অপরূপ সৌন্দর্য্যে ঘেরা রাঙ্গাবালী

অপরূপ সৌন্দর্য্যে ঘেরা রাঙ্গাবালী

তাইমুন ইসলাম রায়হান, রাঙ্গাবালী থেকে ফিরে : চারপাশে নদী মাঝখানে দীপ উপজেলা রাঙ্গাবালী। এখানে রয়েছে সোনার চর, জাহাজমারা তুফানিয়াসহ বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান যা ভ্রমণ পিপাষু মানুষের জন্য খুবই তৃপ্তি দায়ক। তাই ভ্রমণ পিপাষুদের বলতে চাই হয়তো কুয়াকাটা অনেকের ভ্রমণ করার সুযোগ হয়েছে। তবে রাঙ্গাবালীর সোনার চর যারা ভ্রমণ করতে পারেননি তারা ১বার হলেও ভ্রমণের চেষ্টা করবেন সৌন্দয্যের লিলাভুমি এই দিপটিতে। যেখানে ভোরের শুভ্র বাতাসে যখন সাদা মেঘগুলো লাবণ্যতায় ফুঁঠে উঠে সত্যি তখন এক অপূর্ব সৌন্দর্য্যে ভরপুর হয়ে ওঠে রাঙ্গাবালীর সোনার চর। চোখ জোরানো মন ভোলানো দৃশ্য দিয়েই প্রকৃতি যেন সৃষ্টি করেছে সোনার চরকে। সুর্যোদয়, সুর্যাস্তের দৃশ্য ছারাও রং বেরং এর নানা প্রজাতির পাখিদের অভায়রণ্য। পাখিদের রাজত্ব বললে অত্যুক্তি হবেনা। দখিনা বাতাসে নদীর কুল কুল ধ্বনি, আবার কখনোবা বিনে বাতাসে হুমরি খেয়ে পরা ঢেউ, জেলেদের নৌকা ট্রলার ঢেউয়ের উপর নাগরদোলা চাপিয়ে আবার ঢেউয়ের ফাঁকে অদৃশ্য হওয়া। যেদিকে চোখ যায়, মনে পরে শরৎ চন্দ্রের সেই উক্তি। ‘হে ভগবান, এ চোখ দুটি যেমন তুমি দিয়েছিলে, আজ তুমিই তাদের সার্থক করলে। বঙ্গোপসাগরের উত্তর প্রান্তে সোনালী এক দ্বীপের নাম সোনার চর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর। প্রকৃতি যেন তার নিজের হাতে সৃষ্টি করেছে। দিনের শুরুতেই চোখে পরে পুব সাগরে ডিমের কুসুমের মু লাল গোলাকার পিণ্ড সাগরের বুক চিরে ধীরে ধীরে মাথা তুলে দারাচ্ছে। সারাদিন বিকিরন শেষে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে আবার লাল গোলাকার পিণ্ডে পরিণত হয়ে পানির মধ্যে যেতে যেত এক সময় টুপ করে ডুব দিয়ে মনে হয় যেন পাতাল পুরীর রাজবাড়ির অতিথি হয়ে যায়। সুর্য্যদয় আর সুর্য্যাস্তের এ দৃশ্য কার বা চোখ না জুরায়। বন বিভাগের ছায়া ঘেরা সবুজ বেষ্টনীতে নানা আকারের ছইলা, কেওরা, গাওয়া, বাইন গাছ, আরও আছে গোল পাতা, হারগুজি, তাম্বুরা কাটার ঝোপঝার। যা ডাহুক, কোড়া, ছেনি, (স্থানীয় নাম) সহ নাম না জানা পাখিদের অভায়রণ্য। গাছে গাছে রং বেরং এর পাখিরা আপন মনে সুর দিয়ে যাচ্ছে। বিকেল গরিয়ে এলেই বক, সারস, শামুকখোল মদনটাক ঝাকেঝাকে উরে এসে আশ্রয় নেয় বড় গাছের মগডালে। তাদের কোলহলে মুখরিত হয়ে ওঠে ওই চর। গভীর রাতে কুক্কা পাখির পুতপুত ডাক আর ডাহুক ডাহুকির কোয়াক কোয়াক সুর জানিয়ে দেয় রাত ১২ টা। ঘরির কাটার সাথে মিলিয়ে দেখা গেছে দু চার মিনিটের বড় বেশী ব্যবধান হয়না। দক্ষিন পুর্বে বিশাল এলাকা জুরে রয়েছে ডুবো চর। ভর জোয়ারে এ সব এলাকা পানিতে ডুব দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। বিনে বাতাসে ঢেউ এসে হুমরী খেয়ে পরে বালু চরে। এর মাঝে উরো হাঁস, কয়াল, গাংচিলরা দল বেধে ভেসে বেরায় সাতার কাটে। শত শত জেলে নৌকা ট্রলার ব্যস্ত হয়ে ওঠে জাল ফেলার তাগিদে। জাল ফেলে স্রোতের টানে চলে যায় দুর থেকে অনেক দুরে। শেষ ভাটায় বিশাল এলাকা জুরে আবার জেগে ওঠে বালু চর, রোদের আলোতে ঝিকিমিকি সোনালী রং ছরিয়ে দেয় চারিদিকে। শুরু হয় নানা প্রজাতির পাখিদের আগমন ও কলতান। গাংচিল, চকোয়া, কেচিকাটা, কন্যাসি, বক, সারসরা (স্থানীয় নাম) ভিন্ন ভিন্ন যে যার দলে বসে যেন গুজবে মেতে ওঠে, আবার কেউবা হাটু জলে খাদ্য সংগ্রহে ব্যস্ত থাকে। সোনার চরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, আকর্ষণীয় দৃশ্য ও মনোরম পরিবেশ। তাই নিত্য নতুন পর্যটকরা আসে ওই চরে। শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জেলেরা এসে সেখানে অস্থায়ী আস্তানা গেরে শুটকি সংগ্রহ করে। বালুর ধুমের উপর দোচালা বাসা তৈরী করে সাগরে বাধার জাল ফেলে সাদা চিংরি, টাইগার চিংরি, চাকা, চালি, বৈরাগি ও চেউয়া মাছ সহ বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ রোদে শুকিয়ে শুটকি সংগ্রহ করে। ফাগুন এলেই দখিনা বাতাসে সাগর উত্তাল হয়ে ওঠে। জেলেদের আর জাল ফেলা সম্ভব হয়না। তখন সব গুটিয়ে যে যার ঠিকানায় পারি জমায়।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন