বিকাশ ঘোষ, বীরগঞ্জ(দিনাজপুর)প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বীরগঞ্জে প্রয়োজনীয় মাটির অভাবে মৃৎশিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। এতে বেকার হতে বসেছে উপজেলার মৃৎশিল্পরা। সেইসঙ্গে অনেকে বাধ্য হয়ে পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন অনেকেই। একেকটি শিল্পের বিস্তারের পেছনে রয়েছে- দেশ বা জাতির অবদান। আমাদের দেশের অন্যতম শিল্প হচ্ছে- মৃৎশিল্প। আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মৃৎশিল্পের সম্পর্ক অনেক গভীর। ‘মাটি দিয়ে তৈরি শিল্পীর হাতের সুন্দর ছোঁয়াকেই মৃত্তিকা শিল্প বলে‘। আর কোন সুন্দর ও সৃষ্টিশীল বস্তুকে বোঝানো হয়েছে। এজন্য মাটি দিয়ে তৈরি সব শিল্পকর্মকেই মৃৎশিল্প বলা যায়। প্রাচীনকাল থেকে কুমার দের হাতে গড়ে ওঠা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। আজকাল কুমারপাড়ার মেয়েদের ব্যস্ততা অনেক কমে গেছে। বছরের ঐতিহ্য বহনকারী মাটির তৈরি সামগ্রীর চাহিদা কমতে থাকায়, প্রাচীনকাল থেকে বংশানুক্রমে গড়ে ওঠা গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।একসময়ে মেলা মানেই ছিল মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্রের বিচিত্র সমাহার। শিশুদের খেলার রংবেরঙের মাটির পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল, পালকি, পাখি, টমটম গাড়ি, ব্যাংকসহ আরও কতো কি পাওয়া যেতে মেলায়। তবে নির্মম বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো কিছু কুমার পরিবার ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার এই ঐতিহ্য। এই ধরনের কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কুমার বলা হয়। অতীতে গ্রামের সুনিপুণ কারিগরের হাতে তৈরি মাটির জিনিসের কদর ছিল অনেক বেশি। গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা হতো মাটির জিনিসপত্র। রান্নার হাঁড়ি-পাতিল, কলসি, খাবারের সানকি, মটকি, সরা ইত্যাদি। পরিবেশবান্ধব এ শিল্প শোভা পেত গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে আজ তা হারিয়ে যেতে বসেছে। এ শিল্পের প্রধান উপকরণ এঁটেল মাটি, জ্বালানি কাঠ, শুকনো ঘাস, খড় ও বালি। একসময়ে মেলা মানেই ছিল মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্রের বিচিত্র সমাহার। শিশুদের খেলার রংবেরঙের মাটির পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল, পালকি, পাখি, টমটম গাড়ি, ব্যাংকসহ আরও কতো কি পাওয়া যেতে মেলায়। পরিবেশবান্ধব এ শিল্প শোভা পেত গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে আজ তা হারিয়ে যেতে বসেছে। এ শিল্পের প্রধান উপকরণ এঁটেল মাটি, জ্বালানি কাঠ, শুকনো ঘাস, খড় ও বালি। কুমাররা তাদের স্মৃতিশক্তি দিয়ে নান্দনিক সৌন্দর্যের মাধ্যমে মাটির প্লেট, গ্লাস, সানকি, জগ, মগ, চায়ের কাপ, বোল, হাঁড়ি, বাটি, ঘটি, কলস, প্রদীপসহ অনেক কিছু তৈরি করে থাকে। শুধু তাই নয় শৈল্পিক দক্ষতা ও কারুকাজ যোগ হয়েছে মৃৎপাত্র, নকশা করা হাঁড়ি-পাতিল, চাড়ি, কলসি, বদনা, খানদা, ফুলের টব, ফুলদানি, জীবজন্তু, পাখির অবয়ব, সাজসজ্জা, অলঙ্কারসহ বাংলার চিরাচরিত সব নিদর্শন এখন মৃৎপাত্রে ফুটে উঠছে। কালের বিবর্তনে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সুজালপুর কমোরপুর,সাতোর ইউনিয়নের প্রাণনগর,মোহনপুর ইউনিয়নের বড়হাট পালপাড়াসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আধুনিকতার শিল্পায়নের যুগে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই মৃৎশিল্প। মাটির