নিউজ ডেস্ক : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ আজকে কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এরা বিক্রি হয়ে গেছে অফিসারদের কাছে, পুলিশের কাছে, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীর কাছে। এদের কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই।শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে ধ্বংস করে দিয়েছেন।বিপরীতে, আমাদের নেতা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান আমাদের বলীয়ান করেছেন, শক্তিশালী করেছেন, ইমানদার করেছেন। এ জন্যই আমাদের আগামী নির্বাচনে জয় হবে। তাদের পরাজয় হতে বাধ্য। অপশক্তি, দুর্নীতিবাজ কর্তৃত্ব পরায়ণ কোনো দিন জনগণের সামনে দাঁড়াতে পারে না।শনিবার (২৭ মে) বিকেল ৫টার দিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে অধীনস্থ আদালত ও সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।আমীর খসরু বলেন, আমেরিকার ভিসা নীতিমালা এসেছে। তারা বারবার বলার পরও সরকার তাদের কথা শুনছে না। সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করছে, নিপীড়ন নির্যাতন চালাচ্ছে। গুম, খুন, মিথ্যা মামলা বন্ধ হচ্ছে না। সুতরাং সাত মাস আগে স্যাংশন দিয়েছে, সুবোধ বালকের মতো ব্যবহার করার জন্য। ভালো হয়ে যাওয়ার জন্য সাত মাস আগে স্যাংশন দিয়েছে আমেরিকা। যাতে করে বাংলাদেশের মানুষ নির্দ্বিধায় নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। তারা যাতে নির্বিঘ্নে সভা সমাবেশ করতে পারে। সরকার যেন বাক স্বাধীনতা বন্ধ করতে না পারে। গণমাধ্যমের বাক স্বাধীনতা, সুশীল সমাজের বাক স্বাধীনতা, বিরোধী দলের বাক স্বাধীনতা বন্ধ করতে না পারে। যাতে করে প্রত্যেকটি ভোটার মুক্ত পরিবেশে রাস্তায় থেকে তার নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, আমেরিকার স্যাংশন প্রকাশের পর প্রধানমন্ত্রী আবোল তাবোল বকাবকি করছেন। এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আপনাদের এলাকার কিছু মন্ত্রীও আছেন। এ সমস্ত নাম আমি মুখে আনিনা। আপনারাও আনবেন না। আমাদের সময়ের দাম আছে, সময় নষ্ট করবেন না। আমাদের হাতে অনেক কাজ আছে। বাংলাদেশে নির্বাচন হবে। শেখ হাসিনার পতনের পরে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হবে। শুধু বিএনপি নয়, এ দেশের ১৮ কোটি মানুষ ওই নির্বাচনে অংশ নেবে। অংশ নিয়ে অনির্বাচিত শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাবে। এই অনির্বাচিত সরকারকে সাগরের ঢেউয়ের মতো ভাসিয়ে নিয়ে যাবে জনগণ। আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে চট্টগ্রামের এই নেতা বলেন, ওরা জানে। এ জন্য তলে তলে কাজ করছে, যেন তাদের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়। এ খেলা চলবে না। সরকারের কিছু দালাল গণমাধ্যমে আছে, রাজনীতির মাঠে কিছু দালাল আছে, পেশাজীবীদের মধ্যে কিছু দালাল আছে, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী আছে। এরা শুধু কোনো মতে বিএনপিকে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে নিয়ে যাওয়ার জন্য তালবাহানা করছে। পরিষ্কার করে বলতে চাই, শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। বিএনপিকে ছাড়াই তারা নির্বাচন করুক। আমীর খসরু আরও বলেন, আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণ আছে। তাদের সঙ্গে আছে আওয়ামী পুলিশ, আওয়ামী সরকারি কর্মকর্তা, আওয়ামী দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী, আওয়ামী দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবীদ। যে দেশের মানুষ নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, সে দেশের মানুষের সামনে কেউ দাঁড়াতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শেখ হাসিনার অনির্বাচিত সরকারকে বিদায় দেওয়ার জন্য। তিনি এসময় বলেন, আমরা কেনো জিতবো জানেন? বিএনপির নেতাকর্মীরা জ্বলে পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লুটপাট করে পেট বড় করে ফেলেছে। পেটের ওজনে তারা হাঁটতে পারছে না। আর আমরা সবাই ফিট। ফিট পর ফাইট।আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই নেতা বলেন, তাদের শান্তি সমাবেশে আছে কেউ। শান্তি সমাবেশে যতজন আওয়ামী লীগের লোক, তার থেকে পুলিশ বেশি। কি একটা অবস্থা! কি দূর অবস্থা! কি অসহায় অবস্থা! আগামী দিনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করতে হবে দাবি করে আমির খসরু বলেন, গণতান্ত্রিক অধিকার, নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। তারপর থেকে শুরু হবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া। আমি আগেও বলেছি, বিএনপি অবশ্যই নির্বাচনে যাবে। অবশ্যই আমরা জয়ী হব। যারা জিতবে না তারা নির্বাচনে ভোট চুরির প্রকল্প করছে। এসব প্রকল্প ভেঙে দিতে হবে, সমূলে ধ্বংস করে দিতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে এবং জয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে। লেভেল প্লেয়িং করার জন্য অবশ্যই খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। যত কারাবন্দি আছে সবাইকে মুক্তি দিতে হবে।অবৈধ অস্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অবৈধ অস্ত্র যাদের আছে, তারা এমনিতেই পালিয়ে যাবে। যারা অস্ত্র বহন করে তারা সব চেয়ে বড় ভিতু। আমাদের অস্ত্র হচ্ছে মনোবল। আপনারা মনোবল নিয়ে এগিয়ে যাবেন, অস্ত্রবাজ পালিয়ে যাবে। যারা এই ন্যায়-নীতির আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করবে তারাও পালিয়ে যাবে।দ্রব্যমূল্যের প্রসঙ্গ টেনে খসরু বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ আজকে দু’বেলা খেতে পারছে না। ৩০ শতাংশ লোক দু’বেলা খেতে পারছে না, ৬০ শতাংশ লোক ধারদেনা করে চলছে। অনেকে দু’বেলার মধ্যে এক বেলা মাছ খেতে পারে। অনেকে সপ্তাহে একবার মাছ খেতে পারে। তাহলে এতো পয়সা কোথায় যাচ্ছে? আওয়ামী সিন্ডিকেটের পকেটে। ব্যাংক, শেয়ার বাজার, লুটপাটের টাকা যাচ্ছে আওয়ামী সিন্ডিকেটের পকেটে। এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। তিনি বলেন, আজকে তারেক রহমানের নেতৃত্বে লক্ষ জনতা রাস্তায় নেমেছে। আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছে, আমাদের ১৭ জন নেতাকর্মীকে মেরে ফেলা হয়েছে। এসব অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের তালিকা করুন।নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিল সদস্য জয়নাল আবেদিন ফারুক, বিএনপি যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, জেলা বিএনপি নেতা মো. ফখরুল ইসলাম প্রমুখ।