নাঈম হোসেন দূর্জয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: গত ১০ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রায় দুই মাস আগে ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের সাক্ষাৎকারের ঘটনার খন্ডিত অংশের বিভ্রান্তিকর উপস্থাপন করা ‘গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়ায় চবির ভাইবা বোর্ডে হেনস্তা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম জাতীয়তাবাদী চেতনা মনস্ক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়টির অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞান হলের প্রভোস্ট এবং রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ. জি. এম নিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয়টির বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের এবং অন্যান্য গণ্যমান্য শিক্ষকবৃন্দের।
প্রতিবেদনটিতে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের নামহীন একাধিক শিক্ষার্থীর সূত্র টেনে আরোপ করা হয় গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়ার কারণে তাদেরকে বিভাগটির পরীক্ষা কমিটির সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক এ. জি. এম নিয়াজ উদ্দিন সহ অন্য দুই শিক্ষকের উপস্থিতিতে চতুর্থ বর্ষের ভাইভা বোর্ডে হয়রানি করা হয়েছে। কিন্তু বিভাগটিতে খবর নিয়ে দেখা গিয়েছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী এই ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন এবং কি বিভাগটির সভাপতি বা অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দের কাছেও উক্ত ঘটনার বিরুদ্ধে আসেনি কোন লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ এমন কি খুঁজে পাওয়া যায়নি প্রতিবেদনটিতে বক্তব্য দেওয়া নামহীন সেই শিক্ষার্থীদের বক্তব্যের সত্যতাও।
এ বিষয়ে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. এ. কে. এম. মাহফুজুল হক জানান, এ জাতীয় লিখিত বা মৌখিক কোন অভিযোগ নেই। এবং এ ব্যাপারে বিভাগ কোন ধরনের অবগত না। ইউনিভার্সিটি আইন অনুযায়ী পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলো গোপনীয়। এগুলো বাহিরে বলাবলির মধ্যে হীন উদ্দেশ্য আছে কিংবা কারো চরিত্র হনন করার কোন একটা ব্যাপার আছে। তিনি আরও জানান, পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে পরীক্ষা কমিটি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছে।
এ বিষয়ে চবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক একইসাথে বিভাগটির শিক্ষক ড. মোঃ এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী জানান, আমাকে কোন শিক্ষার্থী কোন দরখাস্ত অথবা কোন অভিযোগ দেয়নি। এ ব্যাপারে তেমন কোন বিষয় আমার জানা নেই এবং নামহীন শিক্ষার্থীকে সেটাও আমার জানা নেই।
প্রতিবেদনটিতে নামহীন শিক্ষার্থীর বক্তব্য বলে দাবি করা জুলাই বিপ্লবে সম্পৃক্ত বিভাগটির স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মাহিমা ইসলাম উক্ত বক্তব্য তার নয় বলে জানিয়ে এ বিষয়ে জানান, নিয়াজ স্যারকে নিয়ে যেটা নিউজ হয়েছে সেটার সত্যতা একদম জিরো পার্সেন্ট। তিনি আরও জানান, আমি অফিসিয়ালি কোন বক্তব্যই দিই নাই। এটা একটা উড় খবরের মতো প্রকাশ হয়েছে।
জুলাই বিপ্লবে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী এই শিক্ষক উক্ত সংবাদটির বিরুদ্ধে তার দেওয়া এক প্রতিবাদ লিপিতে বলেন, প্রতিবেদনটিতে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থীর বক্তব্য আকারে মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে, যা আমার জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর ও অসম্মানজনক। প্রতিবেদনে এক নারী শিক্ষার্থীর বয়ানে বলা হয়েছে, “আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সামনের সারিতে ছিলাম। এটা বিভাগের প্রায় সবাই জানে। ভাইভাতে গিয়ে বুঝতে পারলাম, যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিল এবং চট্টগ্রাম বিটিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছে, তাদেরকে পয়েন্ট আউট করা হচ্ছে।” এই বক্তব্যটি সম্পূর্ণরূপে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমার উপস্থিতিতে কাউকে পয়েন্ট আউট করা হয়নি, বরং আমি আমার ছাত্র ছাত্রীদের যাঁরা গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের অবদান নিয়ে ইতিবাচকভাবে প্রশংসা করেছি। কিন্তু সংবাদে যে পয়েন্ট আউট করার কথা বলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ বিকৃত, বানোয়াট