স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সব ধরনের প্রস্তুতি থাকতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সব ধরনের প্রস্তুতি থাকতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সশ্রস্ত্র বাহিনীর সবরকম প্রস্তুতি রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবরকম প্রস্তুতি আমরা নেব। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়- এই পররাষ্ট্রনীতি নিয়েই আমরা চলবো এবং আমরা শান্তি চাই, যুদ্ধ চাই না। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মিডশিপম্যান ২০১৮ আলফা এবং ডিরেক্ট এন্ট্রি কর্মকর্তা (ডিইও) ২০২০ ব্রাভো ব্যাচের কোর্স সমাপনী রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমাদের সব ধরনের উদ্যোগ যেন থাকে এবং প্রশিক্ষণ থাকে, সেইভাবে আমরা আমাদের প্রতিটি বাহিনীকে আমরা গড়ে তুলছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য এই স্বাধীন দেশ সবসময় বিশ^ দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে এবং আমরা আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবরকম প্রস্তুতি নেব। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার নৌবাহিনীকে আরো শক্তিশালী করার জন্য ইতোমধ্যে ২৭টি যুদ্ধ জাহাজ সংযোজন করেছে। ২০১৭ সালে নৌবহরে ২টি অত্যধুনিক সাবমেরিন সংযোজন করে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে এভিয়েশন সিস্টেম সংযোজনসহ সরকার এই বাহিনীকে একটি পূর্ণ ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি, আরো উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য নেভাল একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সও নির্মাণ করা হয় এবং নৌবাহিনীর সদস্যদের আবাসন সমস্যা সমাধানেরও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, বলেন তিনি। ’৯৬ সালে সরকারে আসার পর খুলনা শিপইয়ার্ড নৌবাহিনীকে প্রদানের তথ্য উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা চট্টগ্রাম এবং নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড দুটিও নৌবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। লক্ষ্য হলো, আমাদের নিজস্ব শিপইয়ার্ডেই আমরা যুদ্ধ জাহাজও তৈরী করবো। যার কাজ ইতোমধ্যে কিছুকিছু শুরু ও হয়েছে। তাছাড়া, কক্সবাজার এবং পেকুয়াতে সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে এবং রামনাবাদে নৌবাহিনীর ঘাঁটি সম্প্রসারণের কাজ চলছে, বলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, এ সবের মাধ্যমে আমরা আমাদের সমুদ্র সম্পদকে যেন উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে পারি, সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীকে অনুষ্ঠান থেকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয় এবং তিনি মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজও প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় প্রশিক্ষণে কৃত্বিপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ক্যাডেটদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। মিডশিপম্যান মেহরাব হোসেন অমি সেরা চৌকষ মিডশিপম্যান হিসেবে সোর্ড অব অনার লাভ করেন। অনুষ্ঠানে মিডশিপম্যান এবং ডিরেক্ট এন্ট্রি অফিসারদের শপথ বাক্য ও পাঠ করানো হয়। প্রধানমন্ত্রী নবীন কমিশন প্রাপ্ত অফিসারদের ২০৪১ সালের উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন সারথী আখ্যায়িত করে বলেন, আজকের কমিশন প্রাপ্ত নবীন কর্মকর্তা সেসময় স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করবেন। তখন আপনারাই হবেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। কাজেই, এদেশের লক্ষ্য-২০৪১ অর্জনের ক্ষেত্রে আপনারাই মূল সৈনিক হিসেবে কাজ করবেন এবং দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, আমি আশা করি, চাকরি বা ব্যক্তি জীবনের যে কোন সংকট অতিক্রমে আমাদের এই নবীন অফিসাররা সব থেকে বেশি দক্ষ হবে। তোমরা যেন উন্নত জীবন যাপন করতে পার এবং দেশের সেবা করতে পার, সেজন্য আমার দোয়া থাকলো তোমাদের জন্য। তিনি এ সময় জাতির পিতার নির্দেশনা সকলকে মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে ১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর নৌবাহিনী দিবস উপলক্ষে জাতির পিতার দেয়া ভাষণের চুম্বক অংশ উদ্ধৃত করেন। জাতির পিতা বলেছিলেন, যে জাতি নিজেকে সম্মান করতে পারে না, আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে পারে না, সে জাতি দুনিয়ায় কোনদিন বড় হতে পারে না। সেজন্য আজকে আমরা আত্মমর্যাদা বিশিষ্ট জাতি হিসেবে, আত্মমর্যাদা নিয়ে বাস করতে চাই। আমরা অন্য কারো ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। অন্য কেউ আমাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করুক তাও আমরা সহ্য করবো না। আমরা এই নীতিতেই বিশ^াসী। তোমরা জাতির পিতার আদর্শ মেনে চলবে, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা এ সময় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বানেরও পুনরুল্লেখ করেন। