মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : রেমন রেইফারকে ২৭ রানে কট এন্ড বোল্ড করে ম্যাচটা যেমন শেষ করেছেন তাসকিন আহমেদ ঠিক তেমনি একটা উইকেটও তুলে নিয়েছেন প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে। বাংলাদেশও ম্যাচটা জিতেছে ১২০ রানে। ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জেতার মাধ্যমে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে চতুর্থস্থানে উঠে এসছে তামিম ইকবালের দল। ২৯৮ রানের বড় টার্গেটে খেলতে নেমে ১৭৭ রানে অলআউট হয়েছে ৪৪.২ ওভারে। আরও ৩৪টা বল খেলার মতো কোন ব্যাটসম্যান দলের ছিলনা। সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেছেন রভম্যান পাওয়েল। নিকরুমা বন্নার ৩১ ও রেমন রেইফার ২৭ রান করেন। তবে সফরকারীদের ইনিংসটা আরও দ্রুত শেষ হয়ে যেত যদি সাকিব আল হাসানকে পুরো ম্যাচে পাওয়া যেত। এই ম্যাচে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ৩ ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচে বোলিং করতে গিয়ে হ্যামস্ট্রিংয়ের ইঞ্জুরিতে পড়েছেন টাইগার অলরাউন্ডার। আপাতত তার চোট কেমন সেটা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ইনিংসের ৩০ তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে আসেন সাকিব আল হাসান, চতুর্থ বলে ফিল্ডিংয়ে একটা বল ধরতে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়েন তিনি। ৬৪ রানের দারুণ ইনিংসের কল্যানে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন মুশফিকুর রহিম। আর পুরো সিরিজে দুর্দান্ত ব্যাটিং ও বোলিং করে ম্যান অফ দি সিরিজের পুরস্কার জিতেছেন সাকিব আল হাসান।
তিন ম্যাচ জিতে পুরো ৩০ পয়েন্ট পেয়েছে বাংলাদেশ। এরপরও বল করেন, তখনই বুঝতে পারেন সমস্যা হচ্ছে। মাঠে ফিজিও প্রবেশ করে সাকিবকে পর্যবেক্ষণ করার পর মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাকিব মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে ৪.৫ ওভার বোলিং করে ১২ রান দিলেও কোন উইকেট পাননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই প্রায় ১৫ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন সাকিব আল হাসান। ফিরেই নিজের জাত চিনিয়েছেন, প্রথম ম্যাচেই হয়েছেন ম্যাচসেরা। সাকিব পুরো ম্যাচ খেলতে পারলে হয়তো সৌম্য সরকার কিংবা নাজমুল হোসেন শান্তকে বোলিং করতে হতোনা। বাংলাদেশের মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ৫১ রানে ৩টি, মেহেদী হাসান মিরাজ ১৮ রানে ২ ও মোস্তাফিজুর রহমান ২৪ রানে ২ উইকেট লাভ করেন। এছাড়া তাসকিন ও সৌম্য ১টি করে উইকেট নেন।
প্রথম দুই ম্যাচে আগে ব্যাট করে বড় ব্যবধানে পরাজয়ের পর কিছুটা হতাশা বিরাজ করছিল সফরকারীদের মধ্যে। তৃতীয় মাচে এসে প্রথমে বল করে টার্গেটে খেলার সুযোগ পান। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করতে পারেনি। এখানেও পরাজয়ের ব্যবধানটা বড় হয়ে থাকে। এর আগে চার ফিফটিতে সাগরিকায় সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ দল। প্রথম দুই ম্যাচে পরে ব্যাট করে ১২২ ও ১৪৮ রান চেজ করার পর তৃতীয় ম্যাচে এসে বড় স্কোর করার সুযোগ পায়। টসে হেরে বাংলাদেশ দল ব্যাটিংয়ের সুযোগ পায়। যদিও শুরুটা একেবারেই নড়বড়ে হয়েছে স্বাগতিকদের। কোন রান না করেই ফিরে যায় লিটন দাস। সম্ভাবনা জাগিয়ে ২০ রান করে ফিরে যান নাজমুল হোসেন শান্ত। বিশ্বকাপে তিন নাম্বার পজিশনে দারুণ ব্যাটিং করার সাকিব আল হাসানের জায়গা পরীক্ষামূলকভাবে এই বাহাতি ব্যাটসম্যানকে সুযোগ দেওয়া হলেও সেটিকে কাজে লাগাতে পারেননি। এরপরই হাল ধরেন তামিম ও সাকিব। দুজন মিলে গড়ে তোলে ৯৩ রানের জুটি।
