সাভার (ঢাকা): কালিয়াকৈর থেকে আশুলিয়ার গোহাইলবাড়ি ও শিমুলিয়া যাতায়াতের জন্য বেশির ভাগ মানুষই গোহাইলবাড়ি-কালিয়াকৈর সড়ক ব্যবহার করে। সড়কটি প্রায় শত বছর আগেই তৈরি করা হয়েছে।তবে এ সড়কের মধ্যে একটি স্থানে বংশায় নদী বয়ে যাওয়ায় এখানকার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। সেতু না থাকায় নৌকায় করে পার হওয়ার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় কয়েক অঞ্চলের লক্ষাধিক সাধারণ মানুষকে। নদীটির উত্তর পাশে কালিয়াকৈর, গাজীবাড়ি , চন্দনীয়া, নাল্লাপোল্লাসহ প্রায় পাঁচ-ছয়টি গ্রাম রয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ পাশে গোহাইলবাড়ি-শিমুলিয়াসহ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। এ অঞ্চলের লোকজন এই নদীতে নৌকায় করে পারাপার হয়ে থাকে। গাজীবাড়ির বেশিরভাগ নারী পোশাক শ্রমিকরা শিমুলিয়ার বিভিন্ন কারখানায় কাজ করেন। এ কারণে প্রতিদিন তাদের এই নদী পার হতে হয়। গাজীবাড়ি অঞ্চলটিতে প্রাইমারি বিদ্যালয় থাকলেও নেই কোনো উচ্চ বিদ্যালয় ও বাজার। তাই শত কষ্ট মাথায় নিয়ে নদী পার হয়ে শিক্ষার্থীদের যেতে হয় গোহাইল বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং চাষিদের সবজীসহ নানা পণ্য নিয়ে যেতে হয় গোহাইল বাজারে। নদী পার হতে মাত্র দুটি খেয়া নৌকা থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের।স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, সেতুটি তৈরির জন্য কয়েক এলাকার সাধারণ ভুক্তভোগী ১ লাখ ৫ হাজার টাকার মত চাঁদা তুলে বিভিন্ন দফতরে জমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেতুটির ফাইল কোথায় কোনো দফতরে রয়েছে তারা আর জানেন না। সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) শিমুলিয়া ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ি-কালিয়াকৈর সড়কের নদীর অংশে গিয়ে দেখা গেছে খেয়া নৌকা দিয়ে নদী পারাপারের দৃশ্য। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় বংশাই নদীর পানি অনেকটাই কমে গেছে। কিন্তু পানি কমে গেলেও ছোট্টো দুটি নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপার হচ্ছেন। এছাড়া এখানে সেতু না থাকায় চলছে না কোনো পরিবহন বা রিকশা-ভ্যান। পথিকদের পায়ে হেঁটেই গন্তব্য পারি দিতে হচ্ছে। গাজীবাড়ির বাসিন্দা আনিস ভূঁইয়া বলেন, স্থানীয় মেম্বর ও চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বাসিন্দাদের থেকে টাকা তুলে দেওয়া হয়েছিলো যেন সেতুর ফাইল তারাতাড়ি জমা পরে ও দ্রুত সেতুটির কাজ শুরু হয়। কিন্তু এখনো সেই কাজ শুরু হয়নি। খালি শুনি সেতু হবে সেতু হবে কিন্তু এই সেতু আর হয় না। আপনারা আসেন আর ছবি তুলে আমাদের আশ্বাস দিয়ে যান কোনো কাজ হয় না। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে নদীতে খেয়া নৌকা দিয়ে মানুষ ও পণ্য পারাপার করেন মাঝি মো. মোতালেব হোসেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা অনেকবারই শুনেছি সেতু হবে। কিন্তু তা আর হয় না। এখন তো শীতের শেষ তাই নদীতে পানি কম তাই দুর্ঘটনাও কম। কিন্তু বর্ষাকালে খুব খারাপ অবস্থা হয়। কখনো কখনো স্রোতে নৌকা ডুবে যায়। আমি অনেকদিন থেকে নৌকা চালায়। সেতু হলে আমাদের সবার জন্য ভালো। তখন নৌকা চালাতে না পারি জমিতে চাষ করতে পারবো। ৬৫ বছর বয়সী শাহালম বলেন, প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই পথ দিয়ে যাতায়াত করে। এর মধ্যে পোশাক কারখানার শ্রমিকরাই বেশি। মানুষ নদী পারাপারের জন্য রাত ১২টা ১টা পর্যন্ত এই পারে বা ওপারে দাঁড়িয়ে থাকে। একটি সেতুর জন্য কত কষ্ট করে যে মানুষ। আমাদের এই নদী পার হতে খেয়া নৌকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। প্রায় শত বছর ধরে এই অবস্থায় (সেতু ছাড়া) রয়েছে। মানে আমি জন্মের পর থেকেই নৌকা দিয়ে পার হই। গাজীবাড়ী এলাকার বাসিন্দা যুবক মো. অনসার আলী বলেন, আমাদের এলাকার কোনো লোক যদি অসুস্থ হয় তবে খেয়ায় করে নদী পারাপার হতেই সে মারা যায়। এই নদী পার হওয়া ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প রাস্তা নেই। এই সেতু যদি নির্মাণ হয় তাহলে আমাদের কয়েক গ্রামের মানুষের অনেক সুবিধা হবে। নদীটি আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের সীমানায় হওয়ায় আমরা যোগাযোগ করি ইউনিয়নটির বর্তমান চেয়ারম্যান এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজের সঙ্গে।তিনি বলেন, আমি শুনেছি দুই মাস আগে একনেক বৈঠকে ৯ থেকে ১০ কোটি টাকার মত সেতুটির জন্য বিল পাশ হয়েছে। সেতুটি নিয়ে কাজ চলছে। সেতুটি হলে এই এলাকাগুলোর চিত্র পাল্টে যাবে। আর সব চেয়ে বড় কথা কালিয়াকৈর এর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বাইপাস পথও তৈরি হবে। সাভার উপজেলা প্রধান প্রকৌশলী সালেহ হাসান প্রামাণিক বলেন, সেতুটির বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানিনা। আসলে পিআইও এর থেকে হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। এটি আমাদের প্রস্তাবনায় রয়েছে এখনো টেন্ডার হয়েছে কিনা আমি শিউর না।