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সৃষ্ট স্থবিরতার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সংক্রমণ যেন ব্যাপকভাবে আমাদের দেশে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য এবং দেশের মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে তাঁর সরকার জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উদযাপন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান ভার্চুয়ালি আয়োজন করছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য সরকার বিশেষ প্রণোদনা যেমন দিয়েছে তেমনি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সার্বিক নির্দেশনাও প্রদান করেছে, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে যেন ছড়িয়ে না পড়ে বা সবাই যেন আক্রান্ত না হন, সেদিকে লক্ষ্য রাখাটা সকলের দায়িত্ব। আমি আশা করি, সবাই এ বিষয়ে ব্যাপকভাবে সচেতন থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পরই জাতির পিতার ১৯৭৪ সালে প্রবর্তিত প্রতিরক্ষা নীতিমালাকে সময়োপযোগী করে ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন এবং সমুদ্রসীমায় যে অধিকার রয়েছে তা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যদিও জাতির পিতা ১৯৭৪ সালেই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালেই ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস এণ্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট’ নামে সমুদ্র আইন করে যান। তথাপি, জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকারসহ কোন সরকারই এই সমুদ্র আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়নি। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সমুদ্র সীমায় যে অধিকার রয়েছে, সে বিষয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে সমুদ্রসীমা অর্জন করতে সমর্থ হই। সেক্ষেত্রে উভয় প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে এই মামলা জয়কে তাঁর সরকারের অন্যতম কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ছয়দফা দাবিতেই বাংলাদেশে নৌ নৌবাহিনীর সদরদপ্তর করার দাবি ছিল উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলেই জাতির পিতার শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলার প্রচেষ্টার উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যুগোস্লাাভিয়া ও ভারত থেকে ৫ টি আধুনিক রণতরী সংগ্রহ করেন, নৌবাহিনীর বৃহত্তম প্রশিক্ষণ ঘাঁটি বানৌজা ঈসা খান কমিশনিং করেন এবং নৌবাহিনীকে ‘নেভাল এনসাইন’ প্রদান করেন। তিনি এই বিজয়ের এই মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা, ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের সকল শহীদ, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনসহ মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ এবং সম্ভ্রমহারা ২ লাখ মা-বোনকেও এ সময় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের জন্য ব্যাপকভাবে ‘মুজিববর্ষ’ পালন না করে সীমিত আকারে করলেও দেশ ও জাতির জন্য যেটা ‘সবথেকে কল্যাণকর’ তেমনই কিছু কর্মসূচি তাঁর সরকার বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের সেদ্ধান্ত মুজিবর্ষ প্রতি ঘরে আমরা বিদ্যুতের আলো জ¦ালবো। সেইলক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ৯৯ ভাগ মানুষের ঘরে আমরা বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি। ইনশাল্লাহ শতভাগ গৃহে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছাব। ‘দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না,’ সেই নীতি নিয়ে সরকার সারাদেশে গৃহহীনদের বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে এবং নৌবাহিনীর মাধ্যমে সরকারের এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের শুরু হয়, বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ’৯৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর সেন্ট মার্টিন দ্বীপে আশ্রয় গ্রহণকারি ৭০টি ভূমিহীন পরিবারকে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পেরও সেই থেকে শুরু। তারপর থেকে সারাদেশে সেনাবাহিনী, বিভিন্ন বাহিনী এবং প্রশাসনের সহায়তায় সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশে আর একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, সেটা পূরণই আমাদের লক্ষ্য। যা আমাদের দারিদ্র্য বিমোচন এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। দেশের উন্নয়নে তাঁর সরকরের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে ১০ ও ২০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ বাস্তবায়নের পদক্ষেপও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আজকে যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করেছে তাঁর ভবিষ্যতটা কেমন হবে সেই চিন্তা থেকেই এসব পরিকল্পনা করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের মধ্যে এ সময় বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি প্রশিক্ষণ যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারায় তিনি নৌবাহিনী প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি পাসিং আউটদের ক্যাডেটদের উদ্দেশে আরো বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তোমাদের দৃঢ় মনোবল ও সাহস যোগাবে। এবারে ৩১ জন মিডশিপম্যান এবং ৩২ জন ডিরেক্ট এন্ট্রি অফিসারসহ মোট ৬৩ জন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা কমিশন লাভ করেন।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন