স্থানীয়রা জানান, চার কিলোমিটারের নালুয়া-ভোলা সড়কটির পাশে রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ ফুট চওড়া হক খাল। এই খালের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয়ভাবে তৈরি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। বালু উত্তোলনের ফলে খালের গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে সড়কের বড়বাড়িয়া মোহাম্মাদ আলীর বাড়ির সামনের রাস্তায় ফাটল দেখা দেয়। এরপর সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) নাগাদ রাস্তার অর্ধেক জুড়ে প্রায় দেড়শ থেকে দু’শ ফুট খালের পাশের রাস্তা ধ্বসে গেছে। এতে ওই স্থান থেকে বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড খালটি স্কাভেটর দিয়ে খনন করেছে। সড়কের কোল ঘেষে স্কাভেটর চালানোর ফলে খাল খননেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি। এভাবে কয়েকদিন চলতে থাকলে এবং খালের পানি আরও কমলে সম্পূর্ণ রাস্তা ধ্বসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মত স্থানীয়দের। তাই যেকোন মূল্যে সড়কটিকে চলাচলের উপযোগি করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সড়ক সংলগ্ন গোলা এলাকার লিটন শেখ বলেন, আমার বাড়ির সামনের খাল থেকে ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাসুদ সরদার বালু উত্তোলন করে সাড়ে চার লাখ টাকার বালু বিক্রি করেছেন। গোলা কবর স্থান, রবিউলসহ বিভিন্ন জায়গায় এই বালু বিক্রি করেছেন চেয়ারম্যান। বালু উত্তোলন করায় রাস্তায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। রাস্তা ভেঙে গেলে আমার বাড়িও বিলীন হবে এই খালের মধ্যে।
স্থানীয় পারুল বেগম, মো. আল আমিন খান, বুলবুল শিকদারসহ কয়েক জন বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান সরদার মাসুদুর রহমান এই খালে ড্রেজার বসিয়ে বালু উঠিয়ে বিভিন্ন লোক ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেছেন। চেয়ারম্যানকে বারবার নিষেধ করা হলেও তিনি কোন তোয়াক্কা করেননি। এখন জনগুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি খালে বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
সড়কে ধ্বসের ফলে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে। ভ্যান ও অটোতে যারা চলাচল করছেন, তারাও এক ধরণের ঝুঁকি নিয়ে চলছেন। মঙ্গলবার রাতেও একটি অটো উল্টে এক শিশু ও তার মা আহত হয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে আরও বড় দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও এসময় জানান তারা।
জেলার চিতলমারী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলেনা পারভীন বলেন, রাস্তাটি ধ্বসের ফলে জনগন মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছে। যাদের বালু উত্তোলনের ফলে সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।
চিতলমারী উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবেরা কামাল স্বপ্না বলেন, আমরা সড়কটি পরিদর্শন করেছি। এখানে চলাচলে মানুষের দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়।
তবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান সরদার মাসুদুর রহমান বলেন, সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হওয়ায় আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এই ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি বালু উত্তোলনের সাঙ্গে জড়িত না এবং এ বিষয়ে কিছু জানিও না। যারা বালু উত্তোলন করেছেন তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
এছাড়া ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু কাটার জন্য এই রাস্তা ভেঙ্গেছে বলে দাবি করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য কায়েম আলী। আর বালু উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত দুটি ড্রেজার জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে চিতলমারী উপজেলাের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মারুফুল আলম বলেন, বিভিন্ন সময় স্থানীয় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন ও খাল খননের ফলে সড়কটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমি সড়কটি পরিদর্শন করেছি। ঘটনাস্থল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত স্থানীয়ভাবে তৈরি দুটি ড্রেজার মেশিন ও আনুসঙ্গিক মালামাল জব্দ করেছি। কিন্তু ওই ড্রেজার মেশিনের কোন মালিক পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, মেশিন দুটি জব্দ করার পরে কেউ ড্রেজারের মালিকানাও দাবি করেননি। সড়কটি চলাচলের উপযোগী করতে আমরা এলজিইডি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলেছি। যত দ্রুত সম্ভব সড়কটিকে চলাচলের উপযোগী করা হবে।
তিনি আরও বলেন, রাস্তা ধ্বসের বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায়ও কথা বলবো। রাস্তার ধ্বসের প্রকৃত কারণ উদঘাটন ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।