ঢাকা: ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে ৮০ লাখ টাকা আয় করেছেন সিলেটের উপ-কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পার্থ গোপাল বণিক। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্রে একথা বলা হয়েছে।
রোববার (২৩ আগস্ট) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন এ অভিযোগপত্র জমা দেন। সোমবার (২৪ আগস্ট) ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ ‘দেখিলাম’ লিখে স্বাক্ষরের পর অভিযোগপত্র গ্রহণের জন্য আগামী ৩১ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
অভিযোগপত্রে মোট ১৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, পার্থ গোপালের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ৮০ লাখ টাকার কোনো বৈধ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। অর্থাৎ তিনি সরকারি দায়িত্ব পালনকালে ৮০ লাখ টাকা বিভিন্ন অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপার্জন করে অর্থপাচারের উদ্দেশ্যে নিজ বাসায় লুকিয়ে রেখেছেন মর্মে প্রমাণিত হয়।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ২০১৪ সালে তিনি ৩১ হাজার ২৫০ টাকা বেতন স্কেলে কারা উপ-মহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তার এই বেতন স্কেলের সঙ্গে এতো টাকা অর্থ উপার্জন অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি তার কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তা উত্তোলন করেননি বা তিনি কখনও এই অর্থ আয়কর বিবরণীতেও প্রদর্শন করেননি। যা দণ্ডবিধির ১৬১ ধারা, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগপত্রে পার্থ গোপাল সম্পর্কে বলা হয়, তিনি ১৯৯৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর ২০০২ সালে জেল সুপার হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদে কর্মরত ছিলেন। ২০১৮ সালের নভেম্বরে তিনি সিলেট বিভাগে বদলি হন। মামলা ও গ্রেফতারের প্রেক্ষিতে তাকে ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
গত বছরের ২৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দুদকের সেগুনবাগিচার প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফের নেতৃত্বে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় পার্থ গোপাল বণিককে। ওইদিন বিকেলেই রাজধানীর ধানমন্ডির ভূতেরগলিতে পার্থ গোপাল বণিকের বাসায় অভিযান চালিয়ে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করে দুদক।
ঘুষ ও দুর্নীতির কয়েক লাখ নগদ টাকা তার বাসায় রয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে পার্থ গোপাল বণিকের বাসায় এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয় এবং তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয়।
পরে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধান দলের নেতা মো. সালাউদ্দিন বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় গত ২৯ জুলাই তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব দিলওয়ার বখত বলেন, সাময়িক বরখাস্তকৃত কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) পার্থ গোপাল বণিক অবৈধভাবে আয়কৃত ৮০ লাখ টাকা বিদেশে পাচার করতে চেয়েছিলেন। যা দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।