১১ মাসে ৪৪৮৩৪ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম

১১ মাসে ৪৪৮৩৪ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১২ মাসে মোট রাজস্ব আয় হয়েছিল ৪১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। আর চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসেই আয় হয়েছে ৪৪ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা।
অর্থবছরের এক মাস বাকি থাকতেই গতবারের মোট আয়কে ছাড়িয়ে গেলো চট্টগ্রাম কাস্টমস।  রাজস্ব আয়ে এককভাবে শীর্ষে থাকা চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।  কেবল মোট রাজস্ব আয়েই নয়, গত অর্থবছরের ১১ মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ২০ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। চলতি জুন মাস শেষ হলে এই প্রবৃদ্ধি আরো কিছুটা বাড়তে পারে। করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের মধ্যেই রাজস্ব আয়ে বড় অগ্রগতি অর্জন করলো চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, বিগত অর্থবছরের মে মাসের তুলনায় এই অর্থবছরে আমরা ২০ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। কোভিড-১৯ মহামারির কঠিন সময়ে যখন সবকিছু স্থবির ছিল, সেই চ্যালেঞ্জের মধ্যে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির বদলে আমরা উল্টো বাড়তি রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। জুন মাস শেষে আমরা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলেও গত অর্থবছরের চেয়ে ২০ শতাংশ বা এর কিছু বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে।
রাজস্ব আদায়, ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন, রাজস্ব ফাঁকি রোধ, চোরাচালান বন্ধ, দ্রুত পণ্য শুল্কায়ন ও কাস্টমসের কাজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চৌকস এই কর্মকর্তা বলেন, রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি আমি কাস্টমসের কাজে স্বচ্ছতা আনা, অনিয়ম রোধে কঠোর হয়েছিলাম।কাস্টমসের হিসাবে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ৬৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। সেই হিসাবে মে মাস পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৪৪ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। করোনা মহামারির মধ্যেও এ পর্যন্ত আসাটাও অনেক বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি বছরই লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয় গত বছরের আদায়ের ওপর। করোনা মহামারির সময় বিবেচনায় রাখলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনেকটা চ্যালেঞ্জিং বলা যায়।তারা বলছেন, প্রতি বছর বাজেটে শুল্কহারে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। উচ্চ শুল্কের যে পণ্য আগে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসত এখন সেটি আসছে না। অন্য বন্দর দিয়ে ছাড় হচ্ছে। আর চট্টগ্রাম কাস্টমসে রাজস্ব আয়ের প্রধান খাত ছিল জ্বালানি তেল, গাড়ি আমদানি ও ইলেকট্রনিকস। ওই তিনটি খাতেই আমদানি অনেক কমেছে। এছাড়া দেশে বিপুল ভোগ্যপণ্য আমদানি হলেও সেই পণ্যে শুল্কহার একেবারে নেই বললেই চলে। এত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বর্তমান রাজস্ব আয় ও প্রবৃদ্ধি ভালোই বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।    চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলছেন, কোভিডের ধাক্কা সব খাতেই পড়েছে। ফলে আমদানি কমেছে, রপ্তানিও কম ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি কোভিড মহামারির চ্যালেঞ্জের মধ্যেই শিল্প-কারখানা খুলে দেওয়ার সাহস না দেখাতেন তাহলে রাজস্ব আয় তো দূরে থাক; পুরো অর্থনীতি বিপর্যস্ত হতো। মানুষ চাকরিহারা হতো, অনাহারেই থাকতে হতো।

তার মতে, এখন যে গতিতে আমরা এগোচ্ছি সেটি ধরে রাখাই আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ব্যবসা চললেই তো পণ্য আমদানি হবে, কারখানা ঘুরবে, বন্দর সচল হবে। রাজস্বও বাড়বে। আর অযৌক্তিক রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা দিলে তা পূরণে শেষ পর্যন্ত আমাদেরই চাপে থাকতে হয়। কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের বড় নির্ভরতা হচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। গত অর্থবছর ৪১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকার রাজস্ব জমা দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। এছাড়া প্রতি বছর অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব যোগান দিচ্ছে এই কাস্টমস। এরপরও ৪৮ শতাংশ কম লোকবল দিয়ে চলছে রাজস্ব আয়ে এককভাবে শীর্ষে থাকা এই হাউস। গত ১ জুনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে মঞ্জুরি হওয়া ১২৪৮টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছে ৬৪৭টি। শূন্যপদ ৬০১টি। অনুমোদিত পদের তুলনায় শূন্যপদের হার ৪৮ দশমিক ১৬ শতাংশ।

জনবল কাঠামো অনুযায়ী, প্রথম শেণির ২১০ জনবলের বিপরীতে শূন্যপদ ৯৪টি, দ্বিতীয় শ্রেণির ৪৯৭ জনবলের বিপরীতে শূন্যপদ ২৩১টি, তৃতীয় শ্রেণির ৪২৩ জনবলের বিপরীতে শূন্যপদ ২৫৪টি এবং চতুর্থ শ্রেণির ১১৮ জনবলের বিপরীতে শূন্যপদ আছে ২২টি।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন