আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী) :–
হঠাৎ করেই রাজশাহী অঞ্চলে তাপমাত্রা কমে গেছে। ১ ডিসেম্বর থেকে দিনের তাপমাত্রা হুহু করে কমতে থাকে। বর্তমান এই তাপমাত্রা প্রায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি চলে এসেছে। একই সাথে আগামী শুক্রবারের পর থেকে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হবে এমনটাও আশঙ্কা করছে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস। আর ঢাকা আবহাওয়া অফিস বলছে ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলায় শৈত্যপ্রবাহের আঘাত লেগেছে। যার মধ্যে রয়েছে উত্তরাঞ্চলের জেলা সমূহ। সঙ্গে ঘন কুয়াশারও দাপট।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জেষ্ঠ্যপর্যাবেক্ষক এএসএম খাউসুজ্জামান জানান, গত দুদিন থেকে উত্তরাঞ্চলের তাপমাত্রার অনেক হেরফের হয়েছে। এরই মধ্যে নওগাঁ জেলার বদলগাছিতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। একই সাথে পাল্লা দিয়ে কমছে রাজশাহীর তাপমাত্রাও।
তিনি বলেন, ১৩ ডিসেম্বর বুধবার রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিসক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এরআগের দিন মঙ্গলবার দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্র ছিল ১৩দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক দিনের ব্যাবধানে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হেরফের হয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম দফায় আগমী শুক্রবার থেকে উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে। সাথে থাকবে ঘনকুয়াশাও। কারণ দিনের তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত কমছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে. ১৪-১৫ ডিসেম্বর থেকে দেশের কয়েকটি জেলায় শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে। সেই সঙ্গে গত কয়েকদিনের তুলনায় সারা দেশে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে। এছাড়া, আগামী কয়েকদিন কুয়াশা থাকবে। আজ মধ্যরাত থেকে আগামী ১৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টা বা ১১টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশা থাকবে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে এবং পশ্চিমাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা আছে। রাজশাহী, রংপুর বিভাগ ও খুলনা বিভাগের কয়েকটি জেলা, সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গল এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, হাতিয়া ও রাঙ্গামাটি— এইসব অঞ্চলের তাপমাত্রা কমে যেতে পারে।
তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় হঠাৎ করেই রাজশাহীতে ঝেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। দিনের বেলায় তাপমাত্র একটু বেশি থাকলেও রাতে কমে আসছে। এতে দিনের চেয়ে রাতে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভুত হচ্ছে। গত নভেম্বর মাসে কোনো শীতের দেখা না মিললেও ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে রাজশাহীতে শীত অনুভুত হতে শুরু করে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শীত তেমন অনুভুত হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শীত অনুভুত হচ্ছে বেশি।
শীত বাড়ায় দরিদ্র ও শ্রমজীবি মানুষ পড়েছেন সবচেয় বেশি বিপাকে। হঠাৎ করে শীত ঝেঁকে বসায় শ্রেণি পেশার মানুষ হচ্ছেন নাজেহাল। শহর কিনবা গ্রাম, শীত বাড়ায় খেটে খাওয়া মানুষ ঠিকমত কাজে বের হতে পারছেন না। রাত সাড়ে ১০ টার পর রাজশাহী নগরীর রাস্তা-ঘাট হয়ে যাচ্ছে ফাঁকা। ব্যস্ততম রাজশাহী নগরীতে রাত ১২ বাজলেও যানরবাহন দেখা যেতো। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে রাত ১০ টা বাজলেই রাস্তা-ঘাটে যানবাহনের দেখা মিলছে না।
এদিকে হঠাৎ করেই শীত বাড়ায় শীতজনিত রোগ বালাই বেড়েছে। শিশু, বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখা গেছে- শিশু ও মেডিসিন বিভাগে শীতজনিত রোগি ভর্তির চাপ বেশি। এসব ওয়ার্ডগুলোতেও রোগি ভর্তির চাপ অনেক। মূলত শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগিদের রামেক হাসপাতালের এসব ওয়ার্ডে বেশি দেখা যাচ্ছে।
অপরদিকে, শীত পড়লেও এখনো দেখা মিলছে না শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের। এতে ছিন্নমূল মানুষ অনেক কষ্টে দিন পার করছেন। সরকারী বা বেসরকারী অথবা ব্যক্তি উদ্যোগেও এখনো রাজশাহীতে শীত বস্ত্র বিতরণ শুরু হয়নি।
শীত বাড়ায় বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রির ধুম। অভিযাত মার্কেট থেকে শুরু করে রাস্তার ফুটপাত, সবখানেই চলছে শীতের গরম কাপড় বিক্রির ধুম। শীত বাড়ায় লোকজন যে যার সমর্থ অনুযায়ী পোষাক কিনছেন। তবে ক্রেতারা বলছেন, এবার শীতের পোষাকের দাম একটু বেশি। আর বিক্রেতারা বলছেন, তাদের বেশি দামেই এবার শীতের পোষাক কিনতে হয়েছে। যার কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।