বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. নুর মোহাম্মদ স্মৃতির আকাশে নক্ষত্রোজ্জ্বল এক নাম

বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. নুর মোহাম্মদ স্মৃতির আকাশে নক্ষত্রোজ্জ্বল এক নাম

সমাচার রিপোর্ট : সততা আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবীত সাহসী এক বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম ডা. নুর মোহাম্মদ। তিনি ছিলেন একাধারে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, স্বনামধন্য চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ ও একজন সফল সমাজ সংস্কারক। সামাজিক অন্যায় – অনাচার আর নানা অসঙ্গতির বিপক্ষে তিনি লড়ে গেছেন আজীবন।
মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি ছিলেন এক আপোষহীন সৈনিক। বুকভরা সাহস নিয়ে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে প্রতিটি ক্রান্তিকালে। ছাত্রজীবনে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, ১৯৬৯ -এর গণ-অভ্যুত্থান সর্বোপরি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ জাতির বৃহত্তর স্বার্থে দেশ-মাতৃকার ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়তে তিনি কখনোই পিছনে ফিরে তাকাননি। নিজ পরিবার, এমন কি নিজের জীবনের মায়াও তিনি উপেক্ষা করেছেন অবলীলায়। তিনি আজীবন গণ-মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করেছেন। এজন্য তাকে সামরিক জান্তাসহ বিএনপি সরকারের রোষানলে পড়ে বহুবার জেল-জলুম সহ্য করতে হয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত নির্মোহ, উদার ও ক্ষমাশীল মানুষটিকে কখনোই আচ্ছন্ন করতে পারেনি ক্ষমতার হাতছানি। একইভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে তিনি ছিলেন আপোষহীন। শত জেল-জুলুম নির্যাতন, শাসকের রক্তচক্ষু, আর মৃত্যুভয়– কোনো কিছুই তাকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিন্দু মাত্র বিচ্যুত করতে পারেনি। তিনি বঙ্গবন্ধুর গর্বিত সৈনিক হিসেবেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। লাখো মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় তিনি সিক্ত হয়েছেন পরম মমতায়। তিনি চির নিদ্রায় শায়িত রয়েছেন রামগঞ্জের পল্লবঘেরা ছায়া সুনিবিড় জন্মভূমি, স্নিগ্ধশীতল-মায়াভরা প্রিয় সেই রসুলপুর গ্রামে।
কিছু কিছু মৃত্যু মানুষকে কাঁদায়,গভীর বেদনায় উথলে উঠে হৃদয়। ঠিক তেমনই এক দেশপ্রেমিক, অকৃত্রিম ভালো মানুষ ডা: নুর মোহাম্মদের মৃত্যু কেরানীগঞ্জ ও রামগঞ্জের শত-সহস্র মানুষকে শোকাহত করেছে।
কালজয়ী ও গণ-মানুষের হৃদয় স্পর্শকারী এই বীর সেনানীর মৃত্যু গোটা জনপদে ফেলে শোকের ঘন গভীর ছায়া। মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনাই এই লেখার মূল উদ্দেশ্য।
এ প্রসঙ্গে এখানে ডা. নুর মোহাম্মদের জীবন ও কর্ম-কৃতীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা বাঞ্ছনীয়।
গরীবের বন্ধু খ্যাত ডা. নুর মোহাম্মদ ১৯৩০ সালের ২৭ মে লক্ষ্মিপুর জেলার রামগঞ্জ থানার রসুলপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা হাজী আশরাফ উল্লাহ ও মায়ের নাম জহুরা খাতুন। তিনি কেরানীগঞ্জের কালিন্দী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে মেট্রিকুলেশন পাস করেন। পরবর্তীতে ন্যাশনাল মেডিক্যাল থেকে এল এম এফ পাস করেন। তিনি পড়াশুনার পাশাপাশি পল্লী চিকিৎসক হিসেবে কাজ করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, তিনি ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ১৯৭০ এর নির্বাচনে কেরানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা হিসেবে নির্বাচনে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর মনোনীত প্রার্থী বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক হামিদুর রহমানকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করতে জনমত গঠনে তিনি অন্যতম প্রধান সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন । তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পালন করেন অনন্যসাধারণ ভূমিকা। মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে বাঘৈর গ্রামের নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেন। পরবর্তীতে ডা. নুর মোহাম্মদের সহায়তায় সুলতান উদ্দিন আহমেদ রাজা ও কমান্ডার নূরুল ইসলামের নেতৃত্বে বাঘৈর গ্রামে আরো তিনটি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এ ব্যাপারে ডা: নুর মোহাম্মদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
