প্রথম বুলেটের জন্য বুক পেতে দেব: ইশরাক

প্রথম বুলেটের জন্য বুক পেতে দেব: ইশরাক

নিজস্ব প্রতিবেদক :  বিএনপি নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বলেছেন, আন্দোলন-সংগ্রাম সফল করতে প্রথম বুলেটটা নেয়ার জন্য আমি বুক পেতে দেব। গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ইশরাক বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার লালসা থেকে নিজেদের মধ্যে বিবাদ, বিভাজন, বিরোধ, মারামারি, হানাহানি করছি। এখানে লাভ কার হচ্ছে? এখানে একটি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী, মাফিয়া গোষ্ঠী, ভূমিদস্যু যারা বিএনপির সময় ব্যবসা করেছে, আওয়ামী লীগের সময়েও ব্যবসা করছে, জমি দখল করেছে, বাংলাদেশের সম্পদ লুটপাট করেছে গরিব-দুখী কৃষকদের সম্পদ লুটপাট করে তারা বিদেশে পাচার করেছে। তিনি বলেন, এই যে সাম্রাজ্যবাদীশক্তি আজকে আমাদের ঘাড়ে এসে চেপে বসেছে, ৫০ বছর পরে এসে আমি আপনাদেরকে বলতে চাই, তরুণ প্রজন্ম জেগে উঠেছে। আমরা এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মেনে নেব না। আমি আপনাদেরকে কথা দিচ্ছি, এই আন্দোলন-সংগ্রাম সফল করতে এই রক্ষীবাহিনীর পতন ঘটাতে প্রথম বুলেটটা নেয়ার জন্য আমি আমার বুক পেতে দেব। পেছন দিক দিয়ে পালিয়ে যাব না। আপনাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ইনশাআল্লাহ এই সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর পতন ঘাটাবো। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে আমি লজ্জাবোধ করছি যে, আমরা এখনো স্বাধীনতাকে খুঁজে বেড়াই, আমরা এখনো গণতন্ত্রকে খুঁজে বেড়াই। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যে রূপ দিয়েছে, সেটি আমাদেরকে পাকহানাদার বাহিনী এবং রক্ষীবাহিনীর কথা মনে করিয়ে দেয়। আমাদের আজকের গণতন্ত্রের এই সংগ্রামে প্রায় এক হাজার নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। আমাদের সিলেটের জনপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলী, ঢাকার কমিশনার চৌধুরী আলমসহ অনেকে গুমের শিকার হয়েছেন। ২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল যে আন্দোলন করেছিল, সেসময় ২৭ জন নেতাকর্মীকে গুম করে ফেলা হয়েছিল। তাদের লাশটি পর্যন্ত আজও পাওয়া যায়নি। ইশরাক বলেন, জিয়াউর রহমানের যে খেতাব যেটা তিনি নিজে যুদ্ধ করে অর্জন করেছেন, সেটা বাতিল করার চেষ্টা করছে সরকার। এই যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী যিনি আছেন, তিনি জিয়াউর রহমানের কবর অন্যত্র সরানোর মতো ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যও প্রদান করেছেন। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং আমি বর্তমান প্রজন্মের আওয়ামী লীগের আমার বন্ধুরা এবং যারা দেশের নাগরিকরা আছেন তাদেরকে বলতে চাই, আমাদের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে আপনাদের মাঝে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে, আপনারা সেটা বন্ধ করুন। আমরা সকল জাতীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে জাতীকে ঐক্যবদ্ধ করে আগামীতে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা সবাইকে তাদের যথাযথ সন্মান দিতে চাই। তিনি বলেন, আপনারা জানেন ২০০৭ সালের শুরুতে একটি সেনা সমর্থিত এবং ভারত সমর্থিত অবৈধ সরকার দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে বাধাগ্রস্ত করে সরকার পতন ঘটায় এবং ১/১১ এর সরকার বলে যেটা বহুল প্রচারিত তারা ক্ষমতা গ্রহণ করে। ক্ষমতা গ্রহণ করার পরপরই তারা ভারতের যারা এখানে প্রভাব বিস্তার করে তাদের যোগসাজশে ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারা তাদের বিভিন্ন অপকর্ম হিসাব-নিকাশ করে বুঝতে পারেন ভোটের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায় আসা কোনোভাবে সম্ভব না। তাই তারা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ২০১১ সালে জোরপূর্বক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। এটি দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশকে বিভক্ত করার একটি চক্রান্ত।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হা?সিনার উদ্দেশ্যে বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে ছেড়ে দেন, জিনিসপত্রের দাম কমান, মানুষকে কথা বলার স্বাধীনতা দিন। তা না হলে জনগণের যে বিস্ফোরণ ঘটবে, সেই বিস্ফোরণ থেকে রক্ষা পাবেন না। আলাল বলেন, সামনে রমজান মাস আসছে। বাজারে যান, খোঁজ নিয়ে দেখেন, জিনিসপত্রের দাম তিন-চারগুণ ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে। পেঁয়াজ, লবণ ও তেলের দাম বেড়ে গেছে। হাসিনার উপদেষ্টাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা বৈঠক করেছেন এই ফাঁকে হাজার হাজার কোটি টাকা কীভাবে লুটপাট করা যায়। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা যেভাবে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেছেন তাতে মনে হচ্ছে কয়েক দিনের মধ্যে বলবেন, জিয়া উদ্যানের কবর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারার জন্য ব্রাশফায়ার করছে। তিনি যা খুশি তাই বলে যাচ্ছেন। আলাল বলেন, এই যে ডিজিটাল কালো আইন। এই আইনের মধ্য দিয়ে যে কুকীর্তিগুলো হচ্ছে। এই কুকীর্তি বন্ধ করার জন্য হলেও এ আইন বাতিল করা দরকার। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএন?পিকে ধ্বংস করার জন্য পু?লিশকে লে?লিয়ে দিয়েছেন। আপনার নিজের ঘরে যে হা-ডু-ডু খেলা হচ্ছে। সেগুলো আগে বন্ধ করেন। নোয়াখালীতে কাউয়ামুক্ত ও কাউয়াওয়ালা আওয়ামী লীগের মধ্যে লেগে গেছে। বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, পুলিশ দুই ভাগ হয়ে গেছে। এক ভাগ বলছে মেজর সিনহাকে হত্যা করেছে ওসি প্রদীপ, আরেক ভাগ সেটার বিরুদ্ধে নারাজি দিচ্ছে। আবার হাজী সেলিমের ছেলেকে একভাগ মামলা দিচ্ছে, আরেক ভাগ ছেড়ে দিচ্ছে। এই নাটকগুলো কেন করা হচ্ছে? সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়াপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবি খান সোহেল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজজামান সেলিম, বিএনপি নেতা মজিবর রহমান সরোয়ার, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, শাহাদাত হোসেন, তাবিথ আওয়াল প্রমুখ।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

১৬৯ কর্মচারিকে চাকরিচ্যুত করলো রাসিক

মেহেন্দিগঞ্জ পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের কর্মসূচি-৩ পরকল্পের চেক বিতরণ