ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কমিউনিটিভিত্তিক সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কমিউনিটিভিত্তিক সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি
নিউজ ডেস্ক : রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুরোগী। দেশের ইতিহাসে এ যাবত ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছে চলতি বছর।দেশে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল ২০১৯ সালে। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন রোগী ও মারা যান ১৭৯ জন। এ বছর ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় কম হলেও রোগের ভয়াবহতা ও মৃত্যু বেশি। এ বছর মৃত্যুর দিক দিয়ে ইতোমধ্যে ২০১৯ সাল ছাড়িয়ে গেছে।চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫৩ হাজার ৪১৩ জন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ২৩৪ জন মারা গেছেন।গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৬০৬ জন নতুন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ২৮৯ জন ও ঢাকার বাইরে ৩১৭ জন।এদিন ঢাকা থেকে ঢাকার বাইরে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে বেশির ভাগ ডেঙ্গুরোগী ছিল ঢাকা কেন্দ্রিক। ঢাকার বাইরে এত রোগী শনাক্ত হওয়াকে অনেকটাই উদ্বেগজনক বলছেন বিশেষজ্ঞরা।স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, বিচ্ছিন্নভাবে মশা নিধনে যৎসামান্য কাজে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সমন্বয়ে কমিউনিটিভিত্তিক সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ক্রাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই ডেঙ্গুসহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।  এ বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, কিট তত্ত্ববিদদের নেতৃত্বে মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে আলাদা উদ্যোগ নেওয়া দরকার। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের কমিউনিটিকে মভিলাইজ করা দরকার। কীভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হয় সেই বিষয়ে আমরা জানি। ডেঙ্গুরোগীর চিকিৎসাও আমরা জানি। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে আসবে, চিকিৎসা গ্রহণ করে সে ভালো হবে কিংবা মারা যাবে এভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সব সময় পাবলিক হেলথ অ্যাপ্রোচ অর্থাৎ কমিউনিটি ও জনস্বাস্থ্যভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেসব দেশ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তারা সফল হয়েছে।  তিনি আরও বলেন, আমরা এখনও সেই পুরনো পদ্ধতিতেই আছি, রোগী হাসপাতালে এলে চিকিৎসা দেব। কিন্তু আমাদের কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে। একইসঙ্গে কমিউনিটি পর্যায়ে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে যদি পরীক্ষা করা যায়, জ্বর হলে সেটা ডেঙ্গু নাকি করোনা ভাইরাস। কেউ আক্রান্ত হলে তাকে সেখানেই চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারলে গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যা কমে যাবে। কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা ও কমিউনিটিভিত্তিক মশক নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বর্তমান অবস্থার উন্নতি হবে।ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশাকে নির্মূল করার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি উল্লেখ করে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু যেভাবে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে সেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত ভয়ের বিষয়। স্থানীয় সরকার, সিটি করপোরেশন, পৌরসভার এবং সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ক্লাব বা সংগঠন, ছাত্র-যুবক, রাজনৈতিক নেতাদের সমন্বয়ে সারাদেশে কয়েক দিনব্যাপী মশা নিয়ন্ত্রণে ক্রাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ করা উচিত। যে প্রোগ্রামে সারাদেশে একসঙ্গে বাসাবাড়িতে, লোকালয়ে এবং ঝোপঝাড়ে মশা মারার ওষুধ ছিটানো হবে। পাশাপাশি মশা প্রজননের স্থান ধ্বংস করতে হবে। আমরা যদি এ কাজটি করতে পারি তাহলে মশা স্থান বদল করেও রক্ষা পাবে না। ফলে মশা যেমন নিয়ন্ত্রণ হবে, তেমনি ডেঙ্গুও নিয়ন্ত্রণ হবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের ৮ মাস না পেরোতেই ভাঙন

সিন্ডিকেটের কারনে আলুর দামের উর্ধ্বগতি