ডা: নুর মোহাম্মদের রাজনৈতিক জীবন; সেও বর্ণময় ও হীরোকোজ্জ্বল।
ডা: নুর মোহাম্মদ আজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে লালন করে নিঃস্বার্থভাবে ত্যাগের রাজনীতি করেছেন। তিনি কখনোই ভোগের রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন না।
১৯৯৬ সালে ডা: নুর মোহাম্মদ সর্বসম্মতিক্রমে কেরানীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘ দিন কেরানীগঞ্জ উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মানিত সদস্যও ছিলেন।
দেশের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। অন্যদিকে চিকিৎসক হিসেবে তিনি সত্যিকার অর্থেই ছিলেন জনগণের সেবক। বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া যেন তাঁর নেশায় পরিনত হয়েছিল। একাকার হয়ে গিয়েছিল তাঁর নেশা ও পেশা।
তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে হাজী নুর মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন নামে একটি সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্যই হলো মানুষ ও মানবতার সেবা।
শিক্ষা অনুরাগী হিসাবেও ডা. নুরের রয়েছে অনবদ্য অবদান। নিজস্ব অর্থায়নে তিনি বাঘৈর উচ্চ বিদ্যালয়ে বহুতল ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট একতলা একটি ভবন নির্মাণ করেন। তিনি দীর্ঘ দিন এই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন।
এই মহান মানুষটি আজ বেঁচে না থাকলেও তিনি তাঁর উত্তরসূরীদের জন্যে রেখে গেছেন মানব সেবার মহান শিক্ষা। পরিবারের সদস্যরাও তাদের মনিষীতুল্য অভিভাবকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছেন যথারীতি।
মরহুমের স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর পরিবার কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া ইউনিয়নে চরচামান্ডায় একটি উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই লক্ষ্যে নুর মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিশাল আয়তনের জমিও ক্রয় করা হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, হাজী নুর মোহাম্মদের ছোট ভাই নজরুল ইসলামও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা । তিনি ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে ডাবল এম এ পাস করেন। স্বাধীনতার পরবর্তীতে রামগঞ্জ উপজেলার লামচর ইউনিয়নের রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হন। তিনি দীর্ঘ দিন রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ডা: নুর মোহাম্মদের পুরো পরিবারটিই ঐতিহ্যগতভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে লালিত।
কেরানীগঞ্জ গণহত্যা পরবর্তী ডা: নুর মোহাম্মদের মানবিক ভূমিকার সেই স্মৃতিও ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ১৯৭১ সালে ২রা এপ্রিল কেরানীগঞ্জে গণহত্যা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধা ডা. নুর মোহাম্মদ আহতদের চিকিৎসাসেবা, শহীদদের দাফন, আশ্রিতদের খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করে এক অনন্য মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। কেরানীগঞ্জের গণহত্যায় হাজার হাজার অসহায় আর নিরন্ন মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ আহত মানুষকে উদ্ধার করে বাঘৈর ক্যাম্পে নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন ডা: নুর মোহাম্মদ। তাদের থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা করেন তিনি। নিহতদের সৎকারের ব্যবস্থা করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেককে ঢাকা মেডিকেল ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করেন। এখানে আরেকটি মানবিক দৃষ্টান্ত উল্লেখ না করলেই নয়। ঘটনাটি হলো; শাঁখারী বাজারের আলোচিত সুন্দরী তরুণী সাগরিকা বুকে গুলিবিদ্ধ হন। ডা: নুর মোহাম্মদ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করেন। পরে সুস্থ হলে তার মা-বাবার কাছে সাগরিকাকে নিরাপদে ফিরিয়ে দেন ডা: নুর মোহাম্মদ।