দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-২ (সদর একাংশ ও রাজৈর) আসনের আওয়ামী লীগের (নৌকা প্রতীক) প্রার্থী শাজাহান খান। তাঁর নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে তিনি মাদারীপুর-৩ (সদরের একাংশ, কালকিনি ও ডাসার) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে প্রচার চালাচ্ছেন ও ভোট চাইছেন। এতে পুরো কালকিনি মাদারীপুর ও ডাসারের মানুষের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা দেখা দিয়েছে।
ইতিমধ্যে আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের বেশ কয়েকটি পথসভায় অংশ নিয়েছেন শাজাহান খান। সোবহানের পক্ষে স্থানীয় হাটবাজারেও শাজাহানকে ভোট চাইতে দেখা গেছে।
মাদারীপুর-৩ সংসদীয় আসনের ভোটের মাঠে আবদুস সোবহান গোলাপের পক্ষে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের তেমন নেতা-কর্মী মাঠে নেই। বেশির ভাগ নেতা-কর্মী মাদারীপুর-৩ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের পক্ষে কাজ করছেন। এই কারণে মাদারীপুর-৩ আসনে আবদুস সোবাহান গোলাপের নৌকার বিজয় আনতে নিজের নির্বাচনী এলাকার প্রচারণা কমিয়ে শাজাহান খান সরাসরি মাঠে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, আবদুস সোবহানের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের দূরত্ব ও দ্বন্দ্ব থাকায় তাঁর পক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীরা নেই। সোবহানের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান সরদার ছাড়া উপজেলার উল্লেখযোগ্য কোনো নেতাকে তাঁর নির্বাচনী প্রচারে দেখা যায়নি। তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শাজাহান খান সরাসরি আবদুস সোবহানের পক্ষে মাঠে নামায় জেলার কয়েকজন নেতা-কর্মীকে দেখা যাচ্ছে। আবদুস সোবহানের পক্ষে সরাসরি প্রচারের নামায় শাজাহান খানের সমালোচনাও করেছেন কেউ কেউ।
কালকিনি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘আবদুস সোবহান গোলাপের নিজের কোনো জনপ্রিয়তা নেই। তিনি একজন দুর্নীতিবাজ এমপি। তাই তিনি জেলা থেকে লোক হায়ার করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। শাজাহান খান মাদারীপুর-২ আসনের এমপি, তাঁর ৩ আসনে কাজ কী? তিনি নিজের আসনে প্রচারণা মন না দিয়ে কালকিনিতে পড়ে আছেন। তাঁকে (শাজাহান খানকে) এটা মানায় না। যদিও এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই, কারণ আমরা আওয়ামী লীগ যাঁরা করি, তাঁরা সবাই ঈগলের গণজোয়ারে আছি।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ১০টায় মাদারীপুর-৩ আসনের নির্বাচনী এলাকা লক্ষ্মীপুর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহানের সঙ্গে এক পথসভায় অংশ নেন শাজাহান খান। এ সময় তাঁর সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ আবুল বাশার, শাজাহান খানের ভাই আজিজুল রহমান খান ছিলেন। এর আগে চরদৌলতখান ও মস্তফাপুর ইউনিয়ন এবং কালকিনি পৌর এলাকায় আবদুস সোবহানের পক্ষে নৌকায় ভোট চান শাজাহান খান। শনিবার ভুরঘাটা এলাকায় ভোট চান গোলাপের পক্ষে ভোট চান তিনি।
লক্ষ্মীপুর এলাকায় নির্বাচনী পথসভায় আবদুস সোবহানের পক্ষে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে শাজাহান খান বলেন, ‘এই ভোট গোলাপ সাহেবের না। এই ভোট শেখ হাসিনার। যাঁরা আওয়ামী লীগ করেন, তাঁদের নৌকায় ভোট দিতেই হবে। আর যাঁরা নৌকায় ভোট দেবেন না, তাঁরা আওয়ামী লীগ করেন না। তাই আমাদের সবাইকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী জনসভা মাদারীপুর সদরে বা শিবচরে করবেন না। করবেন কালকিনিতে। জনগণকে বুঝতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোলাপকে কতটা স্নেহ করেন।’
দলীয় নেতা-কর্মী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাদারীপুর-১ ও ২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপক্ষে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী নেই। এ কারণে এই দুই আসনে নির্বাচনে তেমন কোনো প্রচার নেই। এই আসনের লোকজন বুঝতেই পারছেন একটি সংসদ নির্বাচনের প্রচার প্রচারণার সময়কাল চলছে। কোথাও কোন নির্বাচনের সাড়া শব্দ নেই। তবে কালকিনিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তাহমিনা বেগম মাদারীপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহানের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্ধীতা করায় এখানে নির্বাচন জমে উঠেছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের লোক। নৌকার পক্ষেই চিরকাল ছিলাম, থাকব। তবে মাদারীপুর-২ ও ৩ আসনে নৌকার প্রার্থীর প্রচারণায় আমরা নেই। তা ছাড়া মাদারীপুর-৩ আসনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাঁর পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা একযোগে মাঠে নেমেছেন। তাঁর প্রতি আমাদের সহানুভূতি রয়েছে। কারণ, নেত্রী বলেছেন, জনগণের ভোটে যে হয়ে আসবে, সে-ই আমার।’
কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহীন বলেন, ‘আমি নিজেও এই আসনের প্রার্থী ছিলাম। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পরে প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তবে নৌকার প্রার্থী গোলাপের পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেই। উপজেলা ও ইউনিয়নের সব কমিটির নেতা-কর্মীরা তাহমিনা বেগমকে সমর্থন দিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগলের পক্ষে সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।’
মাদারীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম বলেন,‘শাজাহান খান তার নির্বাচন রেখে কালকিনি ডাসারে এসে একজন দুর্নীতিবাজ এমপির পক্ষে প্রচার প্রচারণ করছেন। এটা তাকে মানায় না। ইতোমধ্যে তারা নির্বাচনের মাঠে এসে আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাকর্মী যারা তাদেরকে হত্যা করা শুরু করেছে। শুক্রবার রাতে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের একজন ত্যাগী আওয়ামীলীগ নেতাকে হত্যা করেছে। নির্বাচনের মাঠ নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে নেমেছে। আমরা তাতে ভয় পাই না। আমার সাথে আমার নেতাকর্মী ও জনগণ রয়েছে। ইনশাল্লাহ আগামী ৭ তারিখে জনগণ ঈগল পাখি মার্কায় ভোট দিয়ে কালকিনি থেকে এক দুর্নীতিবাজকে চিরতরে উৎখাত করে দেবে।