগিজ উইঙ্গার রোনালদোর বিপরীতে মেসি আবার ফুটবলের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কারটি জিতেছেন রেকর্ড ছয়বার। কিন্তু যারা এই পুরস্কারের আয়োজন করে অর্থাৎ ফ্রান্স ফুটবল বলছে, পেলে একাই এই পুরস্কার জিতেছেন ৭ বার! অর্থাৎ রেকর্ডের আসল মালিক এই ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি!
বিষয়টা একটু গোলমেলে ঠেকতে পারে। তাহলে একটু ব্যাখ্যা করা যাক। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত শুধু ইউরোপীয় ফুটবলারদেরই ব্যাওন ডি’অর পাওয়ার যোগ্য ধরা হতো। যা মোটেই ঠিক নয়, তাই পরে এই নিয়ম পাল্টে সত্যিকার অর্থেই বিশ্বসেরাকে এই পুরস্কার তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
২০১৬ সালে ব্যালন ডি’অর পুরস্কারের পুনর্মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। সেই অনুযায়ী ব্যালন ডি’অর যদি আগে থেকেই আন্তর্জাতিক হতো তাহলে কার কার হাতে উঠতো সেটা নিয়ে একটা হিসাব করা হয়। সেখানেই পেলের সাতবার এই পুরস্কার জেতার হিসাব তুলে ধরা হয়।
নতুন হিসাব অনুযায়ী, ১৯৫৮, ১৯৫৯, ১৯৬০, ১৯৬১, ১৯৬৩, ১৯৬৪ এবং ১৯৭০ সালে ব্যালন ডি’অর জেতার কথা ছিল পেলের। তারা যে বছর অ-ইউরোপীয় খেলোয়াড় পুরস্কারের যোগ্য ছিলেন শুধু সেই বছরগুলোকেই হিসাবের মধ্যে ধরেছে। ফলে সম্মানজনক পুরস্কারের তালিকায় নাম এসেছে দিয়েগো ম্যারাডোনা, রোমারিও, মারিও কেম্পেস এবং গারিঞ্চারও।
ফ্রান্স ফুটবল এমনকি একটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদও ছাপিয়েছে যেখানে ব্যালন ডি’অরের সঙ্গে পেলেকে দেখা যাচ্ছে এবং হেডলাইনে লেখা: ‘পেলে ৭ ব্যালন ডি’অর। ’
আধুনিক যুগের ফুটবলভক্তদের অনেকেই পেলে ওভাররেটেড খেলোয়াড় হিসেবে অভিহিত করেন। কেউ কেউ তার ১ হাজারের বেশি ক্যারিয়ার গোল নিয়েও ঠাট্টা করেন। কিন্তু একথা স্বীকার না করে উপায় নেই যে, তিনিই একমাত্র ফুটবলার যিনি ৩ বার বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছেন। এটাও স্বীকার করতেই হবে তিনি ব্রাজিলের জার্সিতে মাত্র ৯২ ম্যাচ খেলেই ৭৭ গোল করেছেন এবং তার যুগে দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ এবং আমেরিকায় সবচেয়ে বড় মাপের এবং সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড় ছিলেন।
অনেকে প্রশ্ন তোলেন, পেলে তার ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় ব্রাজিল এবং মেজর লিগ সকারে খেলেছেন, ইউরোপে খেলেননি। কিন্তু এই যুক্তিও ঠিক নয়। এখন ইউরোপীয় শীর্ষ লিগে খেললে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু ১৯৬০ কিংবা ১৯৭০ এর দশকে লাতিন আমেরিকার ক্লাব ফুটবলও সেসময়ের সেরা ছিল।
পেলের সান্তোস তখন নিয়মিতই ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলোকে হারাতো। ১৯৬২ এবং ১৯৬৩ সালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে কোপা লিবের্তাদোরেসের শিরোপাজয়ীদের লড়াইয়ে- বেনফিকা এবং পরে এসি মিলানকে হারিয়েছিল সান্তোস। সবমিলিয়ে ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলোর বিপক্ষে এমন ৫ ম্যাচে ৯ গোল করেছিলেন পেলে।
পেলের দুটি ব্যালন ডি’অর হিসাব করা হয়েছে দুইবার বিশ্বকাপ জেতার কারণে (১৯৫৮ এবং ১৯৭০)। ম্যারাডোনার ক্ষেত্রেও যেমন ১৯৮৬ বিশ্বকাপ হিসাব করা হয়েছে। তবে ১৯৯০ সালের ব্যাপারটা অবশ্য নাপোলির হয়ে কীর্তি গড়ার কারণে। ফলে সবমিলিয়ে পেলের আন্তর্জাতিক রেকর্ড স্পর্শ করতে হলে ম্যারাডোনার স্বদেশী মেসিকে আরও একবার ব্যালন ডি’অর জিততে হবে। দুটি জিতলে ছাড়িয়ে যাবেন। আর রোনালদোকে জিততে হবে হ্যাটট্রিক ব্যালন ডি’অর।