সুজাউদ্দিন রোমেন : শীতে দেশের গ্যাস স্বল্পতায় দেশের বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে শীতে এসে সঙ্কটে পড়েছে বিদ্যুৎ খাত। কারণ গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এখন মোট চাহিদার অর্ধেক গ্যাসও পাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে পিডিবির পক্ষে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাতে সামগ্রিকভাবে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির শঙ্কাও তীব্র হচ্ছে। পিডিবি এবং পেট্রোবাংলা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে গ্যাসের চাহিদা থাকলেও এলএনজি আমদানি কম হচ্ছে। ফলে গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। ফলে বিদ্যুৎ খাতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্রতিদিন এক হাজার মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও ৬০০ থেকে ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি এলএনজি আমদানি করা হয় না। এখন যা প্রতিদিন ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। ফলে এলএনজির জন্যই সাড়ে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের অতিরিক্ত ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তার বাইরে আগে থেকে আরো ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। সঙ্গত কারণে সব মিলিয়ে এখন প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। আর শীতে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়াতে সঙ্কট আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। সূত্র জানায়, দেশে পিডিবির ১১ হাজার মেগাওয়াটের গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু গড়ে ৬ হাজারের বেশি চালাতে পারছে না। গ্যাস পেলে অবশ্য ওই সমস্যা অনেক কমে আসবে। কিন্তু গ্যাস সরবরাহের স্বল্পতায় পিডিবি ক্রমাগতভাবে দামি বিদ্যুতের দিকে ঝুঁকছে। তাতে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এখন বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের চাহিদা এক হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে গড়ে তার অর্ধেক গ্যাস। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অব্যাহত গ্যাস সঙ্কটের কারণে পিডিবি বেশি বেশি করে তেলনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাচ্ছে। তাতে সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে বসে থাকতে হচ্ছে। বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ২৪ হাজার ৮১৫ কোটি টাকার বেসরকারি (ভারতের আমদানিসহ) বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে। আর পিডিবি এবং সরকারি উৎপাদন কেন্দ্রের কাছ থেকে কেনা হয়েছে ১৪ হাজার ১৩৬ কোটি টাকার বিদ্যুৎ। এদিকে গত অর্থবছরে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের মধ্যে আইপিপি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইফনিটপ্রতি ব্যয় ছিল ৭ টাকা। আর ভাড়ায়চালিত কেন্দ্রের ইফনিটপ্রতি দাম ছিল ৮ টাকা ৩৪ পয়সা। তাছাড়া ভারত থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুতের দাম ছিল ইফনিটপ্রতি ৬ টাকা ১ পয়সা। পিডিবি গতবছর আইপিপি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছ থেকে ৭ হাজার ৪৬৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার বিদ্যুৎ কিনেছে। দাছাড়া ভাড়ায়চালিত কেন্দ্র থেকে ৩ হাজার ২১২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং ভারত থেকে ৪ হাজার ১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকার বিদ্যুৎ কিনেছে। কিন্তু তার বিপরীতে সরকারি বিদ্যুত কেন্দ্রের মধ্যে পিডিবির ইফনিটপ্রতি ব্যয় ছিল ৪ টাকা ৪৭ পয়সা আর সরকারি অন্য কোম্পানির বিদ্যুতের দর ছিল ৩ টাকা ৮৬ পয়সা। পিডিবির কাছ থেকে ৭ হাজার ৪৬৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার এবং সরকারি বিদ্যুত কেন্দ্রের কাছ থেকে ৬ হাজার ৬৭১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার বিদ্যুৎ কিনেছে। অন্যদিকে যেসব কেন্দ্রের বিদ্যুতের দাম তুলনামূলকভাবে কম ওই কেন্দ্রগুলো বেশি বেশি চালানোর শর্ত দিয়েছিল বিদ্যুৎ বিভাগ। ওই কেন্দ্রগুলো বেশি চালানো হলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমিয়ে রাখা সম্ভব। তাতে গ্রাহক পর্যায়েও দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন হয় না। কিন্তু সেদিকে যাদের নজর থাকার কথা তাদেরই নজর নেই। গতবছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে মোট ব্যয় হয়েছে ৪১ হাজার ১৯৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তার মধ্যে সরকারে ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৩০৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ওই ভর্তুকির মধ্যে সরাসরি বাজেট থেকে এক হাজার ২৯৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া সংরক্ষণ এবং উন্নয়ন তহবিল থেকে এক হাজার ১৫ কোটি ২ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। পিডিবি দামি বিদ্যুতের বদলে কম দরের সরকারি বিদ্যুৎ কিনলে ওই ভর্তুকি দিতে হতো না। এ প্রসঙ্গে পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন জানান, পিডিবি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এখন চাহিদার প্রায় অর্ধেক গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছে। তাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ¦ালানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে চাহিদা মেটাতে বেশি বেশি করে তরল জ¦ালানি নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানো হচ্ছে।