পৃথক কনডেমড সেলে চুপচাপ আছেন প্রদীপ-লিয়াকত

পৃথক কনডেমড সেলে চুপচাপ আছেন প্রদীপ-লিয়াকত

কারা সূত্র জানায়, অন্য কয়েদিদের মতো প্রদীপ ও লিয়াকতকে পরানো হয়েছে কারা পোশাক। এরপর তাঁদের পৃথক দুটি কনডেমড সেলে পাঠানো হয়। কারাগারের অন্য বন্দীদের মতো তাঁদের খেতে দেওয়া হয় সাদা ভাত, মাছ ও সবজি। অন্য সেলের তুলনায় কনডেমড সেল আকারে ছোট। সেলের ভেতর আলো-বাতাস তেমন থাকে না। তবে দিনের নির্দিষ্ট সময় আসামিদের সেলের বাইরে হাঁটাচলার সুযোগ দেওয়া হয়। কনডেমড সেলের আসামিরা মাসে এক দিন জেলগেটে গিয়ে দর্শনার্থীদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান।

গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে আদালত থেকে জেলা কারাগারে নেওয়ার জন্য আসামিদের যখন প্রিজন ভ্যানে ওঠানো হচ্ছিল, তখন কয়েকজন আসামি চিৎকার করলেও প্রদীপ ও লিয়াকত ছিলেন নির্বিকার। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে জেলা কারাগারে পৌঁছানোর পরও চুপচাপ ছিলেন তাঁরা।

কক্সবাজার জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) মো. নেচার আলম বলেন, প্রদীপ ও লিয়াকত এখন সাধারণ বন্দী। দুজনকে পৃথক দুটি কনডেমড সেলে রাখা হয়েছে। তাঁরা চুপচাপ আছেন। শরীরের অবস্থাও স্বাভাবিক আছে। রাতের খাবার ও সকালের নাশতাও খেয়েছেন দুজন। বাইরের কারও সঙ্গে তাঁদের দেখা–সাক্ষাৎ হয়নি।

কারা সূত্র জানায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদেরই কনডেমড সেলে রাখা হয়। বন্দীকে সার্বক্ষণিক পাহারায় রাখা হয়। দর্শনার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয় না। তবে জেল কোড কিংবা কারাবিধিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কনডেমড সেলে রাখার বিষয়ে উল্লেখ নেই। তবু রেওয়াজ হিসেবে এটি চলছে। কনডেমড সেলে একজনের বেশি আসামি রাখা হয় না। মৃত্যুদণ্ডের রায় উচ্চতর আদালত থেকে বাতিল না হওয়া পর্যন্ত কনডেমড সেলেই থাকতে হবে প্রদীপ ও লিয়াকতকে।

কারাগার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ডের খবর জানতে পারেন অন্য কয়েদিরা। তাঁদের ফাঁসির রায় শুনে উল্লাস প্রকাশ করেন অনেকেই। গতকাল বিকেলে রায় ঘোষণার পর আদালত থেকে কারাগারে আনার জন্য প্রদীপকে যখন প্রিজন ভ্যানে তোলা হচ্ছিল, তখন আদালত প্রাঙ্গণে দাঁড়ানো উৎসুক জনতা চিৎকার করে প্রদীপকে গালাগাল করেন। অনেকে প্রিজন ভ্যানে ঢিল ছুড়ে মারেন। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে আটক করেছে। উৎসুক জনতার মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন ক্রসফায়ারে স্বজন হারানো মানুষ। তাঁরা রায় ঘোষণার আগে আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করে প্রদীপের ফাঁসি দাবি করেছিলেন।

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম  বলেন, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশে এবং সাবেক পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে সিনহার মৃত্যু হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। আদালতের রায়ে পরিকল্পিত হত্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আইনজীবী ফরিদুল আলম বলেন, প্রদীপ কুমার দাশ টেকনাফ মডেল থানায় ২২ মাস ছিলেন। ওই সময়ে টেকনাফে ১৪৪টির বেশি কথিত মাদকবিরোধী অভিযান ও বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় অন্তত ২০৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বেশ কিছু নিরীহ লোককে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। মাদক মামলার আসামি করে শত শত নারী-পুরুষকে কারাগারে পাঠিয়েছেন তিনি। কারাগারের সাড়ে চার হাজার বন্দীর মধ্যে ৮০ শতাংশ মাদক মামলার আসামি।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

ঈদগাঁও–ঈদগড় সড়কে গুম ও ডাকাতি দমনে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি

শিবচরে মাদক রোধে ইউএনও’র কাছে স্মারকলিপি দিল উপজেলা বিএনপি