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু ডা: নুর মোহাম্মদের সততায় মুগ্ধ হয়ে তাকে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত করেন। তিনি দুই হাতে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করেছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা গোয়েন্দা ইউনিটের দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করেছেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের শেষের দিকে বাঘৈরে পাকিস্তানীদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ চলে সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত। বিরামহীন এই যুদ্ধে ভারী অস্ত্রের ব্যবহার হয়। বৃষ্টির মত ভারী মর্টার সেল নিক্ষেপ করা হয়। পরবর্তীতে সৈন্য সংখ্যা কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে পাকিস্তানী সেনারা বাঘৈর গ্রামে হামলা করে। তারা ডাঃ নুর মোহাম্মদের বাড়িসহ এই অঞ্চলের বহু বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেয়। বহু সম্পদ ধ্বংস করে। সেই যুদ্ধে ডা: নুর মোহাম্মদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
ডা: নুর মোহাম্মদের নেতৃত্বে ৯ পাকিস্তানী সেনাকে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনাটিও ইতিহাসের প্রয়োজনে এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার নুর মোহাম্মদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সর্ব প্রথম বাঘৈর গ্রামে নিরস্ত্র জনতার হাতে পাওয়ান নামে এক রাজাকারসহ ৯ জন পাকিস্তানী সশস্ত্র সেনা নিহত হয়। এই সময় পাকিস্তানী সেনাদের গুলিতে বাঘৈর গ্রামের মন্টু সাহা ও দীঘেন্দ্র মন্ডল নামে দুইজন সাহসী যুবক শহীদ হন। গুলিবিদ্ধ হন অন্তত অর্ধ-শতাধিক নিরীহ মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ শুভাঢ্যার কুখ্যাত রাজাকার পাওয়ান পাকিস্তানী একদল সেনাকে বাঘৈর গ্রামে নিয়ে আসে ডাকাতি, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের উদ্দেশ্যে। বিষয়টি টের পেয়ে ডা: নুর মোহাম্মদ এলাকার মানুষদের সংগঠিত করে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাকিস্তানীদের বহনকারী নৌকায় অতর্কিত হামলা চালায়। তারা কাপড়ের কুন্ডুলি পাকিয়ে কেরোসিনের ড্রামে চুবিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং তা নৌকার ভিতর নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে ডা: নুর মোহাম্মদ পানির নিচে ডুব দিয়ে শাবলের সাহায্যে নৌকার তলা ছিদ্র করে দেয়। এতে পাক আর্মিরা এলোপাতাড়িভাবে গুলি বর্ষণ করতে থাকে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মন্টু সাহা ও দীঘেন্দ্র মন্ডল ঘটনা স্থালেই শহীদ হন। এই ঘটনা দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। পাকিস্তানী আর্মিদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি করে। যার ফলে ১৯৭১ সালের ২রা এপ্রিল কেরানীগঞ্জে গণহত্যায় মেতে উঠে পাকিস্তানী সেনারা। তারা হাজার হাজার বাড়ি-ঘরে অগ্নি সংযোগ ও লুটপাট চালায়। গণহত্যা পরবর্তী সময়ে টনকে টন গুলির খোসা উদ্ধার করা হয় কেরানীগঞ্জ থেকে। এই হামলায় পাঁচ সহস্রাধিক মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। যার অধিকাংশই ছিলেন অসহায় নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।
কার্যত বাঘৈর গ্রামে ৯ সেনা হত্যার ঘটনাটি ডা: নুর মোহাম্মদ ও বাঘৈর গ্রামকে দেশে-বিদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে। সারাদেশে রটে যায় এই ঘটনা। আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমেও অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে ঠাঁই পায় এই দুঃসাহসিক ঘটনাটি।
সৈয়দপুর ঘাটের যুদ্ধ: সৈয়দপুর ঘাটে দুই দিন ব্যাপী পাকিস্তানী দুই সহস্রাধিক সেনার সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরামহীন যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে বাঘৈর ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা সুলতান উদ্দিন আহমেদ রাজা, নুর ইসলাম কমান্ডার ও ডা: নুর মোহাম্মদের নেতৃত্বে অংশ নেয়। পাকিস্তানী সেনাদের পরাস্ত করে তাদের অস্ত্র ও স্পীডবোট ছিনিয়ে নিয়ে আসে মুক্তিযোদ্ধারা। ৭১-এর বীর সেনানী মোস্তফা মহসীন মন্টুর নেতৃত্বে মুজিব বাহিনীর বিরাট একটি অংশ সৈয়দপুর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে।
জিনজিরা পিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পে রাতে মুক্তিযোদ্ধারা হামলা চালিয়ে পাকসেনাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। পরবর্তীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসীন মন্টুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা কেরানীগঞ্জ থানায় হামলা করে পুলিশের অস্ত্র ও গোলা বারুদ ছিনিয়ে নেয়। তাদের আত্মসমর্পনে বাধ্য করা হয়। এই অপারেশনেও ডা: নুর মোহাম্মদের সক্রিয় ভূমিকা ছিলো।
হাসনাবাদ বিদ্যুৎ গ্রীডে হামলা : হাসনাবাদ বিদ্যুৎ গ্রীড লাইন শক্তিশালী বিস্ফোরকের মাধ্যমে উড়িয়ে দিয়ে সারা কেরানীগঞ্জে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ করে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। এটি মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় মাপের অপারেশন ছিলো। এছাড়াও পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা চোরা-গুপ্তা হামলা চালায়। সুত্রাপুর-লালকুঠি-শাখারী বাজারসহ পুরান ঢাকায় একাধিক সফল গেরিলা হামলা পরিচালনা করেন ডা: নুর মোহাম্মদ। এতে পাকিস্তানী বাহিনীর মনে-ভীতির সঞ্চার হয়। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের মনবল চাঙ্গা হয়ে উঠে।
কুখ্যাত সামাদ রাজাকারের বাড়িতে হামলা :
কুখ্যাত সামাদ রাজাকারের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা হামলা চালিয়ে তাকে না পেয়ে তার বড় ছেলেকে গুলি করে হত্যা করে। এই রাজাকার ১৯৭১ সালে বহু বাড়ি-ঘর লুটপাসহ অসংখ্য নারী নির্যাতন করেছে। শুভাঢ্যা মঠ বাড়িতে (বিহারী বাড়ি) গ্রেনেড চার্জ করে পুরো বাড়ি উড়িয়ে দেয়া হয়। এই বাড়িতে বসে পাকিস্তানী সেনারা মানুষ হত্যার ছক আকঁতো। জিনজিরা ও মান্দাইলের একাধিক রাজাকারের বাড়ি-ঘরে মুক্তিযোদ্ধারা আগুন ধরিয়ে দেয়।
ডা: নুর মোহাম্মদের পারিবারিক জীবন :
ডাঃ নুর মোহাম্মদ পারিবাবিক জীবনে একজন গর্বিত পিতা। তিনি ৪ পুত্র ও ২ কন্যার জনক। তাঁর তৃতীয় পুত্র শাহীন আহমেদ পর পর ৩ বার কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি দুই বার সারা বাংলাদেশে শ্রেষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেছেন। তিনি বর্তমানে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
জ্যোষ্ঠপুত্র ফারুক আহমেদ একজন সফল ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। সেলিম আহমেদ দীর্ঘ দিন জাপানে ছিলেন। এখন ব্যবসা ও রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ছোট ছেলে শিপু আহমেদ সক্রিয়ভাবে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত। দুই বোনের মধ্যে বড় বোন শাহানাজ আক্তার লাকি ও ছোট বোন তাহমিনা রহমান লিপি গৃহিনী।
মহিয়সী এক মা হাজী মনোয়ারা বেগম :
মমতাময়ী ও মহিয়সী এক মা হাজী মনোয়ারা বেগম সারাটা জীবন ডা: নুর মোহাম্মদের পরিবার ও আওয়ামী রাজনীতির জন্য চরম ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি যে, পারজোয়ারের আধুনিকা মেয়ে তা তিনি ভুলেই গিয়ে ছিলেন। জাতির মাতা বেগম ফজিলাতুন নেসার ত্যাগ সহায়তায় শেখ মুজিব যেমন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুতে পরিণত হয়ে ছিলেন, ঠিক তেমনি মনোয়ারা বেগমের সহায়তা ও ত্যাগের মহিমায় নুরু ডা: থেকে তিনি ডা: নুর মোহাম্মদে পরিণত হয়েছেন। প্রত্যন্ত বাঘৈর গ্রাম থেকে গোটা কেরানীগঞ্জের মানুষের হৃদয় জয় করে ছিলেন রামগঞ্জ থেকে উঠে আসা এক দিনের এই দুরন্ত কিশোর। এসবের নেপথ্যে যিনি রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিবার, দলীয় নেতা-কর্মী সামলেছেন, হাসি-মুখে শত শত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন, অগণিত মানুষের জন্য খাবার রান্না করে তা পরিবেশনও করেছেন নিজ হাতে। তিনি হচ্ছেন ডাক্তার সাহেবের সহধর্মিনী আরেক মহিয়সী নারী হাজী মনোয়ারা বেগম। তার অনবদ্য অবদানের কথা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ না হলেও এ অঞ্চলের মানুষ তাঁকে পরম শ্রদ্ধায় মনে রাখবে বহুকাল।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: নুর মোহাম্মদ জীবদ্দশায় প্রায়ই বলতেন, “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম । আবার তাঁর আহ্বানেই যুদ্ধের পর অস্ত্র জমা দিয়েছি। কিন্তু ট্রেনিং জমা দেইনি। তাই অন্যায় অবিচার আর জুলুম দেখলেই শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠে। প্রতিবাদের নেশাটা রক্তে মিশে গেছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের যুদ্ধ তাই আজীবন চালিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।”
