ঢাকা: রাজধানীর মহাখালীর সাততলা বস্তিতে উজ্জ্বল স্টোর নামে একটি মুদির দোকান থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
সোমবার (২৩ নভেম্বর) রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন নিয়ন্ত্রণে অংশ নেয় ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট। এদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি তদন্তে কমিটি গঠন করা হবে।মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে মহাখালীর সাততলা স্টাফ কোয়াটার মসজিদ মার্কেট বস্তির চা-দোকানদার মো. ফারুক হোসেন বলেন, সোমবার (২৩ নভেম্বর) রাত পৌনে ১২টায় দেখি আমার দোকানের ডান পাশের উজ্জ্বল স্টোরের মধ্যে থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিলো। আমি তখন দোকান বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। পরে আমিসহ চারজন মিলে ওই দোকানের আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। কিন্তু আগুন নেভাতে ব্যর্থ হই। ১০ মিনিটের মধ্যে আগুন বস্তিসহ আশপাশের দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। আমার মনে হয় বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আগে কখনো দেখেনি।
তিনি বলেন, মুদি দোকানের আগুন নেভাতে গিয়ে আমার নিজের ঘর আগুনে পুড়ে গেছে। ঘর থেকে কোনো জিনিসপত্র বের করতে পারিনি। কিন্তু আমার চায়ের দোকানে কিছু হয়নি। বস্তিতে আগুন লাগার পর আমার বউ-বাচ্চাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে রাত চারটার দিকে নিকেতন এলাকায় বউ-বাচ্চাকে খুঁজে পাই।তিনি আরও বলেন, চার দিন আগে দোকানের মালপত্র কেনার জন্য একজনের কাছ থেকে ৩২ হাজার টাকা ধার করেছিলাম। সেই টাকা রেখেছিলাম ঘরের তোষকের নিচে। সকালে পোড়া ঘরে গিয়ে দেখি সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মার্কেটের অপর এক দোকানদার মো. সোহাগ বলেন, দোকান বন্ধ করে বাসায় গিয়ে খবর পাই আমার দোকানে আগুন লেগেছে। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসি। দোকানের সাটার খোলার চেষ্টা করি কিন্তু আগুন লেগে যাওয়ায় তা খুলতে পারিনি। পাশাপাশি আমার দু’টি দোকান ছিল। আমি আর আমার ছোট ভাই মিলে দোকান করতাম। আমার দোকানে প্রায় ছয় লাখ টাকার মালামাল ছিল, সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দোকানে নগদ ৩০ হাজার টাকা ছিল তাও পুড়ে গেছে।আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে জানতে চাইলে সোহাগ বলেন, আমার দোকানের পাশের একটি মুদির দোকান থেকে প্রথমে আগুন আগে। দোকানটি গত চার দিন ধরে বন্ধ ছিল। এ অগ্নিকাণ্ডে বস্তির ১৫০টি বসতঘর ও ২৮ থেকে ৩০টি দোকান পুড়ে গেছে। পুড়ে যাওয়া দোকানের মধ্যে ছিল কোকারিজ, কসমেটিকস, চাল, চা-দোকান, মুদি, জুতা-সেন্ডেল ও মোবাইল ফোনের দোকান।সোহাগ আরও বলেন, ২০১০ সালে পটুয়াখালীর মাদারবুনিয়া গ্রাম থেকে এ এলাকায় আসি। আগে দিনমজুরের কাজ করতাম। মা-বাবা, ভাই-বোন নিয়ে এ এলাকায় বসবাস করি। এ দোকানের উপার্জনে আমাদের পরিবার চলতো। আগুনে পুড়ে সব শেষ হয়ে গেলো। এখন আমাদের কি হবে? যদি সরকারের কাছ থেকে কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাই। তাহলেই আবার নতুন করে দোকান শুরু করবো।