বরিশাল নগরীর রূপাতলীর বেসরকারি জমজম নার্সিং ইনস্টিটিউটের খন্ডকালীন শিক্ষক মিজানুর রহমান সজলকে কান ধরিয়ে উঠবস ও তওবা করনোর অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রীদের নানাভাবে যৌন হয়রানী করায় অভিযোগে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা তাকে কান ধরিয়ে উঠবস করতে বাধ্য করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। গত ২৫ আগস্ট নগরীর গোরস্থান রোডে এই ঘটনা ঘটে।
সজল ওই ইনস্টিটিউট থেকে ২ বছর আগে চাকরি ছেড়ে দেয়। কিন্তু করোনাকালের শুরুর দিকে ওই ইনস্টিটিউটের মেডিসিন বিভাগে অনলাইনে কয়েকটি ক্লাশ নিয়েছেন। সে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়নের আয়লা গ্রামের বাসিন্দা।
ভিডিও ক্লিপে শিক্ষক সজলকে বলতে শোনা যায়, আমি কোন মেয়ের দিকে কু-নজরে তাকাবো না, কোন মেয়েকে হুমকি দেবো না, কোন মেয়ে ফেল করলে তার দায়-দায়িত্ব আমার। যৌনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কোন মেয়েকে এ ধরনের হুমকি দেবো না। ইনজয়ের কথা বলে কোন মেয়েকে কুয়াকাটা যেতে বলবো না। কোন মেয়ের সাথে ভাল সম্পর্ক থাকলেও এক্সটা নম্বর দেবো না। আমি আজ থেকে ভালো হয়ে গেলাম। গত ৯ সেপ্টেম্বর ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পোস্ট করা হয়। এরপর ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়।
ইনস্টিটিউটের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ওই শিক্ষক কারনে-অকারনে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করতো। বেশি নম্বর পাইয়ে দেয়া এবং ভালো ফলাফলের প্রলোভন দেখাতো। এমনকি অকৃতকার্য হলে যাদের সাথে তার ভালো সম্পর্ক তাদের পাশ করিয়ে দিত তিনি। লোক লজ্জার ভয়ে কোন ছাত্রী তার বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি। দির্ঘদিন ধরে যৌন হয়রানী করায় মেডিসিন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের উপর ক্ষুব্ধ ছিল। এর জের ধরে ওই ঘটনা ঘটেছে।
ওই ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ ইমন জানান, তার স্ত্রী মনিরা আক্তার জমজম নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। মনিরাকেও বিভিন্ন সময় যৌন হয়রানী করে শিক্ষক সজল। এ কারণে তাকে তওবা পড়িয়েছেন। যাতে জীবনে কোন মেয়ের দিকে কু-নজরে না থাকায় এবং কারো সাথে অশালীন আচরন না করে। তবে ওই ভিডিও ক্লিপ তিনি ফেসবুকে আপলোড করেননি বলে দাবী করেন।
হেনেস্তার শিকার শিক্ষক মিজানুর রহমান সজল জানান, ইমন ও মনিরা এক সময় ওই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলো। ইমন সম্প্রতি পাশ করে বের হয়। মনিরা এখনও শিক্ষার্থী। তারা ক্লাস ফাঁকি দিত। লেখাপড়ায় অমনোযোগী ছিল। কিন্তু পরীক্ষায় ভাল নাম্বার পাইয়ে দেয়ার জন্য তারা তার উপর চাপ প্রয়োগ করতো। তাদের অন্যায় আবদার না রাখায় গত ২৫ আগস্ট তাকে হেনেস্তা করা হয় বলে দাবি শিক্ষক সজলের।
জমজম নার্সিং ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুল হক জানান, মিজানুর রহমান সজল ২০১৮ সালের আগে তাদের ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ছিলেন। করোনাকালে অনলাইনে কয়েকটি ক্লাশ নিয়েছেন তিনি। তার কর্মকালীন সময়ে ছাত্রীদের যৌন হয়রানীর কোন অভিযোগ তিনি পাননি। গত ৪/৫ দিন আগে মিজানুর রহমান সজলকে হেনেস্তা করার একটা ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে দেখে তিনি তাকে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম জানান, ফেসবুকে এক শিক্ষককে কান ধরিয়ে উঠবস করানোর ছবি দেখে তিনি স্ব-প্রনোদিত হয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করেছেন। তাকে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে বলছেন। তিনি লিখিত অভিযোগ দিলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।