সমাচার রিপোর্ট
রেমিট্যান্সের মতো রফতানি আয়েও বইছে সুবাতাস। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) পণ্য রফতানি করে ৮৫৯ কোটি ১৮ লাখ (৮ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন) ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে বাংলাদেশ। যা গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সদ্য শেষ হওয়া আগস্ট মাসে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ৪৬০ কোটি ৭০ লাখ (৪ দশমিক ৬০ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছে বাংলাদেশের। এই অঙ্ক গত বছরের আগস্টের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার বেশি ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেড়েছে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। তথ্য বলছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রেমিট্যান্স বাড়ার ধারাবাহিকতার পাশাপাশি রফতানি আয়েও জোয়ার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অর্থাৎ সংকটের মধ্যেও এই দুটি সেক্টরের মাধ্যমে বৈদেশি মুদ্রার জোগান পাচ্ছে বাংলাদেশ। যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়তে সহায়তা করছে। রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সের উল্লম্ফনে অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা। মূলত তৈরি পোশাক রফতানির ওপর ভর করেই গত অর্থবছরের মতো রফতানি আয়ে সুবাতাস বইছে। ইপিবির হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে এসেছে ৭১১ কোটি ২৬ লাখ (৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন) ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি আয় হয়েছে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ ২০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। এ ছাড়া এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক পণ্যের রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৬০ দশমিক ৩০ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী গত ২০২১-২২ অর্থবছর প্রথমবারের মতো ৫০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক পেরিয়ে ৫২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করে দেশ। এদিকে ইউরোপীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাট এর তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পোশাক পণ্য আমদানি ৪৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৯৫৮ কোটি ডলারের পোশাক। এতে বৈশ্বিক পোশাক আমদানি বাড়ে ২৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এদিকে এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক পণ্যের রফতানি ৬০ দশমিক ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটিতে ৫০১ কোটি ৯০ লাখ ৭ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে প্রায় ২০৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) একই মাসের চেয়ে প্রায় ১২.৬ শতাংশ বেশি। তবে এটি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের চেয়ে ৭ কোটি ডলার কম। গত বছরের আগস্টে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ১৮১ কোটি ডলার। এই হিসাবে গত বছরের আগস্টের তুলনায় এ বছরের আগস্টে প্রবাসীরা ২৩ কোটি ডলার বেশি পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত জুলাই মাসে ২০৯ কোটি ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আগের মাস জুনে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাস শেষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২০৩ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন বাংলাদেশি প্রবাসীরা। গত অর্থবছরের একই মাসে এসেছিল ১৮১ কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্ন নীতি সহায়তা দিয়ে আসছে। এতে আগের চেয়ে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এ কারণে অর্থবছরের প্রথম মাসের পর দ্বিতীয় মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। আগামীতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) রেমিট্যান্স এসেছে ৪১৩ কোটি ডলার। যা আগের অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের চেয়ে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের জুলাই ও আগস্টে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ৩৬৮ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে নেতিবাচক অবস্থায় চলে আসে রেমিট্যান্স, যা চলতি অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় মাসে আশার সঞ্চার করে।