আর টাইগারদের হয়ে প্রথমাবারের মতো একই ইনিংসে ফিফটি পেয়েছেন তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৯৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল বাংলাদেশ। দুই দলই ২ টি করে পরিবর্তন নিয়ে সিরিজের শেষ ম্যাচে মাঠে নামে। এই সিরিজে নবম ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে কিওন হার্ডিং। অন্যদিকে টাইগারদের একাদশে তাসকিন আহমেদ ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে সুযোগ দেওয়া হয়। তামিম-সাকিব জুটি গড়ার পথেই তৃতীয় বাংলাদেশি জুটি হিসেবে ২ হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪৯ তম ফিফটি তুলে ৮০ বলে ৩ চার ও ১ হয়ে ৬৪ রানে তামিম আউট হলে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান। চতুর্থ উইকেটে দুজনে যোগ করেন ৪৮ রান, আইসিসির নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা সাকিব ৫৭০ দিন পর দেখা পান ফিফটির। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮ তম ফিফটির পর ৮১ বল খেলে ৩ চারে ৫১ রান করে আউট হন সাকিব। এরপর ফিফটি পেয়েছেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। পঞ্চম উইকেটে ইনিংস সর্বোচ্চ ৭২ রান যোগ করেন মুশফিক ও রিয়াদ। অনেকটা মারমুখী মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ৫৫ বলে ৪ চার ও ২ ছয়ে ৬৪ রানের ইনিংস। অন্যদিকে শেষ পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৪৩ বলে ৩ টি করে চার ও ছক্কায় অপরাজিত ৬৪ রানের ইনিংসে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৯৭ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ দল। যা এই মাঠে কোন দলের সর্বোচ্চ রানের সংগ্রহ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ২ টি করে উইকেট পেয়েছেন আলজারি জোসেফ ও রেইমন রেইফার, ১ উইকেট পেয়েছেন কাইল মায়ার্স। মূলত শেষদিকের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে তিনশ’র কাছাকাছি পৌছে যায় বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস : ওয়েস্ট ইন্ডিজ
বাংলাদেশ : ৩৯৭/৫ (৫০ ওভার) মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অপরাজিত ৬৪, তামিম ইকবাল ৬৪, মুশফিকুর রহিম ৬৪, সাকিব আল হাসান ৫১, নাজমুল হোসেন শান্ত ২০, ২/৪৮ আলজারি জোসেফ, ২/৬১ রেমন রেইফার, ১/৩৪ কাইলি মায়ার্স।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৭৭/১০ (৪৪.২ ওভার) রভম্যান পাওয়েল ৪৭, নিকরুমা বন্নার ৩১, রেমন রেইফার ২৭, ৩/৫১ মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, ২/১৮ মেহেদী হাসান মিরাজ, ২/২৪ , ২/২৪ মোস্তাফিজুর রহমান।
ফল : বাংলাদেশ ১২০ রানে জয়ী
সিরিজ : বাংলাদেশ ৩ ম্যাচ সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মুশফিকুর রহমান (বাংলাদেশ)
সিরিজ সেরা : সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ।
টুকরো খবর
তামিমের হাফ সেঞ্চুরির যত হিসাব
অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবার পূর্নাঙ্গ সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তামিম ইকবাল। ৪৯তম হাফ সেঞ্চুরি করার পাশাপাশি দেশের মাটিতে ২৫ তম অর্ধশতক পূর্ন করেছেন। রানে ফিরেছেন তামিম সেই খবর তো এখন পুরোনো বলা যায়। গত বছরের শুরুতে করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাকা বসানোর পূর্বে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রানে ফেরার ইঙ্গিত ছিল তামিমের। বছর পেরিয়েছে করোনার বিরতিতে। নতুন বছরের শুরুতে কাপ্তানি হাতে নতুন পরীক্ষার সামনে মাঠে নামেন খান সাহেব। পরীক্ষিত এই ব্যাটসম্যানের রানে ফেরার চাপটা ছিল পাহাড়সম। চলতি সিরিজে তিন ম্যাচ ওয়ানডেতে সর্ব্বোচ্চ স্কোর সহ দুইটি ফিফটি করেন তামিম। মিস্টার ফিফটি খ্যাতি পেতে যাচ্ছেন তামিম কেননা এখন অব্দি ৪৯ টি ফিফটি করেছেন তামিম ইকবাল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে ৬৪ রান করে আউট হন টাইগার কাপ্তান। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১৯ তম ফিফটি এটি তামিমের। সুতরাং রান তাড়া করতে নেমে ৩০ টি ফিফটি করেছেন তামিম ইকবাল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গতকালের ফিফটি তামিমের ৮ম, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এটি খান সাহেবের ৫ম অর্ধশতক। চলতি বছর এবং অধিনায়ক হিসেবে ২য় অর্ধশতক তামিম ইকবালের। একের পর এক ফিফটি করা তামিম, অধিনায়ক থাকা অবস্থায় নিজের ফিফটিগুলোকে সেঞ্চুরিতে রুপ দিতে পারবেন কি তামিম? এই প্রশ্নের উত্তরের পিছনেই যে লুকিয়ে দেশের ক্রিকেটের সাফল্য। তবে এই ম্যাচে সম্ভাবনা জাগিয়েও পারেননি চট্টলার এই বীর সন্তান। এখন আরও সময়ের অপেক্ষা করতে হবে তাকে।
দেশের মাটিতে ৬০০০ রান ও ৩০০ উইকেটের রেকর্ডে সাকিব
বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে তিন সংস্করণ মিলিয়ে দেশের মাটিতে ৬০০০ রান ও ৩০০ উইকেটের রেকর্ড গড়লেন সাকিব আল হাসান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে সাকিব ৫৯৯৪ রান নিয়ে মাঠে নামেন। দশম ওভারে কিওন হার্ডিংকে ফাইন লেগ দিয়ে চার মেরে ৬০০০ রানের মাইলফলক টপকে যান সাকিব। সাকিব অবশ্য বাংলাদেশের মাটিতে তিন সংস্করণে ৬০০০ রান তোলা প্রথম ক্রিকেটার নন। এর আগে মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবালও ৬০০০ রান টপকেছেন। তবে বাংলাদেশের মাটিতে ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে ন্যূনতম ৩০০ উইকেট ও ৬০০০ রান তোলা প্রথম ক্রিকেটার সাকিব। এর আগে ৫৭০ দিন পর দেখা পেয়েছেন হাফ সেঞ্চুরির। ব্যাটে-বলে দারুণ পারফরম্যান্স দেখাচ্ছেন সাকিব আল হাসান। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স অব্যহত ছিল সিরিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচেও। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ দল, ইনিংসের প্রথম ওভারেই ফিরে যান ০ রান করা লিটন। ১ রানে উইকেট হারানো বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেট হারায় ৩৮ রানে, তিনে খেলতে নেমে আরও একবার ব্যর্থ হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ৩০ বলে ৩ চারে ২০ রান করে কাইল মায়ার্সের বলে শান্তর বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন সাকিব আল হাসান, দুজনে তৃতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৯৩ রান। এই জুটি গড়ার পথেই তৃতীয় বাংলাদেশি জুটি হিসেবে ২ হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করে সাকিব-তামিম জুটি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪৯ তম ফিফটি তুলে ৮০ বলে ৩ চার ও ১ হয়ে ৬৪ রানে তামিম আউট হলে মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান। চতুর্থ উইকেটে দুজনে যোগ করেন ৪৮ রান, আইসিসির নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা সাকিব ৫৭০ দিন পর দেখা পান ফিফটির। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮ তম ফিফটির পর ৮১ বল খেলে ৩ চারে ৫১ রান করে আউট হন সাকিব।
কাপ্তানের পঞ্চাশের ‘ ঊনপঞ্চাশ’
