ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের জগদল গ্রামে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি। রাজবাড়িটির নির্মাণকাল উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ। বর্তমানে এটি প্রায় ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে।জমিদারবাড়ির স্মৃতি রক্ষা করে ইতিহাসের ঐতিহ্য হিসেবে টিকিয়ে রাখার দীর্ঘদিনের দাবি এলাকাবাসীর। রাজবাড়িটি বর্তমানে জঙ্গলে পরিণত হয়ে যেন ভুতুড়ে বাড়ি হিসেবে পরিণত হতে চলেছে।শ্রী বীরেন্দ্রনাথ কুমার জগদলের রাজকুমার ছিলেন। তার সঙ্গে বাকীপুরের জমিদার রায় পূর্ণেন্দু নারায়ণ সিংহের ছেলে শ্রী নলিনি রঞ্জনের ছোট মেয়ে শ্রীমতি আশালতা দেবীর বিয়ে হয়। শ্রী বীরেন্দ্র কুমার সুশিক্ষিত ছিলেন। বই এর প্রতি ছিল তার প্রবল অনুরাগ। এ কারণে তিনি গড়ে তুলেছিলেন একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। তৎকালীন সুরেন্দ্রনাথ কলেজে (বর্তমান দিনাজপুর সরকারি কলেজ) ১৯৪৮ সালে তার পাঠাগারের বইগুলো দান করা হয়, যার মূল্যমান ধরা হয় ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা।রাজা বীরেন্দ্র কুমার ছিলেন এখানকার জমিদার। এই জমিদারবাড়িতে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ কাটিয়েছিলেন তার ছেলেবেলার কিছু সময়, যার স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে তৈরি করা হয়েছিল হুমায়ূন মঞ্চ, সেটি এখন আর নেই।জগদল গ্রামে রয়েছে তীরনই ও নাগর নদীর মিলনস্থল যাকে মোহনা বলা হয়, যা বাংলাদেশের খুব কম জায়গায় রয়েছে। এছাড়া রয়েছে জমিদার বাড়ির পাশে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ক্যাম্প এবং প্রাচীনতম কালীমন্দির।রাণীশংকৈল উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের জগদল গ্রামে জমিদারবাড়ির এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলা উপজেলাসহ দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ বাড়িটি দেখতে আসেন। যদি জমিদারবাড়িটি ঠিক মতো সংস্কার করা যায় তাহলে হয়তো এটা দর্শনার্থীদের জন্য একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যাবে। আর সংস্কার না করলে হয়তো বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
রাণীশংকৈল উপজেলার জমিদারবাড়ি এলাকার ফারুক হোসেন বলেন, জমিদারবাড়িটি জরুরি ভিক্তিতে সংস্কার করা না হলে আমাদের পরের প্রজন্ম হয়তো আর এটি দেখতে পাবে না।ঠাকুরগাঁও জেলার প্রশাসক এ কে এম কামরুজ্জামান সেলিম জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের সব ঐতিহাসিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা জেলায় ঠাকুরগাঁও ডিসি পার্কসহ বিভিন্ন পর্যটন স্থানের কাজ শুরু করেছি। এসব ঐতিহাসিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা হবে। রাণীশংকৈল উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ চায় এই জমিদারবাড়িটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকার যেন সব ধরনের সহযোগিতা করে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া না হলে কালের সাক্ষী হিসেবে থাকা জমিদারবাড়িটি লোকচক্ষুর অগোচরে বিলীন হয়ে যাবে।