অভাব, বাজারে যথেষ্ট চাহিদা না থাকা, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজের পরিধি পরিবর্তন না করা, কাজে নতুনত্বের অভাব, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসঙ্গতি, কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত মাটির মূল্য বৃদ্ধি, কাঁচামাল ও উৎপাদিত সামগ্রী পরিবহনে সমস্যা নানা কারণে মুখথুবড়ে পড়েছে। মাটির তৈরি পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া, মূলধনের অভাব, কাঁচামালের দুষ্প্রাপ্যতা এবং স্বল্প আয়ের কারণে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে অনেক শিল্পী বাপ-দাদার রেখে যাওয়া এই শিল্পকে ছেড়ে ভিন্ন পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। তাই এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধা প্রদান করতে হবে। বিলুপ্তির পথে চলে যাওয়া মৃৎশিল্পকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে নিখুঁত কাজের মাধ্যমে। ভবিষ্যতে যেন এই শিল্প আর ধ্বংসের পথে ধাবিত না হয় সব প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার ব্যাপারে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। এর মধ্যেই বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার ইতিহাস খুঁজে পাবে। তাই এই শিল্পকে অনলাইনভিত্তিক করে গড়ে তুলতে হবে। উপজেলার মোহনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো: শাহিনুর রহমান চৌধুরী শাহিন জানান, মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত কুমার এবং পালদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সহজ শর্তে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ঋণ এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদানের প্রক্রিয়ায় বিভিন্নমুখী উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন। এই দেশীয় শিল্পের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সবাইকে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। এবং প্লাস্টিক ব্যবহারে ক্ষতির মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মাটির তৈজসপত্র পূর্বের মতো ব্যবহার করার কোনো বিকল্প নেই। উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বড়হাট পালপাড়ার ববিতা রাণী পাল,চিত্রা পাল এবং জিপেন চন্দ্র পাল(৫৫) বলেন, এ ব্যবসা ধরে রাখ আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। কারণ যে শ্রম, সময় ও পূজি লাগে সে তুলনায় আমরা দাম পাই না। তাই এ পেশা ছেড়ে দিতে হচ্ছে। সুজালপুর ইউনিয়নের কুমোরপাড়া গ্রামের সাগর পাল এবং বলরাম পাল (৪৫) বলেন, কোনো ব্যাংক বা এনজিও আমাদের এ পেশায় ঋণ দিচ্ছে না। ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করানো কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ছে। শতগ্রাম ইউনিয়নের সংকর পাল বলেন,মাটির তৈরি খেলনা বিক্রি করে সংসারের খরচ চালাতাম। এখন প্লাস্টিকের আসবাবপত্র পণ্য বাজারে সয়লাভ করেছে তাই এ পেশা ছেড়ে দিয়ে লাভ জনক পেশা খুঁজতে হচ্ছে। সাতোর ইউনিয়নের প্রাণনগর গ্রামের পরিতোষ পাল ও বিমল পাল বলেন, আগের মত মাটির গটি- বাটির চাহিদা না থাকায় সংসারে খুব অভাব অনটন লেগেই আছে। সকলেই বললেন, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। তবে তারা বাপ দাদার রেখে যাওয়া এ পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে চান এবং সেই সাথে বাংলার ঐতিহ্য এই মৃৎ শিল্পকে বাঁচাতে সরকারি পিষ্টপেশকতা কামনা করেন, না হলে মৃৎশিল্প বিলুপ্ত হয়ে যাবে।