বহিস্কৃত রাশেদকে ধানের শীষ কেন? ঝিনাইদহে বিএনপি-তৃণমূলে ক্ষোভ

বহিস্কৃত রাশেদকে ধানের শীষ কেন? ঝিনাইদহে বিএনপি-তৃণমূলে ক্ষোভ

সমাচার ডেস্ক: গণঅধিকার পরিষদের প্রধান নুরুল হক নুরের রাজনৈতিক অপকৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে গণঅধিকার পরিষদের বহিস্কৃত নেতা রাশেদ খানকে ঝিনাইদহ চার আসন তথা সদর ও কালীগঞ্জের আংশিক অঞ্চলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করাছে বিএনপি। যার প্রতিবাদে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তকে তারা রাজনৈতিক অকৌশল এবং দলের মধ্যে শৃঙ্খলা পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছেন।

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, প্রায় দেড় যুগের আওয়ামী অপশাসন অবসানের পর একই সাথে ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকারের পাতানো নির্বাচনগুলোর ক্রমাগত বিরোধিতা করে বছরের পর বছর জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ চরম রাজনৈতিক দূরাবস্থার মধ্যে কাটিয়েছে।অত:পর ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুথানের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য সার্বজনীন ও অংশগ্রহনমূলক ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারীর মধ্যে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে বিএনপি।

তবে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে ঝিনাইদহ জেলা চার আসনের জন্য কেন্দ্র নির্ধারিত মনোনয়ন , পুরো জেলা বিশেষ করে সদর ও কালীগঞ্জের নেতৃবৃন্দ থেকে তৃণমুল নেতাকর্মীদের হতাশ করেছে বলে জানা গিয়েছে। জেলা বিএনপি নেতারা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই কড়া অবস্থান নিয়েছেন। তাদের ভাষ্য যেখানে রাশেদ খান, গণঅধিকার পরিষদের একজন শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও বহিস্কৃত নেতা। তাকে এতো গুরুত্ব দিয়ে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করার পেছনে যৌক্তিক কারণ কি? এছাড়াও স্থানীয় রাজনীতিতে এমন সিদ্ধান্ত দলীয় মনোবলকে বিনষ্ট করার পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য সাংগঠনিক হুমকী বলে আখ্যায়িত করছেন নেতৃবৃন্দরা।

বিশেষ করে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন যে, রাজনৈতিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী আচরণ দুষ্টে বহিস্কৃত একজন নেতাকে, ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা আসলে কতটুকু যৌক্তিক। এছাড়া জেলার সিনিয়র সেচ্ছাসেবী, যুব ও ছাত্র নেতৃবৃন্দরা বলেন, বিএনপি তার নির্বাচনী জোট শরিকদেরকে আসন ছাড় দেবার জন্য প্রার্থীতা প্রত্যাহার করলে, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রায় সবাই দলের সিদ্ধান্তকে অবধারিত ভাবে মেনে নেন। কিন্তু জোট শরিকের কোন এক শীর্ষ নেতাকে রাজনৈতিক অপকৌশলে, বহিষ্কার দেখিয়ে বিএনপির নিজ দলে ভেড়ানো এবং তার হাতে দলীয় প্রতীক তুলে দেয়াটা চরম রাজনৈতিক দৈন্যতা। এমন দূর্দিন দেখার জন্য বিএনপি ১৬ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করে নাই।

এছাড়াও জেলার সদর ও কালীগঞ্জ তৃণমুলের নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘ ত্যাগ জুলম গুম খুন নির্যাতন সহ্যকরার পর, স্থানীয় সকল নেতাকর্মীরাই নির্বাচনে নিজ দলের ও নিজ অঞ্চলের সবচেয়ে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। রাজনৈতিক নেতাকর্মী হিসেবে সর্বচ্চো ত্যাগ ও সাংগঠনিক অবদানের একটি মোক্ষম স্বীকৃতি মনোনয়ন। তবে সেটা দলীয় কৌশলগত কারনে শরিকদের জন্য বন্টন করলেও তা রাজনৈতিক সহযোগীদের জন্য প্রাপ্য বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু এটা কেমন দৈন্যতা যে দলের না জোটেরও না, একজন জোট শরিক বহিস্কৃত নেতার হাতে দলীয় মনোনয়ন তুলে দিতে হবে। এসব অপকৌশল রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলার জন্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এছাড়াও দলের একাদিক নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, গোপন আঁতাত ও রাজনৈতিক নোংরামির মাধ্যমে কেন্দ্রের চোখে ধুলো দিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাকর্মীদের প্রতি বেইমানি অসাংগঠনিক এবং অপরাজনৈতিক আচরণ।

এ বিষয়ে সাইফুল ইসলাম (ফিরোজ), কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বলেন, “ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আওয়ামী সরকারের শোষণ ও জুলুমের শিকার হয়ে দলকে সমর্থন দিয়েছে। এমনকি তাদের প্রতি এই ধরনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।” এছাড়া মুর্শিদা জামান বেল্টু, বিএনপির প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুজ্জামান বেল্টুর সহধর্মিণী, এবং অন্যান্য নেতাকর্মীরা এই সিদ্ধান্তকে একটি গুরুতর ভুল ও সাংগঠনিক অবস্থানের ব্যত্যয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

উল্লেখ্য গত ২৬ ডিসেম্বর, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা গণঅধিকার পরিষদের বহিস্কৃত নেতা রাশেদ খানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তারা কাফন মিছিল বের করেন এবং প্রতিবাদ জানান। যা পুরো ঝিনাইদহ জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।

এদিনের মিছিলে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ জানান, বিএনপির মূলধারার নেতাকর্মীরা এই ধরনের সিদ্ধান্তকে কখনই মেনে নেবেন না, এবং অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ঝিনাইদহের তৃণমূল নেতৃবৃন্দগণ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, দীর্ঘ সময় ধরে তারা পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের অত্যাচারের শিকার হয়েও দলের প্রতি একনিষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে যখন দল সাংগঠনিক সক্ষমতায় ফিরছে,তখন তৃণমুলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের পাশে না দাঁড়িয়ে, সাংগঠনিক ধারায় একত্রিত হওয়ার বদলে, কিছু কূচক্রী সুবিধাবাদী নেতৃবৃন্দের প্ররোচনায় দল ত্যাগীদেরকে বিপরীত অবস্থানে ঠেলে দিচ্ছে।

এদের মতে, রাশেদ খানের মতো একজন দল বহিস্কৃত, সুবিধাবাদী এবং অপরিপক্ক নেতাকে, ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে ঝিনাইদহের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা ও বানিজ্যিক কেন্দ্রবিন্দুতে মনোনীত করা অযৌক্তিক। একইসাথে বিষয়টি পুরোপুরি দলের শৃঙ্খলার পুরোপুরি বিরুদ্ধাচারণ, সমূহ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিরোধ ও বিদ্রোহ উদ্ভবের কারণ হিসেবে অবহিত করেন। এবং এই সিদ্ধান্তকে তারা স্থানীয় বিভাগীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাংগঠনিক অপরাধ হিসেবে দেখার পাশাপাশি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সুচিন্তিত হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং উদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণ এবং সুফল কামনা করেন।

..

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::