আনাছুল হক: চট্টগ্রামের হাজেরা তজু কলেজের উপাধ্যক্ষ এস.এম. আইয়ুবের আকস্মিক মৃত্যুতে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দীর্ঘ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা এই শিক্ষকের মৃত্যু নিয়ে শিক্ষাঙ্গনের নিরাপত্তা ও নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর হাজেরা তজু কলেজে একটি উগ্র সাত্তান্বেষী গোষ্ঠী জোরপূর্বক প্রবেশ করে। এ সময় তারা কলেজের উপাধ্যক্ষ এস.এম. আইয়ুবকে ভয় দেখিয়ে এবং মানসিক চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগপত্রে সই করিয়ে নেয়। এই ঘটনা কলেজের স্বাভাবিক কার্যক্রমে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
ঘটনার সময় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চয়ন দাস গণমাধ্যমে জানান, “তারা কলেজে প্রবেশ করে তাদের সব দাবি মেনে নেয়ার পরেও স্যারদের মারতে তেড়ে এসেছিল। আমরা সেদিন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটিয়েছি।”
পদত্যাগের এই অপমানজনক ঘটনার পর থেকে উপাধ্যক্ষ মানসিক চাপে ভুগছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। অবশেষে, দীর্ঘ চিকিৎসার পর আজ (২৩ নভেম্বর, শনিবার) তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এই ঘটনার পর উপাধ্যক্ষ এস.এম. আইয়ুবের একটি মন্তব্য বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে। যমুনা টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “তারা আমাকে হত্যা করবে, তাই আমি বাধ্য হয়ে পদত্যাগপত্রে সই করেছি।” তার এই বক্তব্যে তার আতঙ্ক ও অসহায়তার চিত্র ফুটে ওঠে।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এবং সাধারণ মানুষ এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন।
এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এটি শুধু একজন শিক্ষকের মৃত্যু নয়, শিক্ষাক্ষেত্রে মূল্যবোধ ও মানবিকতার মৃত্যু। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের দ্রুত শাস্তি হওয়া উচিত।”
এই মর্মান্তিক ঘটনায় শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষকদের নিরাপত্তা এবং প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। একজন সম্মানিত শিক্ষককে এমনভাবে মানসিক চাপে জর্জরিত করা এবং তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া অত্যন্ত দুঃখজনক।
উপাধ্যক্ষের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাজেরা তজু কলেজের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা দোষীদের কঠোর শাস্তি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছেন।