সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় ১৬ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন,মজুরি ৬০ টাকা

সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় ১৬ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন,মজুরি ৬০ টাকা

শেখ মাহবুব,সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের সলঙ্গার বাসুদেবকোল গ্রামের দিনমজুর অজিত চন্দ্র ভৌমিকের ছেলে গোপাল চন্দ্র ভৌমিক। স্ত্রী, দুই ছেলে, বৃদ্ধ বাবা-মা ও স্বামী পরিত্যক্ত ছোট বোন মিলে ছয় সদস্যের সংসার। দুই শতাংশ জমির ওপর ছোট বাড়িতে তাদের বসবাস। আশায় ছিলেন, একদিন তাঁর চাকরি সরকারি হবে, উপযুক্ত মূল্যায়ন পাবেন। সংসারের অভাব ঘোচানোর আশা করলেও তা আর হয়নি।

লাঠি হাতে সারারাত দায়িত্ব পালন করেন গোপাল চন্দ্র। এ জন্য মজুরি পান মাত্র ৬০ টাকা। আগে ছিল আরও কম, মাত্র ২০ টাকা। ২৬ বছরে মজুরি বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। তিনি সলঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নৈশপ্রহরী কাম ঝাড়ুদার পদে কর্মরত।

১৯৯৮ সালে গোপালকে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিকাল ৫ টায় দায়িত্ব পালন করতে অফিসে আসেন তিনি। সারারাত পাহারা দিয়ে সকালে তাঁকে পুরো অফিস ও এর অঙ্গন ঝাড়ু দিতে হয়।সকাল ৯টায় অফিসের কর্মীরা এলে বাড়ি ফেরেন গোপাল। ৯ বছর পর ২০০৭ সালে তাঁর দৈনিক মজুরি বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা। অথচ তাঁকে দায়িত্ব পালন করতে হয় প্রায় ১৬ ঘণ্টা। তিনি বলেন, সারারাত দায়িত্ব পালন করে মাসে পান ১৮শ টাকা। তাও এ টাকা মাসের পর মাস বাকি থাকে। স্ত্রী লক্ষ্মী রানী সংসারের কাজের ফাঁকে দরজির কাজ করে মাসে কয়েক হাজার টাকা আয় করেন।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে ছয়জনের সংসার কষ্টে চালাতে হয় তাদের। গোপাল অনেক আশা নিয়ে এ চাকরিতে আছেন। একদিন সরকারি হলে আর দুঃখ থাকবে না। তবে জীবনের ২৬ বছর পার হওয়ায় আর কোনো আশা দেখছেন না তিনি।

সলঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার রুমানা আক্তার লোপা বললেন, গোপাল চন্দ্র স্বচ্ছ, দায়িত্বশীল কর্মী। অথচ সামান্য কিছু টাকা পান তিনি। বরাদ্দ পেতে বিলম্ব হলে মাসের পর মাস বকেয়া থাকে মজুরি। তাঁর মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের কিছু করার নেই, মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। তবুও তিনি তাঁর বিষয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন।
জেলা রেজিস্ট্রার শরীফ তোরাফ হোসেন বলেন, বর্তমান বাজারে ৬০ টাকা মজুরি নগণ্য। ২৬ বছর ধরে কষ্টে চলছেন গোপাল। এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অল্প দিনের মধ্যেই একটা ব্যবস্থা হবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::