বিনোদন ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রথম স্থানীয়ভাবে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের পথপ্রদর্শকের মাইলফলক হিসেবে পরিচিত রয়েছে সিনেমাটির।যতদিন বাংলাদেশের সিনেমার ইন্ডাস্ট্রি থাকবে, ততদিন ধ্রুবতারার মতো প্রজ্বলিত থাকবে ‘মুখ ও মুখোশ’র নাম।১৯৫৬ সালের আজকের এই দিনে (০৩ আগস্ট) মুক্তি পেয়েছিল ‘মুখ ও মুখোশ’। নিজের লেখা ‘ডাকাত’ নাটক অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মাণ করেন আব্দুল জব্বার খান। এতে পরিচালক নিজেই নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন। যা দেশের সিনেমাশিল্পে বিপ্লব সৃষ্টি করে। ওই সময় বাংলাদেশে (পূর্ব পাকিস্তান) কোন চলচ্চিত্র শিল্প গড়ে উঠেনি। স্থানীয় সিনেমা হলগুলোতে কলকাতা অথবা লাহোরের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হতো। পশ্চিম পাকিস্তানের চলচ্চিত্র প্রযোজক এফ. দোসানির পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্র প্রযোজনার ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্যে ক্ষুদ্ধ হয়ে জব্বার খান চলচ্চিত্রটি নির্মাণে উদ্যোগী হন। ১৯৫৩ সালে তিনি চলচ্চিত্রটি নিয়ে কাজ শুরু করেন।‘মুখ ও মুখোশ’র মহরতে গভর্নর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা ও অন্যান্য অতিথিরা ১৯৫৪ সালের ৬ই আগস্ট হোটেল শাহবাগে আবদুল জব্বার খান তার পরিচালনায় প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’র মহরত করেন। এই মহরতের উদ্বোধন করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ইস্কান্দার মির্জা। অভিনয়শিল্পীরা সবাক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই বিনা পারিশ্রমিকে এতে কাজ করেন।তখন এই দেশে কোন ফিল্ম প্রোডাকশন স্টুডিও না থাকায় সিনেমার নেগেটিভ ডেভেলপের জন্য লাহোরে পাঠানো হয়। লাহোরের শাহনূর স্টুডিওতে ‘মুখ ও মুখোশ’র পরিস্ফূটন কাজ সম্পন্ন হয়। ১৯৫৬ সালে সিনেমার কাজ শেষ হলেও সিনেমাটি নিয়ে প্রথমে ঢাকায় ফেরার অনুমতি পাননি নির্মাতা। ‘মুখ ও মুখোশ’ সিনেমার প্রচারণী পোস্টার‘মুখ ও মুখোশ’র প্রথম প্রদর্শনী হয় লাহোরে। ঢাকায় ফিরে আসার পর সিনেমাটি প্রদর্শনীর বিষয়ে কোন প্রেক্ষাগৃহের মালিকের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়াও পাননি। তবে অল্পদিন পরেই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম এবং খুলনায় একযোগে প্রদর্শিত হয় ‘মুখ ও মুখোশ’। এর প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয় ‘রূপমহল’ প্রেক্ষাগৃহে।ঐতিহাসিকভাবে বহুল আলোচিত এই সিনেমাটিতে অভিনয় করেন ইনাম আহমেদ, পূর্ণিমা সেন, জাহরাত আজরা, আলী মনসুর, সফিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। এর প্রধান তিন নারী চরিত্রের মধ্যে একজন ছিলেন পিয়ারী বেগম।সিনেমাটির গানগুলোতে সুর দিয়েছিলেন প্রখ্যাত সুরকার সমর দাস। এর একটি গানে কন্ঠ দিয়েছিলেন মাহবুবা রহমান।