দেশে চামড়ার জগতে অন্যতম একটি মোকাম নওগাঁ। নওগাঁয় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর কোরবানির পশুর চামড়ার দাম একেবারে নেই বললেই চলে। আন্তর্জাতিক বাজার ও ভারতে চামড়ার দাম বেশি থাকলেও ট্যানারি মালিকদের দুটি সংগঠন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া ও দীর্ঘদিন ধরে জেলা পর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীদের বকেয়া টাকা পরিশোধ না করার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবছর চামড়া নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা।
সূত্রে জানা গেছে, সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করায় এবং নওগাঁয় ব্যাপক আকারে বন্যা হওয়ায় জেলায় এবার তুলনামূলক কম পশু কোরবানি দেয়া হলেও দীর্ঘদিনের বকেয়া টাকা থেকে কদিন আগে মাত্র ৮% টাকা পরিশোধ করায় নতুন করে চামড়া কিনতে আগ্রহী নন জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপ। ফলে এবার গ্রাম কিংবা পাড়া মহল্লা থেকে চামড়া কেনার ফরিয়া ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বলে ধারণা করছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। তাদের ধারণা চামড়ায় ব্যবহৃত লবনের দামসহ মূলধনের পুরোটা তুলতে পারবে কি না সন্দেহ। এসব কারণে চামড়া শিল্পে প্রভাবটা খুব বেশি পড়ছে বলে সাধারণ চামড়া ব্যবসায়ীরাও পড়েছে বিপদে। এবারের ঈদে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার চামড়া বেচা কেনার সম্ভাবনা থাকলেও ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে পাওনা টাকা না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা। আল্লাহর উপর ভরসা করে এবার নিজেদের টাকায় কম দামে চামড়া কিনছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছর ঈদুল আযাহার দিনে নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি জেলা শহরে কোরবানির পশুর চামড়ার বিশাল বাজার বসে। বিভিন্ন এলাকা ও গ্রামাঞ্চল থেকে চামড়া কিনে এনে বিক্রির জন্য এসব স্থানে ভিড় করে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারে চামড়ার দাম কম হওয়াই মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের এবার পথে বসার উপক্রম হয়েছে। লবণসহ সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। চামড়া জাতীয় সম্পদ ও দীর্ঘদিনের ব্যবসা বলে ঝুঁকি নিয়ে চামড়া কিনছে নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীরা। কোম্পানিরা যদি ভালো দাম দেয় তাহলে ভালো দাম পাওয়া সম্ভব তা না হলে লোকসান গুনতে হবে।
করোনা ভাইরাস ও বন্যায় জেলায় এবার কোরবানির ঈদে চামড়া আমদানি তেমন একটা কমবে না। তবে চামড়া রপ্তানির যে সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করেছে তা বাস্তবায়ন হলে চামড়া ব্যবসায়ীরা কিছুটা লাভবান হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। চলতি কোরবানির ঈদে নওগাঁয় ৫০ হাজার গরু, ৩৫ হাজার খাসি ও ১৫ হাজার ভেড়ার চামড়া কেনা-বেচার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও করোনা এবং বন্যার কারণে কিছুটা কমবে বলে আশঙ্কা করছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।
রাণীনগরের এনায়েতপুর থেকে আসা ফরিয়া চামড়া ব্যবসায়ী রহমত আলী বলেন, গরুর চামড়া কিছুটা দাম পাওয়া গেলেও ছাগল ও ভেড়ার চামড়া কেউ বিনামূল্যেও নিতে চাচ্ছে না। ভালো মানের গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০টাকা অথচ আমরা কিনেছি ৪০০-৪৫০টাকায়। ছাগল ও ভেড়ার চামড়া আমরা কিনেছি ১৫-২০টাকা দরে অথচ নওগাঁয় এসে তা কেউ নিতেই চাচ্ছে না। অনেকেই চামড়া নদীতে ফেলে দিয়েছে। চামড়ায় লাভ হওয়া তো দূরের কথা পুঁজিই থাকছে না।
চামড়া ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণ চামড়া মজুদ আছে। এছাড়াও চামড়া জাতীয় সম্পদ বলেই সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যের একটু বেশি দামে চামড়া কিনছি। ট্যানারি মালিকরা যদি একটু লাভ দিয়ে চামড়া নেয় সেই আশাতেও চামড়া কিনছি। আর ট্যানারি মালিকরা তো আমাদের পথে বসানোর পাশাপাশি দেশের চামড়া শিল্পটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ আলী বলেন, চাপের কারণে আমরা চামড়া কিনছি। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই চামড়া কিনছি। কারণ বিভিন্ন এলাকার ফরিয়া ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের চামড়া সরবরাহ করে আসছে। তারাও এই আনন্দের দিনে গ্রামে গ্রামে গিয়ে চামড়া কিনে আমাদের কাছে সরবরাহ করে। তারাও তো কিছু আশা করে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই চামড়া কিনছি। তবে সরকার ও ট্যানারি মালিকরা যদি আমাদের দিকে সুদৃষ্টি দিতো তাহলে চামড়া শিল্পটি আবার তার ঐতিহ্যটি ফিরে পেত।