২০১০ সালে হাতে নেওয়া হয় ‘বাংলাদেশের নদী ড্রেজিংয়ের জন্য ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ক্রয়’ প্রকল্প।
জানা গেছে, প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় বিশেষভাবে তৃতীয়বারের জন্য সংশোধন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপপ্রধান এ কে এম আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের অনেক কাজ বাকি আছে। প্রকল্পের কিছু কাজ কমিয়ে তৃতীয়বার সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু তৃতীয়বার প্রকল্প সংশোধন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণে তা ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের অফিসে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশ পেলেই আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো। ’বাপাউবো সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজিং সক্ষমতা বার্ষিক ৫০ লাখ ঘনমিটার থেকে বৃদ্ধি করে ১৭০ লাখ ঘনমিটার পর্যন্ত করার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি জুলাই ২০১০ হতে জুন ২০১২ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করা হয়েছিলো। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম ছিল ৭ সেট ৬৫০ মিলি মিটার ডিসচার্জ ডায়ার কাটার সাকশন ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি কেনা, ৪ সেট ৫০০ মিলি মিটার ডিসচার্জ ডায়ার কাটার সাকশন ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি কেনা ও ১০ সেট ২৫০ মিলি মিটার ডিসচার্জ ডায়ার কাটার সাকশন ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি কেনা। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ৩ সেট ১০০০ অশ্বশক্তি টাগ, ৫ সেট অ্যামফিবিয়াস এক্সাভেটর, ৩ মে.টন ক্যাপাসিটির ২টি ফর্ক লিফটার, ৫ মে.টন ক্যাপাসিটির ১টি ফর্ক লিফটার কেনা হবে। তৃতীয়বার সংশোধন প্রস্তাবে ২ সেট ৫০০ মিলি মিটার ডিসচার্জ ডায়ার কাটার সাকশন ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং ১০ সেট ২৫০ মিঃমিঃ ডিসচার্জ ডায়ার কাটার সাকশন ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ক্রয় বাদ দেওয়া হয়েছে।বাপাউবো সূত্র জানায়, প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে সংগৃহীত ৪টি ২৬ ইঞ্চি ড্রেজারের পরিচালনা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে জরুরি ভিত্তিতে স্পেয়ার ও পাইপলাইন সংগ্রহ এবং ক্রয় প্রক্রিয়ার জটিলতা তৈরি হয়েছে। ফলে ১০টি ২৫০ কাটার সাকলান ড্রেজার সংগ্রহের প্রস্তাব বাদ দেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
সরকার দেশের ১৮টি মাঝারি আকারের নদীতে স্বল্পমেয়াদী (৫ বছর) এবং মধ্যমেয়াদী (১০ বছর) এবং গঙ্গা, বহ্মপুত্র ও মেঘনাসহ সকল বৃহৎ নদ-নদীগুলিতে হাজার কিলোমিটার ব্যাপী দীর্ঘ মেয়াদী (১৫ বছর) ক্যাপিটাল ড্রেজিং করার পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজিংয়ের সক্ষমতা বার্ষিক ৫০ লাখ ঘনমিটার। কিন্তু প্রস্তাবিত ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং মেইনটেনেন্স ড্রেজিং সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজার পরিদপ্তরের বার্ষিক ড্রেজিং সক্ষমতা আরও ১৭০ লাখ ঘনমিটার বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক ক্যাপিটাল এবং মেইনটেনেন্স ড্রেজিং এর চাহিদা অনেকাংশে পূরণের লক্ষ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৩০৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।মূল প্রকল্পের মেয়াদ ছিল জুলাই ২০১০ হতে জুন ২০১২ পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে ২ বার মেয়াদ বৃদ্ধি করে জুন ২০১৬ পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রথম সংশোধন এবং পরিকল্পনা কমিশন ২য় সংশোধন করে। পরে তৃতীয়বার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।প্রকল্পটি অনুমোদনের পর বারবার সংশোধন করা হলেও অগ্রগতি ৬৯৮ কোটি টাকা, যা মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৫৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ।অগ্রগতি কম হওয়া প্রসঙ্গে বাপাউবো জানায়, মূল প্রকল্পে ১১টি ড্রেজার কেনার সংস্থান ছিল। এর মধ্যে দরপত্রের মাধ্যমে ৯টি ড্রেজার কেনা হয়। বাকি দুটি ড্রেজার কেনার জন্য ২০১২ সালে চুক্তি করা হয়। কিন্তু কাজের অগ্রগতি না থাকায় ২০১৫ সালে চুক্তি বাতিল করা হয়। প্রকল্পের ১ম সংশোধিত ডিপিপি সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে অনুমোদিত হয় যাতে ১০টি ১০ ইঞ্চি ড্রেজার ক্রযয়ের সংস্থান রাখা হয়। বাতিলকৃত চুক্তির ২টি ২০ ডেজার ও নতুন অন্তর্ভুক্ত ১০টি ১০ ইঞ্চি অর্থাৎ মোট ১২টি ড্রেজার ডিপিএম পদ্ধতিতে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর অধীন ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের মাধ্যমে সংগ্রহের নিমিত্ত প্রক্রিয়াকরণ করা হয়, যা অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি কর্তৃক বাতিল করা হয়। ফলে সার্বিকভাবে প্রকল্পের অগ্রগতি কম হয় বলে দাবি বাপাউবোর।