অদৃশ্য আতঙ্কে থমকে আছে ‘জীবন চাকা’

অদৃশ্য আতঙ্কে থমকে আছে ‘জীবন চাকা’
নিজস্ব প্রতিবেদক: অদৃশ্য করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে প্রতিনিয়তই। এর মধ্যেও জীবন চালিয়ে নিতে ধাপে ধাপে নানা কর্মকৌশল নির্ধারণ করেন সংশ্লিষ্টরা।স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ আরোপ করা হয় নানা বিধিনিষেধ। তাতেও বছর ঘুরতেই আবারো ঊর্ধ্বমুখী করোনার সংক্রমণ।আর এ করোনার সংক্রমণের সঙ্গে প্রথমেই বিধিনিষেধ নেমে আসে গণপরিবহন চলাচলে। গত দেড় বছরে কয়েক দফা বন্ধ করা হয় গণপরিবহন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বেশ কিছুদিন চলাচল করলেও বর্তমানে আবারো বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস।গণপরিবহন কেন্দ্রিক বিপুল সংখ্যক চালক-শ্রমিক আবারো বেকার হয়ে পড়েছেন। টার্মিনালগুলোতে কিছু সংখ্যক শ্রমিক বাস পাহারা দিয়েই সময় কাটাচ্ছেন। আয় বন্ধ থাকায় সংসার চালানো দূরের হিসাব, প্রতিদিনকার নিজের খাওয়ার টাকাই যোগার অনিশ্চিত। বাসের চাকা ঘুরলে যাদের জীবন চলে, বাস বন্ধ থাকায় যেন তাদের জীবন চাকাই থমকে গেছে।শনিবার (২৬ জুন) সকাল থেকে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে চিরচেনা কোলাহল চোখে পড়েনি। যাত্রীদের উদ্দেশ্য করে হাঁকডাক নেই, সারি সারি থামিয়ে রাখা হয়েছে বাস। টার্মিনালের ভেতরে কিছু দোকান খোলা রয়েছে যেখানে গাড়ির শ্রমিকরা বসে আড্ডা দিয়ে সময় পার করছেন।আড্ডার মধ্যেই তাদের কেমন আছেন প্রশ্ন করতেই ‘কাজ নাই, ইনকামও নাই। এবার বুইঝা নেন কেমন আছি’।ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে চলাচলরত নিরালা পরিবহনের বেশ কয়েকটি বাস দেখা-শোনার জন্য টার্মিনালে শুয়ে-বসেই দিন কাটছে রাসেলের। তিনি জানান, বন্ধ থাকলেও গাড়ি পাহারা দিতে কাউকে না কাউকে থাকতে হয়। গাড়ির চালক বাড়ি চলে গেছেন, মালিকরা যার যার জায়গাতেই আছেন। কিন্তু শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে গাড়ির সঙ্গেই থাকছেন।রাসেল বলেন, এ যে গাড়ি বন্ধ, তাই ইনকামও নাই। আমার সংসার কেমনে চলবে কেউ চিন্তা করছে? আমি না হয় খাইয়া-না খাইয়া দিন কাটায়ে দিলাম। কিন্তু বাড়িতে বাপ-মা আছে তারা কি খাইবো? এখন এমন একটা অবস্থায় আটকে আছি অন্য কোনো কাজ যে করমু তারও সুযোগ নাই।আরেক বাস শ্রমিক সুজন মিয়া বলেন, গাড়ি পাহারা দিতাছি, মালিক ২-১শ’ কইরা টেকা দেয় মন চাইলে। ওই টেকা দিয়া তিনবেলা খাইতে পারি না। এমন দুই-এক দিন হইলে হয়, মাসের পর মাস এমনে বাইচা থাকা সম্ভব?সেবা পরিবহনের শ্রমিক নুরুদ্দিন বলেন, করোনায় কিছু পারুক আর না পারুক সরকার কথায় কথায় গাড়ি বন্ধ কইরা দেয়। কিছু পোলাপাইন ঢাকার লোকাল গাড়িতে কাম কইরা আয়-রোজগার করলেও শুনতেছি আগামী সোমবার (২৮ জুন) থেইকা ওইগাড়িও বন্ধ ইয়া যাইবো। গাড়ি বন্ধ কইরা কি করোনা আটকাইতে পারছে?গত ঈদ গেল বইসা বইসা, আরেকটা ঈদ আইতাছে আবার ‘লকডাউন’ শুরু হইয়া গেল। আমার মতো মাষের ঈদ না হ না করলাম, তিনবেলা না খাইলাম। বউ-বাচ্চা নিয়া অন্তত একবেলা খাইয়া বাঁইচা থাকারই রাস্তা দেখতেছি না।মালিক পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা দেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে শ্রমিকরা জানান, কিছু কিছু পরিবহনের শ্রমিককে নামমাত্র সহায়তা দিচ্ছে, তাও সেটা চাহিদার তুলনায় খুবই নগণ্য। বেশিরভাগ শ্রমিকরাই খেয়ে-না খেয়ে কোনোভাবে দিন কাটাচ্ছেন। চালকদের কেউ কেউ প্রয়োজন মেটাতে হয়তো মালবাহী যানবাহন চালাচ্ছেন, তবে প্রায় সব শ্রমিকরাই বেকার জীবন-যাপন করছেন।করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে বাড়ানো হবে লকডাউনও। সাত দিন বলা হলেও এটা বাড়তে বাড়তে মাসও পেরোতে পারে। এ অবস্থায় বাসচালক-শ্রমিকরা জানেন না আবার কবে গাড়ি পথে নামবে। অনিশ্চয়তাতেই আটকে রয়েছে তাদের স্বাভাবিক জীবন।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

ঈদগাঁও–ঈদগড় সড়কে গুম ও ডাকাতি দমনে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি

শিবচরে মাদক রোধে ইউএনও’র কাছে স্মারকলিপি দিল উপজেলা বিএনপি