নিজস্ব প্রতিবেদক : সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে আগের মতোই কঠোর অবস্থানে থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করতে বিএনপির কোনো দাবিতে ছাড় দেবে না তারা।এই দাবিতে যে কোনো আন্দোলনকে সরকার কঠোরভাবে দমন করতে প্রস্তুত রয়েছে। সম্প্রতি বিএনপি পক্ষ থেকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের জন্য নতুন করে দাবি তোলা হয়েছে। এই দাবি নিয়ে বিএনপি আন্দোলন গড়ে তোলা কথাও বলছে। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির নেতারা ইতোমধ্যে সিরিজ সভা করেছেন।যদিও বিএনপির সেই দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংবিধান অনুযায়ী এর আগের দুই নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারের অধীনেই আগামী দ্বাদশ নির্বাচনও আয়োজনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তারা। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এরপর দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়। দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় দলটি। কিন্তু বর্তমানে বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারে অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবিকে সামনে নিয়ে আসতে চায়। তবে, সংবিধান অনুযায়ী চলমান আইনে নির্বাচন করতে সরকারের অবস্থান কঠোর ও অনড় থাকবে। বিগত দুই নির্বাচনের মতো আগামীতেও নির্বাচিত সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা জানান।এদিকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বিএনপি যে আন্দোলনের কথা বলছে সেটাকেও গুরুত্ব দিচ্ছে না সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তাদের মতে, বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলনের কথা বলে আসছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো আন্দোলনই দলটি দৃশ্যমান করতে পারেনি। তাছাড়া জনগণের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততা নেই বলেও তারা মনে করেন। এ অবস্থায় বিএনপি কোনো আন্দোলন করতে চাই জনসমর্থন পাবে না বলে জানান তারা।তবে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি আন্দোলনের নামে দেশে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছিলো সে বিষয়টিও সরকার ও আওয়ামী লীগ মাথায় রয়েছে। সেই ধরনের পরিস্থিতির যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় যে বিষয়ে সরকার সতর্ক ও প্রস্তুত আছে বলে ওই নীতি নির্ধারকরা জানান। নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিশৃঙ্খল ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করা হলে সরকার তা কঠোরভাবে দমন করবে বলেও জানান তারা।এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নিরপেক্ষ সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসব কিছু হবে না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারই নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। নির্বাচন পরিচলানা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সরকার ইসিকে সহযোগিতা করবে।তিনি বলেন, বিএনপি আন্দোলনের কথা বলছে, করতেই পারে। নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও, মানুষের বাড়ি ঘরে আগুন, মানুষ হত্যা করেছিলো। নির্বাচনের পরও তারা এটা করেছিলো। আবার যদি বিএনপি সেই পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। আমরা জঙ্গি-সন্ত্রাস দমন করেছি। বিএনপি স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করলে আমরা কঠোর হাতে দমন করবো।এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি নামক রাজনৈতিক দল নিয়ে ভাববার কিছু নেই। আমরা দেশের উন্নয়ন নিয়ে, জনগণের উন্নয়ন নিয়ে ভাবছি। সংবিধান অনুযায়ি যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, সেই পদ্ধতিতেই যথা সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নিরপেক্ষ সরকার বা তত্ত্বাবধায় সরকার এটা সংবিধান থেকে বাতিল হয়ে গেছে।তিনি বলেন, নির্বাচন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ হবে। এ নিয়ে কোন দল আন্দোলন করবে, কি করবে না- সেটা তাদের ব্যাপার। যে দলের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা নেই, সেই দলের আন্দোলনে জনগণ সমর্থন দেবে না। তবে, কেউ যদি আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে সেটা সহ্য করা হবে না। শান্তি-শৃঙ্খলা ব্যাহত করার চেষ্টা করলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী কঠোরভাবে দমন করবে।