বাস্তব জীবনে ঘটে ছিলোও তা-ই। স্বাধীনতার পর কেরানীগঞ্জের চর-চরাঞ্চলে যখন একাধিক ডাকাত দল মাথা চাড়া দিয়ে উঠে, তাদের নির্মম অত্যাচারে মানুষ যখন দিশেহারা; ঠিক তখনই ডা. নুর মোহাম্মদ আলোক বর্তিকা হয়ে প্রোজ্জলিত হয়ে উঠেন। তিনি বাঘৈর, কদমপুর, পাইনারচর, খাস কান্দিরচর চরগলগলিয়াসহ এই অঞ্চলের মানুষকে সংগঠিত করেন। তাদের সহায়তায় তিনি কুখ্যাত দিলা ডাকাত ও কটা ডাকাতসহ এই অঞ্চলের অসংখ্য অপরাধী চক্রকে প্রশাসনের সহায়তায় সমূলে উৎপাটিত করেন। গ্রামে গ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি রাজনীতি বা মুক্তিযুদ্ধে বড় কোন খেতাব বা উপাধি না পেলেও সামাজিকভাবে ডা: নুর মোহাম্মদ লাখো মানুষের হৃদয়ে ভালবাসা আর বিশ্বাসের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। পল্লী চিকিৎসক হিসেবে তিনি আকাশ চুম্বি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। চিকিৎসা সেবায় তার হাত যশ ছিলো অপরিসীম। মানুষ যখন দারিদ্র আর কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে ‘পড়াপানি’ আর ‘তেল পড়ার’ কাছে নিজেদের ‘সপে’ দিয়ে ছিলেন, তখনই তিনি আশীর্বাদ হয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘরে ঘরে গিয়ে আধুনিক চিকিৎসা সেবার আলো ছড়িয়ে দিয়ে ছিলেন। বহু মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে বাঁচিয়েছেন। বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণ করেছেন। নিজ খরচে সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। বহু প্রসূতি মায়ের জীবন বাঁচিয়েছেন। চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন অগণিত রোগাক্রান্ত মানুষকে। ডা: নুর মোহাম্মদ এ অঞ্চলের গণ-মনুষের কাছে নুরু ডাক্তার নামে সুপরিচিত। শ্রদ্ধা আর ভালবাসা মাখা এই নামটি এখন ছোট-বড় সকলের হৃদয়ের মণিকোঠায় ঠাঁই পেয়েছে। তাইতো লাখো মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় সিক্ত হয়েছিলো ডাঃ নুর মোহাম্মদের ফুলে ফুলে সুরভিত কফিনটি।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ডাঃ নূর মোহাম্মদের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ ও কিছু স্মৃতি :
কেরাণীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের বাবা প্রবীণ রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা.নূর মোহাম্মদের মৃত্যুতে কেরানীগঞ্জে নেমে এসেছিলো শোকের গভীর ছায়া। ভারতের দিল্লীতে মেডান্ডা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৫ আগস্ট রবিবার সকাল সাড়ে দশটায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহে……. রাজিউন)।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। তিনি স্ত্রী, ৪ পুত্র, দুই কন্যা ও নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের একনিষ্ঠ সৈনিক ডা. নুর মোহাম্মদ বার্ধক্য জনিত কারণে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন।
পরে গত ৩ জুলাই রাতে তার মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ সমস্যা দেখা দিলে ৪ জুলাই তাঁকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ভারতের দিল্লীর মেডান্ডা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এই ত্যাগসুন্দর মহান পুরুষের মৃত্যুতে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ যেমন শোকসন্তপ্ত হয়ে পড়েন, তেমনই রাজনৈতিক অঙ্গনেও নেমে এসেছিলো বিষন্নতার কালোছায়া।
ঢাকা-৩ আসনের সংসদ সদস্য, বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুসহ দলমত নির্বিশেষে অনেক স্বনামধন্য কৃতি ব্যক্তিত্ব তাৎক্ষণিক বিবৃতি দিয়ে গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তাঁদের মধ্যে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও কেরানীগঞ্জের সাবেক এমপি মোস্তফা মহসিন মন্টু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও কেরানীগঞ্জের সাবেক এমপি আমান উল্লাহ আমান প্রমুখ।
এছাড়া তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তোপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান, কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিত দেবনাথ, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব ম.ই মামুন, কেরানীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ শাজাহান, কেরানীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোঃ সালাউদ্দিনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার সর্বস্তরের মানুষ ।
যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কেরানীগঞ্জ উপজেলার তেঘরিয়া ইউনিয়নের বাঘৈর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ নুর মোহাম্মদের জানাযা গত ১৮ আগস্ট মঙ্গলবার সম্পন্ন হয়।
বাঘৈর ঈদগাহ ময়দানে প্রথম জানাযা ও পরে উপজেলার তেঘরিয়া ইউনিয়নের বেয়ারা এলাকায় অধ্যাপক হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে তাঁর দ্বিতীয় নামাজে জানাযা সম্পন্ন হয়।
জানাযার আগে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ এই বীরের প্রতি গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ঢাকা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ বিপু।
কেরানীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান মরহুমের ছেলে শাহীন আহমেদ বলেন, আমার বাবা জীবনে কখনো অভিমান করেনি, কারো অমঙ্গল কামনা করেনি। মানুষের বিপদের সংবাদ শুনার পর কখনো যাকে থামিয়ে রাখা যেত না, তিনি হচ্ছেন আমার বাবা। আমার বাবা চলার পথে কারো সাথে যদি কোন মনমালিন্য থাকে তবে বাবার পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাই, কারো সাথে যদি কোন লেনদেন থাকে আমাকে জানাবেন, আমি তা পরিশোধ করে দিব। আমার বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমরা চার ভাই, যেন বাবার আদর্শ নিয়ে বাকিটা জীবন কাটাতে পারি। আমরা আপনাদের সেবায় কাজ করতে চাই, কেরানীগঞ্জের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।
বীরের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি :
জানাযা শেষে ডা: নুর মোহাম্মদের কফিনে ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলামের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, কেরানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবকলীগ, ছাত্রলীগ, কেরানীগঞ্জ প্রেসক্লাব, কেরানীগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ঔষধ ব্যবসায়ী সমিতি, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ, ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়। শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে তার লাশ দাফনের উদ্দেশ্যে গ্রামের বাড়ী লক্ষ্মিপুর জেলার রামগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়।
জানাযার আগে ঐতিহ্যবাহী ডাক্তার বাড়ি থেকে লাশ বের করা হলে শত শত মানুষ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পথে পথে অগণিত মানুষ ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের এই বীরের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। বাঘৈর আলিয়াপাড়া ঈদগাহ মাঠে জানাযায়, হাজার হাজার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। পরে সকাল ১১ টায় লাশ নিয়ে যাওয়া হয় অধ্যাপক হামিদুর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে । সেখানে, লাখো জনতার ঢল নামে। স্টেডিয়াম পরিপূর্ণ হয়ে নামাজের সারি ছড়িয়ে পড়ে রাস্তায়। শত শত গাড়ির চাপে পুলিশ প্রশাসনকে বেগতিক অবস্থায় পড়তে হয়। জানাযা শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ নুর মোহাম্মদের লাশ তার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হয়। এ সময় শতাধিক গাড়ি বহর ছুটে চলে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের পিছনে। শোকার্ত মানুষ হাত নেড়ে ফুল আর চোখের জলে একাত্তরের এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শেষ বিদায় জানান। পরে লক্ষ্মিপুর জেলার রামগঞ্জের রসুলপুর নিজ গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়। তিনি লাখো মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন প্রিয় জন্ম ভূমির মাটিতে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

ফ্যাসিবাদের কারখানা ছিল মাদারীপুর: নাছির উদ্দিন নাছির

মাদকের টাকার জন্য মা’কে হত্যা: নিজেই পুলিশের হাতে ধরা দিলেন ছেলে