কলকাতা: ঘড়িতে তখন বিকেল সাড়ে পাঁচটা। রবীন্দ্রসদন থেকে বের হলো সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মরদেহ শায়িত শববাহী গাড়ি।
গন্তব্য কেওড়াতলা মহাশ্মশান। কিংবদন্তি অভিনেতার শেষযাত্রায় পা মেলালেন অগণিত ভক্ত-অনুরাগীরা। পশ্চিমবঙ্গের দীপাবলির মৌসুমে সমস্ত আলোই যেন তাঁর কাছে ম্লান হয়ে গেল। বিদায়বেলাতেও চোখে পড়ল ঠিক সেইরকম দৃশ্য। শেষযাত্রায় মানুষের ঢল। জয়ধ্বনি দিতে দিতে এগিয়ে চলেছেন সবাই। পদযাত্রায় পা মেলালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিনেতা দেব, রুক্মিণী মৈত্র ও রাজ চক্রবর্তী। পরের সারিতে হাটলেন বামনেতা বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তীও। গান গাইলেন ইন্দ্রনীল সেন, অভিনেতাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁরই লেখা কবিতা পাঠ করলেন কৌশিক সেন। শ্রদ্ধা জানালেন বিজেপির সংসদ সদস্যরাও। সৌমিত্রর প্রয়াণে শোকবার্তা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। সেই বার্তা ও ফুল দিয়ে রবীন্দ্রসদনে শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশ উপদূতাবাসের কর্তা মোফাকখারুল ইকবাল। কিংবদন্তির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ বিশিষ্টজনেরা। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ঘোষণা মতোই গান স্যালুটে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হলো শেষকৃত্য। গান স্যালুটের সময় কান্নায় ভেঙে পড়লেন মেয়ে পৌলমী বসু। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ পঞ্চভূতে বিলীন হলেন কিংবদন্তি শিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নশ্বর দেহ। এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বেলা ২টা নাগাদ গল্ফগ্রীনের বাড়ি হয়ে টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়ার টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর মরদেহ। সেখানে বহু অভিনেতা ও কলাকুশলীরা শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন প্রিয় শিল্পীকে। এরপর রবীন্দ্রসদনে ঘণ্টা দুয়েক রাখার পর কেওড়াতলা মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয় সৌমিত্রের মরদেহ। সেখানেই মেয়ে পৌলমী বসুর তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয় শেষকৃত্য। জাতি বর্ণ নির্বিশেষে সকলে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানালেন কিংবদন্তি এই অভিনেতাকে। উত্তম-সুচিত্রার সমসাময়িক কিংবদন্তি অভিনেতাকে নিয়ে এরকম আবেগ এর আগে দেখা যায়নি। শেষ হল ইতিহাসের আরেক অধ্যায়।