আনাছুল হক, কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা একটি অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র। চলতি অর্থবছরে ঈদগাঁও বাজারের ইজারা মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি টাকা—যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের বিপরীতে বাজারসংলগ্ন এলাকাগুলোর চিত্র ভয়াবহ: জলাবদ্ধতা, নোংরা পানি, স্বাস্থ্যঝুঁকি, রাস্তার বেহাল অবস্থা, মশার উৎপাত, এবং সীমাহীন জনদুর্ভোগ।
ঈদগাঁও বাজারের আশপাশের প্রধান সড়ক—বায়তুশ রোড ও বঙ্কিম বাজার সড়ক—বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি জমে যায়। এ ছাড়া পাশ্ববর্তী তেলিপাড়া ও জলদাশ পাড়ায় পানি ঢুকে পড়ায় বাড়িঘর পানিবন্দি হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
ঈদগাঁওয়ের প্রাণকেন্দ্র বায়তুশ রোড দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন স্কুল-কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী।
প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো:
ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়
ঈদগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
ঈদগাহ আদর্শ শিক্ষা নিকেতন
জাহানারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
ঈদগাঁও গ্রামার স্কুল
আলমাছিয়া ফাজিল মাদ্রাসা
ঈদগাহ রশিদ আহমদ কলেজ
জাগির পাড়ার বাসিন্দা ছৈয়দ মোহাম্মদ এরশাদ বলেন,
“বায়তুশ রোড বর্ষায় প্রায় ৫ দিন পানির নিচে থাকে। ভাঙা ড্রেন দিয়ে পানি নামতে না পারায় চলাচল একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায়। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবাই দুর্ভোগে পড়ছে।”
ঈদগাঁও বাজারের বঙ্কিম বাজার অংশেও দুর্ভোগের শেষ নেই। রাস্তা খানা-খন্দে ভরা, পানিতে ভেসে বেড়ায় নোংরা আবর্জনা।
ব্যবসায়ী নুরুল হুদা বলেন,
“ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় নোংরা পানি দোকান পর্যন্ত উঠে আসে। গন্ধে টিকতে পারি না। ক্রেতারাও ফিরে যায়।”
ব্যবসায়ী মো. বায়েজিদ বলেন,
“বর্ষাকালে হালকা বৃষ্টিতেই সড়কে হাঁটুপানি জমে। চলাচল সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ে।”
আরেক ব্যবসায়ী খালেদ বলেন,
“পানিতে জমে থাকা দুর্গন্ধে ও মশার উৎপাতে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে যাচ্ছে। শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।”
এবার জলাবদ্ধতা ঢুকে পড়ছে ঘরে। বর্ষার শুরুতেই ঈদগাঁওর নিম্নাঞ্চল—তেলিপাড়া ও জলদাশ পাড়ার মানুষজন আতঙ্কে।
স্থানীয় বাসিন্দা ময়না বেগম বলেন,
“উঠানে পানি উঠেছে, আর একটু বাড়লেই ঘরের ভেতর ঢুকবে। আমরা তো গরিব মানুষ, কোথায় যাবো?”
এত বড় বাজার, এত বিশাল ইজারা মূল্য—তবু কেন উন্নয়ন নেই?
এ প্রশ্ন এখন ঈদগাঁওবাসীর ঘরে ঘরে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. কামাল বলেন,
“৭ কোটি টাকার ইজারা হয়, অথচ ড্রেনেজ নাই, রাস্তা ভাঙা, বাতি নাই—এই টাকাগুলো কোথায় যায়?”
সরকারের কাছ থেকে কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হলেও স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা কার্যকর নজরদারির ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেই মনে করছেন সচেতন মহল।
বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনার দাবি তীব্র হচ্ছে।