আবুল কালাম আজাদ,রাজশাহী: দেশের গণপরিবহন মাধ্যমগুলোর মধ্যে রেল সরকারের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রীয় সেবামূলক পরিবহন খাত।বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে অদ্যাবধি লাভের মুখ দেখেনি রেলওয়ে খাত।বরং ফি বছর হাজার কোটি টাকার উপর দিতে হচ্ছে গচ্ছা। ধারাবাহিক এ লোকসানের জন্য রেলের সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতিকে দায়ী করছেন খোদ রেলের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, দুর্নীতি বন্ধ করা না গেলে রেল পরিচালনার ব্যয় ও আয়ের মধ্যে ব্যবধান ক্রমশ বৃদ্ধিপেতে থাকব।
রেলের অনিয়ম-দুর্নীতির উৎস চিহিৃত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ২০১৯ সালে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জমা দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে সুনির্দিষ্ট বেশকিছু সুপারিশও প্রতিবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু এসব শুধু আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। বাস্তবে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার পাশাপাশি আমলে নেয়া হয়নি দুদকের একটি সুপারিশও।
রেল খাতের বিশাল অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি নিয়ে, গত বছর হাইকোটের বিচারপতি নজরুল ইসলাম রেল কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, রেলে এত অব্যবস্থাপনা থাকবে কেন? কেন টিকেট কালোবাজারি হবে? আপনারা কি রেলকে গ্রাস করতে চাইছেন? সবশেষ হাইকোর্ট রেলের অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে পদক্ষেপ জানতে চান কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু তাতেও বধির রেল কর্তারা।
দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে রেলে নিয়োগ, কেনাকাটা, টিকেট বিক্রি ও ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কাজে দুর্নীতিসহ রেলের ১০টি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির উৎস চিহিৃত করে তৎকালীন রেলমন্ত্রীর কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেয় দুদক। ২০১৯ সালের ওই প্রতিবেদনে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রেলের বিজনেস প্রসেস রি-ইঞ্জিনিয়ারিংসহ সুনির্দিষ্ট ১৫টি সুপারিশও সংযুক্ত করা হয়। দুদকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রেলের (পূর্বাঞ্চল) চট্টগ্রাম এবং (পশ্চিমাঞ্চল) রাজশাহীর অধীনে বিপুল পরিমাণ ভূ-সম্পত্তি হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়ে থাকে। রেলের অধীনে ওয়াগন, কোচ, লোকোমোটিভ ক্রয় ও সংগ্রহ ছাড়াও বিভিন্ন সেকশনের স্টেশন সিগনালিং ব্যবস্থা পুনর্বাসন ও আধুনিকায়নে দুর্নীতি হয়, বলে দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এছাড়া ডাবল লাইন, সিঙ্গেল লাইন, ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ কাজে ও রেলওয়ের ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কাজে দুর্নীতি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ডিএস সৈয়দপুর, নীলফামারী, বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল, পাকশী, বাংলাদেশ রেলওয়ে, লালমনিরহাট, পাহাড়তলী ও চট্টগ্রাম কর্তৃক বিজি ও এমজি যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন নিলামে যন্ত্রাংশ বিক্রয় প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়।
রেলের অধীনে ওয়ার্কশপগুলো ও স্লিপার ফ্যাক্টরি কার্যকর না করে আমদানির মাধ্যমে বিভিন্নভাবে অনিয়ম, রেলের টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে কালোবাজারি হয়ে থাকে এবং এ কালোবাজারিতে রেলওয়ের কর্মচারীরা অনিয়ম করে থাকেন। কতিপয় দালাল রেলওয়ের কর্মচারীদের সহযোগিতায় আন্তঃনগর ট্রেনের অধিক সংখ্যক টিকিট ক্রয়ের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। এর ফলে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া যাত্রীবাহী ট্রেন ইজারা দেয়া ও আন্তঃনগর ট্রেনসহ অন্যান্য ট্রেনে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে রেলের এক শ্রেণির অসাধু কর্মচারী দুর্নীতি করছে বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময় রেলে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে বেশ কয়েকবার সরিজমিনে অভিযানও পরিচালনা করে দুদক।
বিদ্যমান সম্পদগুলো সুষ্ঠু ব্যবহার করে রেলকে সহজেই লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যেতে পারে।
১) রেলের বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগে বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের (আইবিএ, বুয়েট, বিএমসি) সহায়তা নেয়া, সব ধরনের কেনাকাটা দরপত্রের মাধ্যমে করতে অভিজ্ঞ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব দেয়া।
২) বেদখল হওয়া সম্পত্তি উদ্ধারে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন, দখলী জমি উদ্ধারে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সাঁড়াশি অভিযান চালানো।
৩) রেলওয়ের ওয়ার্কশপ সচল করা, কোচ আমদানি নিরুৎসাহিত করে নিজস্ব কারখানায় কোচ নির্মাণ করার সক্ষমতা সৃষ্টি করা, একচেটিয়া ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন (পিপিএ) অনুসরণ করা,
৩) বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন লাইন নির্মাণ ও সংস্কার কাজ তদারকি করা, অডিট কার্যক্রম জোরদার করা, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির মাধ্যমে রেলের পুরনো মালামাল বিক্রির ব্যবস্থা নেয়া।
রেলের সার্বিক কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় (অটোমেশন) পদ্ধতির আওতায় এনে, টিকেট কালোবাজারি রোধে ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার, রেল কর্মীদের পদোন্নতি ও বদলির ক্ষেত্রে সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠাকে মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা, যাত্রীসেবা বৃদ্ধি এবং নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেন চলাচল নিশ্চিত করারও সুপারিশ করা হয়েছে। সবশেষ রেলে সরবরাহ করা খাবারের মান নিশ্চিত করতে তদারকির ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি যৌক্তিক দামে খাবার বিক্রি করা।
রেলের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দুর্নীতি হচ্ছে স্বীকার করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, দুর্নীতি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। দুর্নীতি না থামানো পর্যন্ত এর কোনো উন্নতি হবে না।
আল ইমরান,বগুড়া:নিহতরা হলেন, উপজেলার জিয়ানগর ইউনিয়নের লক্ষীমণ্ডপ পূর্বপাড়া গ্রামের আফতাব হোসেন (৭০) ও তার প্রবাসী ছেলে শাহজাহান আলীর স্ত্রী রিভা আক্তার (৩০)। বুধবার (৯ জুলাই) সকালে নিজ বাড়ি থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করেপুলিশ। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাতের কোনো এক সময়ে তাদেরকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায় রাতে চারজন লোক আফতাব হোসেনের বাড়িতে ঢুকে তার ও রিভার হাতপা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করেন প্রাথমিকভাবে বুঝা যাচ্ছে ধর্ষনের শিকার হয়েছে নিহত রিভা।