তামিম ইকবালকে ভবিষ্যত নেতা বানানো হয়েছে দীর্ঘমেয়াদের জন্য। মাশরাফি বিন মর্তুজার ইনজুরিতে প্রথমবার ২০১৯ সালে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব ‘অধিনায়কত্ব’ পেয়েছিলেন তামিম ইকবাল। সেই সিরিজে কথা বলেনি তার ব্যাট। তিন ম্যাচে করেছিলেন ০, ১৯ ও ২ রান। এবার বছর দেড়েক পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে স্থায়ীভাবে অধিনায়ক হয়ে হাসছে তামিমের ব্যাট। তিন ম্যাচেই দেখা পেলেন রানের, হাঁকালেন জোড়া ফিফটি। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৪৪ রানে থেমেছিলেন। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে করেছিলেন ফিফটি, আউট হন ঠিক ৫০ রানে। সিরিজের শেষ ম্যাচে আবারও অর্ধশতকের দেখা পেলেন টাইগার অধিনায়ক। যা তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৯তম পঞ্চাশ। বাংলাদেশের হয়ে তার চেয়ে বেশি হাফ সেঞ্চুরি নেই আর কোনো ব্যাটসম্যানের। এছাড়া সর্বোচ্চ ১৩টি সেঞ্চুরিও দেশসেরা এ ওপেনারের। করোনাভাইরাসের কারণে সবধরনের খেলাধুলা বন্ধ হওয়ার আগের সিরিজে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন তামিম। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ইনিংসে তার রান ছিল ২৪, ১৫৮ ও ১২৮*। এরপর প্রায় দশ মাসের বিরতি পড়লেও একই ছন্দে তামিমের ব্যাট। এবার প্রথম দুই ম্যাচে ৪৪ ও ৫০ রানের ইনিংস খেলার পর তৃতীয়টিতেও হাঁকালেন সাবলীল ফিফটি। সিরিজের আগের দুই ম্যাচে পরে ব্যাট করেছিল বাংলাদেশ।
সাকিব-তামিমের দুই হাজার রানের পার্টনারশীপ
বাংলাদেশের তো বটেই ক্রিকেট দুনিয়ার বড় তারকার নাম সাকিব আল হাসান। যিনি ঘড়োয়া ক্রিকেটের চেয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরতে প্রস্তুত থাকেন। এবার নতুন আরেকটি রেকর্ড করলেন তিনি। সাথে চলে এসেছে তামিম ইকবালের নাম। তৃতীয় বাংলাদেশি জুটি হিসেবে ওয়ানডেতে ২ হাজার রান পূর্ণ করেছেন সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। যে কোন ফর্মেটেই পার্টনারশিপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যেটা ম্যাচের ভাগ্যও গড়ে দেয়। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে জুটিতে ২ হাজার বাঁ তার বেশি রান আগে থেকেই ছিল সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমের। তৃতীয় জুটি হিসেবে ওয়ানডেতে ২ হাজার রান পূর্ণ করেছেন সাকিব ও তামিম, ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় মিডল অর্ডারে ব্যাট করায় তামিমের সাথে বড় জুটি গড়ার খুব বেশি সুযোগ হয়নি তাদের। তবে যখনই সুযোগ পেয়েছেন রান করেছেন, তারই ফলশ্রুতিতে এই জুটির ২ হাজার রান পেরিয়ে গেল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জুটি বেঁধে ব্যাট করছেন সাকিব-তামিম, ম্যাচের আগে আরও ৪৩ ইনিংসে দুজনে জুটি বেঁধেছেন। সর্বোচ্চ ২০৭ রানের জুটি এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই, ২০১৮ সালে প্রভিডেন্সে দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করেছিলেন তারা। সেঞ্চুরি জুটি আছে ৩ টি, ফিফটি রানের জুটি ১৩ টি। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রান সাকিব আল হাসান ও মূশফিকুর রহিমের, দলের অন্যতম সেরা এই দুই ব্যাটসম্যান তাদের জুটিতে যোগ করেছে ৩১৫৬ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটির রানেও আছে মুশফিকুর রহিমের নাম, এখানে তার সঙ্গী মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ; জুটিতে তাদের রান ২১৪৪। ২ হাজারের কাছাকাছি জুটিতে রান আছে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসেরও।
তিন ম্যাচে লিটনের রান ১৪, ২২, ০!
বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিশীল ব্যাটসম্যান হিসেবে ধরা হয়ে থাকে লিটন দাসকে। কিন্তু ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় পার করেও ধারাবাহিক হতে পারেননি ডানহাতি এই ড্যাশিং ওপেনার। সে কারণে অনেকেই আবহাওয়ার সঙ্গে লিটনের ব্যাটিংয়ের তুলনা করে থাকেন। পরিবেশ ও প্রতিবেশগত কারণে আবহাওয়ায় যেমন মেঘ-রোদ্দুরের খেলা চোখে পড়ে লিটনের ব্যাটিংও তেমনি! এই রোদ তো এই মেঘ! নান্দনিক ব্যাটিংয়ে গোটা বিশ্বকে যেমন বুঁদ করে রাখেন তেমনি কুৎসিত ব্যাটিংয়ে ভক্তের হৃদয় ভাঙতেও সিদ্ধহস্ত তিনি! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলমান সিরিজটি কথা হিসাব করলে পরিস্কার হয়ে যাবে। তিন ম্যচে তার ব্যাট থেকে থেকে এসেছে মাত্র ৩৬ রান! ম্যাচ প্রতি গড় ১২.০০! মিরপুর শের-ই-বাংলায় প্রথম দুই ওয়ানডেতে করেছেন যথাক্রমে ১৪ ও ২২ রান। ‘লাকি ভেন্যু’ চট্টগ্রামে এসে তো রানের খাতাই খুলতে পারলেন না! ফিরে গেছেন শূন্য হাতে। অথচ দেশের মাটিতে সর্বশেষ জিম্বাবুয়েল বিপক্ষে তার ব্যাট হেসেছিল। ২০১৮ সালে এসে এশিয়া কাপে ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে খেলেন। আসরে ভারতের বিপক্ষে ১২১ রানের ঝলমলে ইনিংসে টিম ম্যানেজমেন্টের হৃদয় জিতে নিলেন। কিন্তু তার পরের সিরিজেই আবার সেই দীনতা। ওই বছরের অক্টোবরে সফরকারি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও আবার অধারাবাহিক। তিন ম্যাচের ওয়ানডেতে তার ব্যাট থেকে সর্বোচ্চ এল ৮৩ রান। বাকি দুই ম্যাচে নামের পাশে ৪ ও ০ রান। এর পর টানা ১ বছর ১৫ ম্যাচে কোন সেঞ্চুরির দেখা পাননি। সর্বোচ্চ ৯৫* রানের রানের ইনিং খেলেছেন বিশ্বকাপে, টনটনে। ১৬তম ম্যাচে এসে ১২৬ রান করেছেন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। একই সিরিজে তার ব্যাট থেকে এসেছে রেকর্ড ১৭৬ রান। ২০১৫ সালে ওয়ানডেতে অভিষিক্ত এই ব্যাটসম্যান ৩৯ ম্যাচে করেছে ১১১৫ রান। ম্যাচ প্রতি গড় ৩১.৮৫, স্ট্রাইক রেট ৯৩.৩০।
অভিষেকে কিয়ন হার্ডিংয়ের লজ্জার রেকর্ড
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের াভিষেকটা মনের মতো হলোনা কিয়ন হার্ডিংয়ের। বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের হাতে তুলোধুনো হতে হয়েছে তাকে। এই ম্যাচে লং অফের ওপর দিয়ে দৃষ্টিনন্দন এক ছক্কার মারে ইনিংসের শেষ ওভারটি শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সেই ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি হাঁকান মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এবং শেষ বলের আগেরটিতে আবার ছক্কা মারেন রিয়াদ। সবমিলিয়ে কিয়ন হার্ডিংয়ের করা সাত বলের ওভারটিতে ২২ রান তুলে নেন রিয়াদ ও সাইফ। যা দলীয় সংগ্রহটাকে পৌঁছে দেয় ২৯৭ রানে। বল হাতে ১০ ওভারে ৮৮ রান খরচ করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অভিষিক্ত পেসার কিয়ন হার্ডিং। যা কিনা অভিষেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনো বোলারের সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের রেকর্ড। সবমিলিয়ে ক্যারিবীয়দের হয়ে তৃতীয় খরুচে বোলিং করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে কোনো বোলারের সবচেয়ে বেশি রান খরচের বোলিংও হয়ে থাকল এটি। এর আগে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০ ওভারে ৮২ রান খরচ করেছিলেন ইংলিশ পেসার জ্যাক বল। এতদিন ধরে এটিই ছিল কোনো নির্দিষ্ট বোলারের বিপক্ষে ১০ ওভারে নেয়া সর্বোচ্চ রানের ঘটনা। এখন এটি চলে গেলো কিয়ন হার্ডিংয়ের নামে। বাংলাদেশের বিপক্ষে শুধু এ দুজন বোলারই ওয়ানডেতে ৮০’র বেশি রান খরচ করেছেন।