মোঃআমান উল্লাহ(কক্সবাজার): কক্সবাজার পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনেই আগামী ৬ মাসের কর্ম পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন নবনির্বাচিত মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী। তিনি এই কর্ম পরিকল্পনায় পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, অবৈধ দখলমুক্ত এবং অবৈধ টমটম নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়েছেন। একই সাথে তিনি ঘোষণা করেছেন, যারা পৌরসভার নালা নর্দমা দখলমুক্ত করতে সহযোগিতা করবে তাদের পৌরকর ৩০ শতাংশ মওকুফ করা হবে।তিনি গত রোববার (২০ আগস্ট) দুপুরে পৌর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তাঁর আগামী ৬ মাসের কর্ম পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
তাঁর কম পরিকল্পনায় ২২ দফা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আশা করছেন, আগামী ৬ মাসে এইসব কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবেন।মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী জানান, কক্সবাজার পৌরসভায় কোন রোহিঙ্গা এবং ১৮ বছরের কম বয়সী কেউ টমটম চালাতে পারবেন না। একই সাথে শহরের বাইরে থেকে আসা কোন টমটমও শহরে চলাচল করতে পারবে না। তবে শহরের বাইরের কোন চালক যদি পৌরসভায় টমটম চালাতে চায় তাহলে নিজের মা-বাবা, ভাই-বোনের এনআইডি জমা দিয়ে একজন স্থানীয় জিম্মাদারের মাধ্যমে পৌরসভা থেকে বিনামূল্যে চালকের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে টমটম চালাতে পারবেন।তিনি জানান, আগামী ২০ দিনের মধ্যেই টেন্ডারের মাধ্যমে কক্সবাজার শহরের গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি সড়কের টেকসই সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে মাহবুবুর রহমান চৌধুরী জানান,আমি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। আমি এই রাজনৈতিক দলের নীতি-আদর্শের প্রতি দূঢভাবে অবিচল। তবে আমি কক্সবাজার পৌরসভার সকল কার্যক্রম দল মতের উর্ধ্বে ওঠে সততা, নিষ্টা ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনায় দূঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।তিনি জানান,কক্সবাজার পৌরসভা হবে সকল দল মতের মানুষের। এখানে সবাই সমান সুযোগ সুবিধা পাবেন।মাহাবুবুর রহমান জানান,আমাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি মেয়র নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পেছনে কক্সবাজারের সাংবাদিক বন্ধুদের সমর্থন সহযোগিতা ছিল বলেও মত প্রকাশ করে তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান।তাঁর মতে, আমার মতো একজন ক্ষুদ্র রাজনৈতিক কর্মীর কক্সবাজার পৌরসভার মতো দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পৌরসভার মেয়র হিসাবে নির্বাচিত হয়ে আসা কোন ভাবেই সম্ভব হতো না, যদি জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন না দিতেন।তিনি সকল পৌরবাসীর কাছেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পৌরসভায় যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, জনগণের সেবা নিশ্চিত করার জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের অবদানের বিষয়টিও স্বশ্রদ্ধ চিত্তে স্বরণ করেন নতুন পৌর মেয়র।পৌরসভার মেয়র হিসাবে প্রথম কার্যদিবসে মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পৌরকর মওকুফের ফাইলে সই করে দিন শুরু করেন।এই সংবাদ সম্মেলনে নবনির্বাচিত চারজন কাউন্সিলর ছাড়া সবাই উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে আছেন শাহেনা আক্তার পাখি, ইয়াছমিন আক্তার ও জাহেদা আক্তার, আক্তার কামাল, মিজানুর রহমান, আমিনুল ইসলাম মুকুল, এহেছান উল্লাহ, শাহাব উদ্দিন সিকদার, ওসমান সরওয়ার টিপু, হেলাল উদ্দিন কবির ও সালাহউদ্দিন সেতু। যারা অনুপস্থিত ছিলেন তারা হলেন নাছিমা আক্তার বকুল, রাজবিহারী দাশ, এমএ মনজুর ও নুর আহমদ মাঝু।সংবাদ সম্মেলনে মাহবুবুর রহমান চৌধুরী আগামী ৬ মাসের যে ২২ দফা কর্ম পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন তা নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হল। এই কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শহরের নাগরিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত মতামত ও পরামর্শকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করা হবে বলেও তিনি ঘোষণা দিয়েছে।
১. রাত্রিকালীন ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ ও পরিস্কার করা হবে।২. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে তুলতে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহে প্রত্যেক বাসা, আবাসিক ভবন, আবাসিক হোটেল ও রেঁস্তোরায় তিন সাইজের পলিব্যাগ ব্যবহার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।৩. ময়লা-আবর্জনা-বর্জ্য খোলা জায়গা, ড্রেন ও যত্রতত্র ফেলা থেকে পৌরবাসীকে বিরত রাখার জন্য নিরুৎসাহিত করাসহ বিশেষ জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করা হবে।৪. পৌরসভায় বর্তমানে কর্মরত সেবকদের (পরিচ্ছন্নতা কর্মী) চাকরীতে বহাল রেখে কনজারভেন্সী শাখাকে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেসরকারী সংস্থাকে শহর সার্বক্ষনিক পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব রাখতে দায়িত্ব দেয়া হবে।৫. কক্সবাজার পৌর এলাকায় বিদ্যমান সকল বড় ও মাঝারী আকারের ছরা, খাল ও নর্দমাগুলো পরিস্কার করে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা হবে।৬. অবৈধভাবে দখল করা নালা, ফুটপাত ও পৌরসভার মালিকানাধীন খতিয়ানভুক্ত জায়গা-জমি দখলমুক্ত করে পৌরসভার আওতায় নিয়ে আসা হবে।৭. দ্রুত সময়ের মধ্যে কস্তুরা ঘাট, জেটি ঘাট খনন করে চলাচল উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।৮. বাহারছড়ার মুরুং ছরা হতে হিন্দু সম্প্রদায়ের শশ্মান পর্যন্ত পৌরসভার ছরা-ড্রেনের উপর যে সমস্ত অবৈধ স্থাপনা রয়েছে তা উচ্ছেদ করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া হবে।৯. ঘোনার পাড়া হয়ে বাজারঘাটা থেকে পেশকারপাড়া স্লুইচ গেইট পর্যন্ত এলাকার সকল দখলদারদের উচ্ছেদ করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া হবে।১০. টেকপাড়া হয়ে আমেনা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্লুইস গেইট পর্যন্ত এলাকা দখলমুক্ত করা হবে।১১. পাহাড়তলী-রুমালিয়ারছড়া-মাঝেরঘাট পর্যন্ত নালা-নর্দমা থেকে অবৈধ দখলাদার উচ্ছেদ করে তা খনন করা হবে।১২. শহরের বিভিন্ন অলি-গলির ফুটপাত দখলমুক্ত করা হবে। প্রকৃত হকারদের স্থায়ী পূর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।১৩. অবৈধ সব টমটমকে কক্সবাজার পৌর এলাকায় কোনভাবেই প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। পাশাপাশি সব অবৈধ টমটম যাতে পৌর শহরে চলাচল করতে না পারে সেই বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ১৮ বছর বয়সের নিচে কাউকে টমটম চালাতে দেয়া হবে না। এই লক্ষ্যে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে। রোহিঙ্গা চালকরাও টমটম চালাতে পারবে না।১৪. অন্য উপজেলার কোন চালক কক্সবাজার পৌরসভায় টমটম চালাতে চাইলে তাকে মা-বাবা, ভাই-বোনের এনআইডি প্রদান করতে হবে ও কক্সবাজার পৌরসভার স্থায়ী একজন বাসিন্দা জিম্মাদার হতে হবে এবং পৌরসভা থেকে বিনামূল্যে টমটম চালকের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে হবে।১৫. পৌরসভার ড্রেনগুলো বছরে চারবার টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খনন করা হবে।১৬. পৌরসভার মালিকানাধীন খতিয়ানভুক্ত অবৈধ দখলকৃত জায়গা-জমিগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে দখলমুক্ত করে পৌরসভায় আয়বর্ধনমূলক বাণিজ্যিক ভবন, মার্কেট, শপিংমল, এপার্টমেন্ট তৈরী করা করা হবে।১৭. দ্রুত সময়ের মধ্যে অতিগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বিশেষ করে কক্সবাজার সদর মডেল থানা রোড, বঙ্গবন্ধু সড়ক, বড়বাজার সড়ক, পেশকারপাড়া সড়ক, টেকপাড়া মসজিদ সড়কসহ ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক টেকসই সংস্কার করা হবে।১৮. যারা পৌরসভার অবৈধ নালা-নর্দমা, ছরা ইত্যাদি দখল করে আছে তা দখলমুক্ত করতে যারা সহযোগিতা প্রদান করবে তাদের বিশেষ সম্মাননা প্রদানপূর্বক শতকরা ২০ থেকে ৩০ ভাগ পৌর কর মওকুফ করা হবে।১৯. কক্সবাজার পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অবৈধভাবে দখল করে যত্রতত্র বাস, সিএনজিচালিত অটোরিক্সাসহ অন্যান্য যানবাহনের অস্থায়ী স্ট্যান্ড (পার্কিং) করা হয়েছে, তা জনস্বার্থে উচ্ছেদ করা হবে।২০. কক্সবাজার পৌরসভায় সকল প্রকার নাগরিক সেবা দ্রুত প্রাপ্তি ও সহজলভ্য করে হয়রানি ও ভোগান্তি বন্ধ করতে পৌরসভা কার্যালয়ের সকল শাখাকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হবে।২১. বর্তমান সরকারের দূর্নীতির ব্যাপারে গৃহীত জিরো টলারেন্স নীতির আলোকে কক্সবাজার পৌরসভার সকল কাজে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। পৌর নাগরিকদের অভিযোগ গ্রহণ করে তা সমাধানের জন্য নিয়মিত গণশুনানীর আয়োজন করা হবে। কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে তা ত্বরিৎ তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।২২. পৌর নাগরিকদের হয়রানি ও ভোগান্তি দূর করতে কাংখিত সকল নাগরিক সেবা ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রদান করা হবে।।