এবং মিথ্যাচার। এমন কোন ঘটনা আমার সামনে ঘটেনি। তিনি আরও বলেন, ২২ ডিসেম্বরের এই ঘটনার প্রায় দুই মাস পর এসে এইভাবে চটকদার শিরোনামে প্রকাশ করা স্পষ্টতই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অশুভ উদ্দেশ্যপূর্ণ। যেখানে চবি প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন সাধনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে, সেখানে এমন বিকৃত সংবাদ বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সংবাদে উল্লেখিত অভিযোগ এবং তথ্যগুলি সন্দেহজনক ও বিকৃত। পয়েন্ট আউট করা শব্দবন্ধটি পুরোপুরি মিথ্যা। গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে ওই বক্তব্যের ফ্যাক্ট চেক করা উচিত ছিল। তবে প্রতিবেদক তা করেছেন কি না, তাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। এর মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে, প্রতিবেদক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য প্রচার করেছেন।
উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এস. এম. নছরুল কদিরের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়ায় চবির ভাইভা বোর্ডে হেনস্তা’ প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ. জি. এম নিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম মনে করে, এই প্রতিবেদনটিতে এ. জি. এম নিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হয়েছে যা গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতার প্রতি চ্যালেঞ্জ। এমন পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ পরিবেশনা তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে গত ষোল বছর ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ. জি. এম নিয়াজ উদ্দিন নিরন্তর সোচ্চার ও দৃঢ় ভূমিকা পালন করে আসছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এমন মনগড়া ও বিকৃত সংবাদ প্রকাশ করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, প্রতিবেদনটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং পক্ষপাতদুষ্টতার পরিচায়ক, তা জাতীয়তাবাদী শিক্ষক সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে প্রকাশিত হয়েছে।
জাতীয়তাবাদী চেতনার ধারক ও বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদে আদিষ্ট থাকার কারণেই মূলত, এই বিভ্রান্তকর প্রতিবেদনের মাধ্যমে ভুক্তভোগী শিক্ষকের সম্মানহানি করার চেষ্টা করছে একটি স্বার্থান্বেষী গুপ্ত রাজনৈতিক চর্চার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির জুলাই গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য গণ্যমান্য শিক্ষকবৃন্দ।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-আমীন বলেন, উনি বর্তমান প্রশাসনের সর্বকনিষ্ঠ প্রভোস্ট, এটা হয়তো কারোর মাথা ব্যথার কারণ হয়ে থাকতে পারে। উনার কর্মতৎপরতা এবং ম্যানেজমেন্টের যে ক্ষমতা এটা সত্যই ঈর্ষান্বিত করেছে অনেককে। প্রশাসনের সকলে উনার কাজকর্মকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ এবং দৃষ্টান্তমূলক হিসেবেই দেখেন। তিনি আরও বলেন, তার প্রতি শত্রুতামূলক হতে পারে অথবা বিদ্বেষ মূলকভাবে এই সংবাদটি ছড়িয়েছে।
এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য এবং রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, পত্রিকায় নিয়াজ স্যারের ও ভাইভা বোর্ডের ব্যাপারে যেভাবে লিখুনির ক্যারিশমায় একটা দোষ ফুটিয়ে তুলেছে তা আমার কোন মতে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় নি। নিয়াজ স্যার শুরু থেকে জুলাই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিল, তিনি আন্দোলনের সময় যেমন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়েছিল, তেমনি আন্দোলন পরবর্তী জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে ও সহায়তা করতে চট্টগ্রাম মেডিকেলে এগিয়ে এসেছিলেন। আমি যেহেতু আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারটা দেখছিলাম, স্যার তখন আহতদের সহায়তা করতে আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল। তিনি আরও বলেন, নিয়াজ স্যারের ব্যাপারে যেভাবে তুলে ধরেছে পত্রিকা তা সত্য নয়। আমি নিজেও আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম ও বিটিভিতে গিয়েছিলাম। আমাকে কোনভাবে হয়রানি করা হয়েছে বলে আমার মনে হয় নি। স্যার জুলাইয়ের স্প্রিরিট কে ধারণ করে তাঁর সামনে জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় কেউ হয়রানি হবে বলে আমি মনে করি না।