স্টাফ রিপোর্টার: বর্ষা মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মাদারীপুরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন নতুন রোগী। শহর থেকে গ্রাম—সবখানেই ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে সরকারি হাসপাতালে অন্তত ২০০ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি রোগীই রাজৈর উপজেলার বাসিন্দা। গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর সীমান্তবর্তী হওয়ায় ওই উপজেলায় আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে জেলার পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
রাজৈরের চরকাকৈর গ্রামের ৭৩ বছরের সামাদ মাদবর ও তাঁর ছেলে হারুণ মাদবর কৃষিকাজ করেন। জ্বর, কাঁপুনি ও প্রচণ্ড মাথাব্যথা নিয়ে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে তাঁদের শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। বর্তমানে দুজনেই হাসপাতালে ভর্তি।
রাজৈর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আরেক রোগী শাহীন মাদবর জানান, “টেকেরহাটে দিনমজুরের কাজ করি। তিন দিন জ্বর না কমায় হাসপাতালে আসি। পরে ধরা পড়ে ডেঙ্গু। কিছু খেতে পারছি না, মাথাও প্রচণ্ড ব্যথা করছে।”
ফল বিক্রেতা নুর ইসলাম বলেন, “কাপুনিসহ জ্বর কিছুতেই কমছিল না। গ্রামের চিকিৎসক দেখিয়েও কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে জেলা হাসপাতালে আসি। ডেঙ্গু ধরা পড়ে, এখন ভর্তি আছি, কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি।”
ছয় বছরের শিশু তাইজুলকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন তার নানা আনসার উদ্দিন সরদার। তিনি জানান, “শিশুটির হঠাৎ জ্বর ওঠে। ওষুধ খাওয়ালেও কাজ হয়নি, পরে হাসপাতালে নিয়ে আসতে বাধ্য হই।
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শরীফুল আবেদীন কমল বলেন, “ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব হাসপাতালে আলাদা ইউনিট চালু করা হয়েছে। পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম মজুত রয়েছে। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা।”
তিনি আরও বলেন, “বাসা-বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখা, জমে থাকা পানি পরিষ্কার করা এবং এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার বিকল্প নেই। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শহর থেকে গ্রাম সবখানেই বদ্ধ ড্রেন ও জমে থাকা পানিতে এডিস মশার বংশবিস্তার বাড়ছে। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে মাদারীপুরে ডেঙ্গুর বিস্তার আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।