২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ঢাকা সফরে আসেন। সে সময় দুই দেশের মধ্যে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে এসবের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে চীনা বার্তা
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন ঢাকায় আসছেন, তার মাত্র কয়েকদিন আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের টেলিফোনে আলাপ হয়েছে। সে সময় চীনের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘এক চীন নীতি’ মেনে চলতে হবে। এছাড়া তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে নাক না গলানোর আহ্বান জানান শি জিন পিং।
এদিকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যেসব জোট বা বলয় রয়েছে, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে চীনের। সম্প্রতি এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সতর্কও করেছে চীন। বেইজিংয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামানের সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিষয়ক মহাপরিচালক লিউ জিনসং এক বৈঠকে এ বিষয়ে সতর্ক করেন। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের জোট বা বলয় ঘিরে ঢাকাকে বেইজিংয়ের বার্তা দিতে পারেন।
রোহিঙ্গা ইস্যু
রোহিঙ্গা সংকটের পর চীনের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টা চলছে। চীনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে গত বছর জানুয়ারিতে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকও হয়েছে। রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরাতে চায় বাংলাদেশ। আর মিয়ানমারের ওপর চীনা প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব বলেও মনে করে ঢাকা। সে কারণে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে ঢাকার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে নানা সংকট তৈরি হয়েছে। সারা বিশ্বে জ্বালানি সংকটসহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। বর্তমান এই বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ঢাকা ও বেইজিং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
আটকে পড়া শিক্ষার্থী
কোভিড-১৯ শুরুর পর থেকে চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা দেশে এসে আটকে পড়েছেন। এসব শিক্ষার্থীরা এখন আর চীনে ফিরতে পারছেন না। চীনে ফিরে যাওয়ার জন্য সরকার থেকে উদ্যোগ নিতে শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়ে আসছেন। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে ঢাকার পক্ষ থেকে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের বিষয়টি উঠতে পারে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর সামনে রেখে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণলয়ের প্রতিনিধিরা ছিলেন। আসন্ন সফরে কী কী বিষয় আলোচনা, চুক্তি ও সমঝোতা সই হবে, সেসব বিষয় পর্যালোচনা করা হয়েছে।
সফর নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চীনের সঙ্গে নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে বুড়িগঙ্গা সেতু হচ্ছে, ইকনোমিক জোন হচ্ছে, এ বিষয়গুলোতো আছেই। এছাড়া গবেষণার ক্ষেত্রেও সহযোগিতা আছে। কিছু এজেন্ডা আমাদের দেওয়া হয়েছে। কিছু এগ্রিমেন্ট সইও হতে পারে। এগুলো আলোচনা পর্যায়ে আছে। তবে এই সফর নিয়ে বিস্তারিত বলার মতো কিছু সলিডিফাইড হয়নি। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের টাইম, এরাইভাল, ডিপার্চার এখনো কনফার্ম হয়নি। আজ ২ তারিখ, তবে আগামী ৪৮ ঘণ্টা বা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব কিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি বলছি না যে, সফরটি হচ্ছে না। আমি বলছি, সফরের সব কিছু নির্ধারিত হয়নি। তারিখ যদি না মেলে সফর নাও তো হতে পারে। সব কিছুই তো হতে পারে। প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, দ্বিপক্ষীয় কোনো সফরের ক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো দেশকে টেনে আনাটা ঠিক নয়।
এদিকে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন জানিয়েছেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন ঢাকা সফর দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগের অংশ। তার সফরসূচি নির্ধারণের কাজ চলছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কম্বোডিয়ায় আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের বৈঠকে যোগ দেবেন। সেখান থেকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসার আগেই ঢাকায় পৌঁছাবেন। ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় বা পরদিন ৭ আগস্ট সকালে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।