চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:::::: ক্যাম্পাসে গত এক যুগ ধরে বলতে গেলে ছাত্রলীগের একছত্র রাজত্ব ছিল। হলগুলোও ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। এই সময়ে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে কোনো কর্মসূচি করতে পারেনি। ভিন্ন ছাত্রসংগঠনের কেউ ক্যাম্পাসে গেলেই পড়তে হয়েছে ছাত্রলীগের তোপের মুখে। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। ওইদিন দুপুরের পরেই হলে থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যান। এরপর তাদের নানা ‘কুকীর্তি’ সামনে আসছে।
এরই মধ্যে ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির সভাপতি রেজাউল হক রুবেল, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুসহ ১৩ নেতাকর্মীর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন খাবারের দোকান থেকে ‘ফাও’ খাওয়ার একটা তালিকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রনেতাদের এই ধরনের অসামাজিক ও অপ্রীতিকর কার্যক্রম এবং পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্ররাজনীতি,রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা কথা বলি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল সভাপতি মো. আলাউদ্দীন মহসিনের সাথে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মো. আলাউদ্দীন মহসিন বলেছেন, “তিনি কিংবা তার কোনো নেতাকর্মী কখনো ফাও খাবেন না, সেটিকে প্রশ্রয়ও দেবেন না।”
আলাউদ্দীন মহসিন আরো বলেন, “গত ১৭ বছর আমরা একবেলা খেয়েছি তো আরেকবেলা খাইনি। এই সময়ে আমাদের অনেক কঠিন সময় গিয়েছে, নানা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। ওই জায়গা থেকে আসলে আমরা এখন নতুন স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি। নতুন বাংলাদেশে আমাদের কোনো নেতাকর্মী ফাও খাওয়ার মতো অপ্রীতিকর ও অসাংগঠনিক কোনো কাজে যুক্ত হবেন না, কথা দিলাম। তাই আমি আশা করব ফাও খেয়ে ছাত্রলীগের মতো আমাদের কেউ শিরোনাম হবেন না।”
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক দলীয় ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি আসছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। তবে এমন দাবি উঠায় কিছুটা আহত বোধ করছেন আলাউদ্দীন মহসিন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি চলবে কি চলবে না ব্যাপারে প্রশ্ন করলে আলাউদ্দিন মহসিন বলেন, “গত ১৭ বছরের মধ্যে আমাদের অনেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়ে পরীক্ষা দিতে পারেনি। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের অনেককে নির্যাতন করার পর উল্টো পুলিশের হাতেই তুলে দিয়েছিল। সেক্ষেত্রে ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিটি আমাদের কাছে একটু কষ্টকরই লাগবে, স্বাভাবিক। কেননা আমরাও তো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গত ১৭ বছর যুদ্ধ করেছি। আমাদের পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, পরিবার-সবকিছু বিসর্জন দিয়েছি। সর্বশেষ ছাত্র আন্দোলনেও আমরা শুরু থেকেই মাঠে ছিলাম। আমাদের সংগঠনের অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন। সেই জায়গায় আজ যখন ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনকে বাইরে রাখার আলোচনা হয় তখন আমরা একটু ব্যথিত হই। ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর কাজ মূলত শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কথা বলা। ছাত্রলীগ সেই জায়গা থেকে বিচ্যুত হয়ে উল্টো সবসময় ছাত্রদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। ছাত্রলীগের সেই অপরাধের দায় আমরা কেন নেব?”
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বলতে গেলে ক্যাম্পাসে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো কোনো কর্মসূচিই বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ছাত্রদলসহ অন্যান্য সংগঠনগুলোর কর্মসূচি পালন করতে হয়েছে গোপনে। অনেক সময় পুলিশ-ছাত্রলীগের হামলার ভয়ে ভোরেই মিছিল করে দ্রুত সরে যেতে হয়েছে। তবে ছাত্রদল সভাপতি অতীতে নিজেরা যে পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন তেমন কিছু যেন তাদের দ্বারা অন্য কোনো সংগঠন না পায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে চান।
আলাউদ্দীন মহসিন বলেন, “আমরা সহাবস্থানে বিশ্বাস করি। আমার স্বপ্ন ক্যাম্পাস সবার জন্য নিরাপদ হোক, হল-অনুষদে যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব পাক। রাজনৈতিক ব্যানারে প্রভাব খাটিয়ে কেউ যেন সুবিধা নিতে না পারে সেই বিষয়ে আমাদের সবার সতর্ক থাকতে হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতারের নাম ছড়িয়ে পড়েছে, যদিওবা এখনো সেই বিষয়ে প্রজ্ঞাপন হয়নি। এ ব্যাপারে তাদের পক্ষ থেকে বলা হয় যে ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার নিয়োগ পেলে তাকে স্বাগত জানাবে ছাত্রদল।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন বিহীন,বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম এখন স্থবির।নতুন প্রসাশন কেমন চান শিক্ষার্থীরা তা জানতে চাওয়া হলে আলাউদ্দীন মহসিন বলেন, “গত ১৭ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের কাছ থেকে আমরা কখনো অভিভাবকসূলভ আচরণ পাইনি। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়ে বারবার যোগাযোগ করেও তাদের সহযোগিতা পেতে ব্যর্থ হয়েছি। সেই জায়গায় নতুন বাংলাদেশে আমরা আশা করি, বিশ্বাস করি যিনিই বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেবেন অতীতের সবকিছু মুছে ফেলে সুন্দর ও নিরাপদ ক্যাম্পাস উপহার দেবেন।”
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ক্যাম্পাসে ছাত্রদল-বিএনপির পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন দোকানসহ নানা কিছু দখল-চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। তবে আলাউদ্দীন মহসিন এমন কিছু হলে ছাত্রদল ছাড় দেবে না জানিয়ে বলেছেন, “ছাত্রদল বা বিএনপির নাম ব্যবহার করে ক্যাম্পাসে কেউ অন্যায় কোনো কিছু করলে সে যেই হোক ছাড় পাবে না। এমন কিছু হলে প্রমাণ নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা জড়িতদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।”