বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতেও শিক্ষার্থীদের জন্য বই ছাপানোর কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘এই করোনা, নানা ঝামেলা, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ- এখন তো সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। সারা বিশ্বব্যাপী কষ্ট, তার মধ্যেও কিন্তু আমরা শিশুদের কথা ভুলিনি। তাদের বই ছাপানোর খরচাটা- অন্য দিক থেকে আমরা সাশ্রয় করছি, বই ছাপানোর দিকে আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছি। পাশাপাশি কম্পিউটার শিক্ষা অর্থাৎ প্রযুক্তি শিক্ষা। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের ছেলে-মেয়েরা কেন পিছিয়ে পড়ে থাকবে। ’
করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার সময় থেকে এ পর্যন্ত আমার ঘরে আমার স্কুল, অর্থাৎ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ, কাজেই ঘরে বসে পড়াশোনা। কেউ যাতে পড়াশোনায় ফাঁকি দিতে না পারে সেই ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। সংসদ টিভির মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়েছে। আবার বিটিভির মাধ্যমেও চালানো হয়েছে। আমি মনে করি, সংসদ টিভি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব সময় ব্যবহার করতে পারে। ’এসময় শিক্ষার জন্য আলাদা টিভি চ্যানেল চালুর পরিকল্পনার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া কেউ শিক্ষার জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পঁচাত্তরের পরে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা যে এ দেশের মানুষকে নিরক্ষরমুক্ত করবে, তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এটা জাতির জন্য দুঃখজনক। ৯৬ সালে আমরা আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করি। তখন আমরা উদ্যোগ নিই, আমরা আবার নতুন করে শিক্ষা কমিশন গঠন করি। স্বাক্ষরতার হার বাড়ানোর জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করি। বয়স্কদের শিক্ষার ব্যবস্থাও সেখানে সংযুক্ত ছিল। ’
তিনি বলেন, ‘জনগণকে যদি দারিদ্র্যমুক্ত করতে হয়, তাহলে শিক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। কাজেই সমগ্র জাতিকে আমরা শিক্ষিত করে গড়ে তুলবো- সেই পদক্ষেপ নিই। আমরা নতুন শিক্ষা কমিশন গঠন করি। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। কারণ আমাদের ৫ বছরের সময়সীমা শেষ হয়ে যায়। ২০০১-এ বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর তারা নতুন আরেকটা করে…কী কী করে জানি না। তারা দেশকে আবার অন্ধকারের দিকেই ঠেলে দেয়। এটা হলো বাস্তবতা। ’শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘২০০৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত আরেকটা অন্ধকার যুগ আমাদের জীবনে চলে আসে। ২০০৮-এর নির্বাচনে নৌকা মার্কায় মানুষ ভোট দেয়, আমরা আবার সরকার গঠন করি। তখন থেকে আমাদের আবার লক্ষ্য হয়, কীভাবে আমরা এ দেশের মানুষকে নিরক্ষরমুক্ত করবো এবং ২০১০ সাল থেকে আমরা বিনামূল্যে বই বিতরণ শুরু করি। ’এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ বছরের নতুন বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেন।এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।রোববার (১ জানুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে পাঠ্যবই উৎসব উদযাপন করবে।এবার ১ জানুয়ারি সারা দেশে ৪ কোটি ০৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৮১ জন শিক্ষার্থীদের ৩৩ কোটি ৯১ লাখ ১২ হাজার ৩০০ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। যার মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে ২ কোটি ১৯ লাখ ৮৪ হাজার ৮২৩ জন শিক্ষার্থীকে ৯ কোটি ৬৬ লাখ ০৮ হাজার ২৪৫টি বই বিতরণ করা হবে।এ নিয়ে ২০১০ সাল হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সর্বমোট বিনামূল্যে বিতরণ করা পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৩৪ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ২১১ কপি।