বয়স্ক মা ও তরুণী দুই মেয়েকে রশিতে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের পর ‘গরু চুরির মামলায়’ কারাগারে পাঠানো হয়েছে। চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে গতকাল শনিবার বিকেলেই তাদের কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
কক্সবাজারের জেল সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন গণমাধ্যমকে চুরির মামলায় মা-মেয়ে ও ছেলেসহ ৪ জন কারাগারে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় তাদের কারাগারে আনা হয়েছে। এদিকে, তাদের কাছ থেকে মানুষ অজ্ঞান করার স্প্রে ও একটি ছুরি উদ্ধারের কথাও মামলায় লেখা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার ওই আসামিরা হলেন চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট কুসুমপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালামের স্ত্রী পারভীন আক্তার (৫৫), মেয়ে সেলিনা আক্তার (২৮), মেয়ে রোজিনা আক্তার (২৫), ছেলে মো. আরমান (৩০) ও পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের মো. ছুট্টু (৩৮)।
ঘটনার দিন তাদের ‘গরু চোর’ আখ্যা দিয়ে প্রথমে নির্মমভাবে পেটায় দুর্বৃত্তরা। পরে কোমরে রশি বেঁধে তাদের প্রকাশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে। সেখানেও চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম নিজে তাদের ফের মারধর করেন। একপর্যায়ে খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে চকরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করে।
শুক্রবার দুপুরে হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় এ ঘটনা ঘটলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনার ছবি প্রকাশের পর এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরে পহরচাঁদা এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাহমুদুল হক বাদী হয়ে এ ঘটনায় ওই নির্যাতিত ৫ জনকে আসামি করে চকরিয়া থানায় গরু চুরি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় থানা পুলিশ আহতদের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম জানান, শুক্রবার স্থানীয়রা ফাঁড়িতে খবর দিলে আমাদের ফোর্স দিয়ে গুরুতর অবস্থায় মা-মেয়েসহ ৫ জনকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আসি। আমরা তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।
হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মা-মেয়েসহ ৫ জনকে হাত-পা খোলা অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে। মারধরে আহতদের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গরুর মালিক পহরচাঁদা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাহমুদুল হক বাদী হয়ে ওই ৫ জনের বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগ এনে একটি মামলা রুজু করেন। ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।