আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী): চলছে বর্ষাকাল। শ্রাবণের ১৫ দিন পেরিয়েছে তবুও বৃষ্টির দেখা নেই বরেন্দ্র অঞ্চলে। শ্রাবণ মাস যতই যাচ্ছে ততোই যেন বাড়ছে তাপমাত্রার। আবহাওয়া অধিদপ্তরও বৃষ্টি নিয়ে কোন সুখবর দিতে পারছেনা। বৃষ্টির অভাবে এবারে বরেন্দ্রে হাজার হাজার বিঘা জমি এখনো পতিত পড়ে রয়েছে।
অন্যদিকে আমনের বীজতলার দুই মাস পেরিয়ে যাচ্ছে। যারা আগের বৃষ্টিতে আমন রোপন করেছিলেন সে আমন ক্ষেতগুলো বাঁচানোর কষ্টকার হয়ে পড়েছে কৃষকের। বৃষ্টি অভাবে ফসলের মাঠ পুরোই ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। প্রকৃতির কাছে যেন এক অসহায় পয়ে পড়েছে কৃষকেরা।
এদিকে, রাজশাহীর মুন্ডুমালা পৌর এলাকায় বৃষ্টির জন্য তিন দিন ব্যাপী ইস্কার নামাজ আদায় শুরু করেছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা। বুধবার সকালে মুন্ডুমালা ফজর আলী মোল্লা ডিগ্রি কলেজ মাঠে উপস্থিত হয়ে ইস্কারে নামাজ আদায় করেন প্রায় দুই হাজার মুসল্লি। আরো দুই দিন ব্যাপী নামাজ আদায় হবে বলে জানান মুন্ডুমালা ক্বওমী মাদরাসার প্রধান মাওলানা রুহুল আমিন।
আষাঢ় মাস শুরুর পর পরেই জোরেসরে বীজতলা পরিচর্যা ও সার প্রয়োগ শুরু করেছেন কৃষকেরা। আষাঢ়ের ১২ থেকে ১৫ দিন পরেই বীজতলা থেকে চারা তুলে আমন রোপন শুরু করবে ক্ষেতে। কিন্তুু আষাঢ় নয় শ্রাবণের ১৫ দিন পেরিলেও বৃষ্টির দেখা নাই বললেই চলে। তাই এখন পর্যন্ত ৩০ থেকে ৪০ ভাগ আমন ক্ষেত প্রস্তত করতে পারাই পড়ে আছে পতিত। আমন রোপন করতে না পারেই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের চাষীরা।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় আউস চাষের লক্ষ্যমাত্রা না পুরণ হলেও আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আমনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে। এর জন্য জেলায় এবার বীজতলা হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলের রাজশাহী, নঁওগা, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমন চাষাবাদ হবে আরো ৩ লাখ ৫০ হাজার হেক্টরের উপরে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা চান্দলায় গ্রামের কৃষক তসিকুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে ১২ বিঘা জমিতে আমন চাষাবাদ করেছেন। আষাঢ়ের মাসের মধ্যে জমি আমন রোপন করলে ও বরেন্দ্রে উচু জমিতে বৃষ্টির অভাবে ফেটে চৌচির হয়েগেছে। ধান বাচানো কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
তিনি আরো জানান, আমন চাষে সেচ খরচ লাগে না। সার খরচও কম। বর্ষার পানির উপর নির্ভর করে উচুঁ নিচু সকল জমিতে আমন চাষাবাদ করা হয়ে থাকে।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক আমজাদ জানান, চলতি বছর ২২ বিঘা জমিতে আমন চাষ করবেন। এখন পর্যন্ত ১৫ বিঘা জমিতে কোন রকম আমন রোপন করলে বাকি জমি পতিত পড়ে আছে। আর কয়দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে বীজে গিট হয়ে যাবে। সে বীজ ক্ষেতে রোপন করলে ধানের ফলন একেবারে হবে না।
শুধু গোদাগাড়ী উপজেলার চান্দলায় গ্রামের কৃষক তসিকুল ইসলাম ও তানোর উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক আমজাদ আলী নয়,রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক এবার বৃষ্টির অভাবে আমন রোপন করতে পারেনি। আবার অনেকে যারা রোপন করেছেন তাদের পুরো মাঠের ফলস ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।
রাজশাহীর তানোর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান জানান, আষাঢ-শ্রাবন মাসে যে পরিমান বৃষ্টি হওয়ার কথা সে পরিমান বৃষ্টি এবছর হয়নি। তাই বরেন্দ্রে অনেক মাঠে কৃষকেরা আমন রোপন করতে পারেনি এখন পর্যন্ত।