নিজস্ব প্রতিবেদক ; অর্থপাচার ও মানবপাচারের মতো ঘৃণ্য অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে চার বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন কুয়েতের আদালত। এমপি পাপুলের এ সাজাকে কুয়েত সরকার ও বিচার বিভাগের নিজস্ব ব্যাপার বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস। সাজা নিয়ে কিছুই করার নেই বলে গতকাল শুক্রবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) আশিকুজ্জামান। রাষ্ট্রদূত বলেন, তাদের নিজস্ব বিচার বিভাগের মাধ্যমে এ সাজা দেওয়া হয়েছে। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। গত বৃহস্পতিবার কুয়েতের ফৌজদারি আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল ওসমান এমপি পাপুলকে দোষী সাব্যস্ত করে এই রায় দেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি পাপুলকে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার (প্রায় ৫৩ কোটি ২১ লাখ টাকা) জরিমানাও করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ কুয়েত চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক আতাউল গণি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশের কোনো আইন প্রণেতার এভাবে বিদেশে দণ্ডিত হওয়ার ঘটনা আর কখনো ঘটেনি। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, অর্থপাচার ও মানবপাচারের অভিযোগ নিয়ে একজন সংসদ সদস্যের বিদেশের কারাগারে আটক থাকা এবং শেষ পর্যন্ত অভিযোগ প্রমাণিত হয়ে সাজা পাওয়া অত্যন্ত লজ্জাজনক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক বলেন, এটি রাষ্ট্রহিসেবে বাংলাদেশের ও জনগণের জন্য খুবই বিব্রতকর। ওই ব্যক্তি বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে অসম্মানিত করেছেন। কুয়েতের আল কাবাস ও আল রাই পত্রিকার অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবদুল্লাহ আল ওসমানের নেতৃত্বে কুয়েতের ফৌজদারি আদালত গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি আইন প্রণেতার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক মামলার রায় ঘোষণা করে। আদালত পাপুল ছাড়াও কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা মাজেন আল জাররাহসহ কুয়েতি তিন কর্মকর্তাকেও চার বছরের কারাদণ্ড এবং একই পরিমাণ অর্থদণ্ড দিয়েছেন। কুয়েতের এই জেনারেলসহ ওই কর্মকর্তারা সে দেশে পাপুলকে অনৈতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনায় মদদ দিয়েছেন। লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও লক্ষ্মীপুর সদরের আংশিক) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পাপুল প্রায় আট মাস ধরে কুয়েতে আটক আছেন। অর্থপাচার, মানবপাচার ও শ্রমিক শোষণের অভিযোগে গত ৬ জুন কুয়েত সিটির মুশরিফ এলাকার বাসা থেকে পাপুলকে গ্রেপ্তার করে সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগে মামলা করা হয়। পাপুলের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের মামলার রায় হলেও এখনো মানব ও অর্থপাচারের দুটি মামলার রায় অপেক্ষমাণ রয়েছে।