নিউজ ডেস্ক : পদ্মা সেতু উদ্বোধনের উৎসব শুধু পদ্মার পাড়ে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা দেশে করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (জুন ১৬) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে পল্লী জনপদ, রংপুর এবং বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বাপার্ড), কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের উৎসব শুধু পদ্মাপাড়ে হবে না, সারা বাংলাদেশে উৎসবটা করবেন। আমি চাচ্ছি বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলায় উৎসব হোক কারণ এটা আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জের ব্যাপার ছিল। ’পদ্মা সেতু চালুর পর সবাইকে নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। সবাইকে অনুরোধ করবো সবাই একটু ধৈর্য ধরে চলবেন। গাড়ি নিয়ে কেউ প্রতিযোগিতা করবেন না। কে আগে গেল পরে গেল এসব করবেন না। অর্থাৎ কোনো রকম দুর্ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রেখে সবাই চলাচল করবেন। ’দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়ে গেছে। যে দক্ষিণ অঞ্চল সারাজীবন অবহেলিত, আর অবহেলিত থাকবে না। যোগাযোগ ব্যবস্থা যদি একটা জায়গায় হয়, সেখানকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে এমনিতেই হয়ে যায়। আমরা দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ, পদ্মা পাড়ের মানুষ সব সময় তো অবহেলিত ছিলাম। দারিদ্র আমাদের নিত্যসঙ্গী। আর সেটা থাকবে না। ’পদ্মা সেতু নির্মাণে কারিগরি চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘বিশ্বের সব থেকে খরস্রোতা নদী আমাজন, তারপর হচ্ছে পদ্মা। আমরা এখানে সেতু করতে পারি এটা অনেকেরই ধারণা ছিল না। এটা দ্বিতল সেতু—নিচ দিয়ে ট্রেন যাবে, ওপর দিয়ে গাড়ি যাবে। এটা একটা কঠিন কাজ। পৃথিবীতে এই ধরনের কাজ বোধ হয় এটাই প্রথম। এখানে যেসব মেশিনারিজ ব্যবহার করা হয়, এটা বোধ হয় আর কোথাও হয়নি। এর যে বাধা ছিল সেটাও আপনারা জানেন। ’নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণার পর এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে দেশের মানুষ এগিয়ে এসেছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।তিনি বলেন, ‘এভাবে মানুষের যে অভূতপূর্ব সাড়া এটাই আমাকে সাহস জুগিয়েছিল। এটাই আমাকে শক্তি জুগিয়েছিল। কারণ মানুষের শক্তিতেই আমি বিশ্বাস করি। আজকে এই পদ্মা সেতু আমরা আমাদের সম্পূর্ন নিজস্ব অর্থায়নে আমরা তৈরি করতে পেরেছি। এত বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে। ’দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ দিতে সেই সময় ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এমনিতে মেনে নেব না। প্রমাণ দিতে হবে। প্রমাণ দিতে পারে নাই। তখন আমি বলেছিলাম টাকা লাগবে না। আমরা নিজের টাকায় করবো। ’শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই পদ্মা সেতু নিয়ে কত কথা,কত অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কানাডা কোর্ট মামলায় রায় দিয়েছে যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যে সমস্ত অভিযোগ এনেছে সব ভুয়া,মিথ্যা। দুর্নীতির কোনো অভিযোগ এখানে টেকে নাই। আমরা আমাদের পক্ষে রায় পেয়ে গিয়েছিলাম। কাজেই এই রকম বাধার সম্মুখীন হয়েও এই পদ্মা সেতু আমরা নির্মাণ সম্পন্ন করতে পেরেছি। এই সেতু নির্মাণের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই আর আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আমার দেশবাসীকে। সেই সময় দেশবাসীর থেকে যে অভূতপূর্ব সাড়া যদি আমি না পেতাম তাহলে এটা আমি করতে পারতাম না। ’তিনি বলেন, ‘এই সেতু করতে গিয়ে সেখানে আমাদের ওপর একটা মিথ্যা অভিযোগ,দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এসেছিল। যেটা আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। আমরা এখানে দুর্নীতি করতে বসিনি। নিজের ভাগ্য গড়তে বসিনি। দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি, দেশের উন্নয়ন করতে এসেছি। ’ গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখানে আমাদের দেশেরই একজন যে আমাদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সুযোগ পেয়েছেন। সবচেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা থেকে আমার কাছ থেকে নিয়েছে। তারই বেইমানির কারণে এই পদ্মা সেতুর টাকাটা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ একজন ব্যক্তি একটা ব্যাংকে এমডির পদ, আমাদের তো প্রায় ৫২-৫৩টি ব্যাংক আছে। প্রত্যেক ব্যাংকেই তো একজন ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আছে। কতজন পারে বিদেশে টাকা পাঠাতে অথবা কাউকে লক্ষ লক্ষ ডলার ডোনেশন দিতে বা বিদেশ ঘুরে বেড়াতে কে পারে’।